‘পুলিশ ওকে রেখে দিলে আমাদের চলবে কী করে?’ (৩০-১১) শিরোনামে প্রকাশিত খবর পড়লাম। মানুষের দারিদ্র কোন ভয়ঙ্কর পর্যায়ে পৌঁছলে এক জন মা এই রকম কথা বলতে পারেন! নিজের নাবালিকা মেয়ের উপর বলাৎকার হয়েছে, তা সত্ত্বেও মা যেন অনেকখানি নির্লিপ্ত। এই নির্লিপ্ত থাকার দু’টি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, মা জানেন, মেয়েকে ভিক্ষাবৃত্তিতে পাঠাতে না পারলে তাঁদের অভুক্ত থাকতে হবে। এই ঘটনা নিয়ে অনেক লেখালিখি হবে, প্রতিবাদ আন্দোলনও হয়তো হবে, কিন্তু তাতে তাঁদের পেট ভরবে না। তাই অন্নচিন্তা করতে গিয়েই মাকে প্রতিবাদের পথ থেকে পিছিয়ে আসতে হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, মেয়ের উপর অত্যাচারের সুবিচার পাওয়ার বিষয়ে মায়ের হয়তো পুলিশের উপর আস্থা নেই। এই সকল ক্ষেত্রে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা দায়ের করে। অত্যাচারের শিকার যাঁরা হন, সেই পক্ষ ক্ষমতাবান হলে পুলিশের তৎপরতা এক রকম, আর যদি তাঁরা দুর্বল হন তবে পুলিশের ভূমিকা সাধারণত অন্য রকম হয়ে থাকে। ধর্ষিতার মা হয়তো বুঝতে পেরেছেন, এই ঘটনায় কেবল সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই হবে না। তাই মেয়ের উপর অত্যাচারের ঘটনা নীরবে মেনে নিয়ে মা পুনরায় মেয়েকে রাস্তায় ভিক্ষে করতে বাধ্য করছেন।
‘পুলিশ ওকে রেখে দিলে আমাদের চলবে কী করে?’ প্রশ্নের মধ্যে মা উন্নাসিক সমাজের কাছে অনেক প্রশ্ন রেখেছেন। যাঁরা বলেন এ দেশের মানুষ অনাহারে মরে না, মা তাঁদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, অনাহারের করাল গ্রাস থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে মানুষকে ধর্ষণের সঙ্গেও আপস করতে হয়। যাঁরা এ দেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে গর্ব করেন, মা তাঁদেরও বুঝিয়ে দিলেন সেই তথাকথিত সুবিচারের উপর তাঁর আস্থা কতটা। মা বুঝিয়ে দিলেন, গরিবের মেয়েদের শরীরও তাঁদের নিজেদের অধিকারের সীমার মধ্যে নেই। তাই ভিখারিনি মা যখন ছেঁড়া আঁচলে চোখ মুছবেন, তখন হয়তো বিদ্বজ্জনেরা তাঁর সমালোচনা করতে গিয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলবেন! দর্শকগণও হয়তো চুলচেরা বিশ্লেষণ শুনে ধন্য ধন্য করবেন। তাঁরা কি এক বার ভেবে দেখবেন, মায়ের আপাত নির্লিপ্ত মন্তব্যের নেপথ্যে লুকিয়ে থাকা মর্মবেদনার কথা!
নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ
নোনাচন্দন পুকুর, উত্তর ২৪ পরগনা
মদ ও ধর্ষণ
হায়দরাবাদে নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে চার অভিযুক্ত মদ্যপ অবস্থায় ছিল। প্রায় সব ধর্ষণের ঘটনাতেই দেখা যায়, ধর্ষকরা নেশাগ্রস্ত, মদ্যপ অবস্থায় এ কাজ করে। ধর্ষকের কঠিন শাস্তির দাবি তো করতে হবেই, কিন্তু তার সঙ্গে, এই সমাজ থেকে সর্বনাশা মদও হটাবার দাবি করা উচিত। মদ কেনাবেচা বন্ধ হোক। এই নেশা মানুষকে প্রায়ই তার মনুষ্যত্ব থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে, তার মান ও হুঁশ দূর করে তাকে পশুতে পরিণত করছে। তাই অপরাধ রুখতে, এই নেশাও রুখতে হবে।
রাধাপদ দাস
খাজরা, পশ্চিম মেদিনীপুর
সাম্প্রদায়িক রং
মহিলা পশুচিকিৎসককে গণধর্ষণ এবং হত্যার খবরে শিহরিত হয়েছি, কিন্তু একই ভাবে শিহরিত হয়েছি ফেসবুক-সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় এক দল বিকৃত মানসিকতার মানুষের আচরণ দেখে। গণধর্ষণ এবং হত্যার মতো জঘন্য ঘটনার মধ্যেও সাম্প্রদায়িকতার রং চড়ানো হচ্ছে। ওই ঘটনায় দোষীদের মধ্যে এক জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল, বাকিরা সবাই সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেণির। তবু যে ভাবে শুধুমাত্র ওই এক জন সংখ্যালঘু শ্রেণির অপরাধীকে কেন্দ্র করে সমাজমাধ্যমে সেই নির্দিষ্ট শ্রেণির প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা চলেছে, সেই শ্রেণির বিরুদ্ধে হুমকি আর অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করার হিড়িক পড়েছে, অভাবনীয়! ওই পোস্টদাতাদের মানসিকতা যেন এমন: যদি ওই অপরাধীরা সবাই হিন্দু হত, তা হলে বোধ হয় এত বড় জঘন্য অপরাধটাও নিতান্ত একটা সাধারণ ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া হত। যেন ওই দলের মধ্যে শুধু সংখ্যালঘু শ্রেণির ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় অপরাধী, বাকিরা ধোয়া তুলসীপাতা! অপরাধীদের যে কোনও ধর্ম হয় না, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে তাদের যে একটাই পরিচয় হয়— এটা কবে বুঝবে এই বিকৃত মানসিকতার না-মানুষগুলো? আবার কাঠুয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে যখন এক সংখ্যালঘু শ্রেণির নাবালিকার ওপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেণির কিছু পিশাচ, তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই জঘন্য ঘটনাকে সমর্থন করেছে এক শ্রেণির ‘মানুষ’। এমনকি ধর্ষণকারীদের গ্রেফতার করার প্রতিবাদে মিছিল পর্যন্ত বেরিয়েছিল। এ কোন ভারত?
প্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা
একচেটিয়া?
সম্প্রতি কলকাতার কালীঘাট চত্বরে দিনদুপুরে হতদরিদ্র পরিবারের (ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন গুজরান করা) দু’টি নাবালিকা মেয়েকে গণধর্ষণ করা হল। অভিযুক্তরা গ্রেফতার হলেও, কলকাতার নাগরিক সমাজ থেকে এই জঘন্য ঘটনার নিন্দা করা হয়েছে কি? মোমবাতি মিছিল হয়েছে? কোথায় কলকাতার বিদ্বজ্জন? তাঁদের মুখে এই ধর্ষণের প্রতিবাদ নেই কেন? তাঁরা দরিদ্র পরিবারের বলে? অথচ এই জঘন্য ঘটনার শিকার যদি এলিট পরিবারের কেউ হতেন, কলকাতার ঘুম উবে যেত। মিছিলে মিছিলে ছেয়ে যেত রাজপথ। আশ্চর্য, সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই নিয়ে কোনও প্রতিবাদ নেই! ‘ইজ্জত’ কি শুধু বড়লোকদের একচেটিয়া?
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল
কোন্নগর, হুগলি
দেশকে নয়
একটা নিন্দনীয় ধর্ষণের ঘটনার বিরুদ্ধে মানুষকে প্রতিবাদ করতে দেখে সত্যিই গর্বিত বোধ করছি সকলে। প্রতিবাদই অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যা মানুষকে ‘মানুষ’ করে তোলে। কিন্তু প্রতিবাদ করতে গিয়ে অযথা নিজের দেশ, দেশের প্রশাসন, দেশের আইনকে দোষারোপ করাটা হয়তো মাত্রা ছাড়াচ্ছে। এই ঘটনার কারণ হিসেবে সুরক্ষার অভাবকে বার বার তুলে ধরছেন সকলে। সুরক্ষাকে ফাঁকি দিয়ে কোনও ঘটনা ঘটে বলেই তাকে বলে ‘অপরাধ’। পৃথিবীর সবচেয়ে সুরক্ষিত দেশেও ধর্ষণের ঘটনা নিত্যই ঘটে। প্রতিবাদ করুন, অপরাধকে ঘৃণা করুন। অযথা নিজের দেশকে অপমান করবেন না।
অনিকেত কর্মকার
কামরাবাদ, সোনারপুর
বেটা সমঝাও
বেশ কিছু দিন সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে ওই গণধর্ষণের নানা প্রতিবাদ ও সমালোচনা চলবে। যত দিন না আরও একটি গণধর্ষণ এসে এই ঘটনাকে চাপা দেয়। নির্ভয়া কাণ্ডের পর দেশজোড়া আন্দোলনের জেরে অনেক কঠিন শাস্তি ও নিয়মকানুন তৈরি হল। কিন্তু অবস্থা সেই তিমিরে। কী ভাবে এই ঘোর অনাচারের প্রতিবিধান হবে? ফাঁসি দিয়ে, জীবন্ত পুড়িয়ে (যা ওই মেয়েটির মা দাবি করেছেন)? মনে হয় না। একটা অর্ধশিক্ষিত, অর্ধসভ্য জাতির মানুষদের মধ্যে এ ধরনের পিশাচ বার বার আসতেই থাকবে। তাই এই জাতিকে সুশিক্ষিত ও সুসভ্য করতে হবে। তার জন্য ‘বেটি বচাও, বেটি পঢ়াও’ যতটা জরুরি, ততটাই জরুরি ‘বেটা পঢ়াও, বেটা সমঝাও’। তা হলেই হয়তো এই সামাজিক অভিশাপ থেকে দেশ মুক্তি পাবে।
সমর সিংহ
হলদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর
অবাধ ভিডিয়ো
বিগত কয়েক বছরে ধর্ষণের মতো অপরাধ বেড়েছে, নাবালকরাও তা করছে। সম্ভবত স্মার্টফোনে অবাধে যৌন ভিডিয়ো দেখার অভ্যাস ও উত্তেজনা, সঙ্গে মদ্যপ হওয়ার অভ্যাস তাদের এ কাজ করাচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যাপক গণপ্রচার দরকার।
রীনা আইচ (পণ্ডিত)
কলকাতা-৩৭
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy