সঙ্ঘের ভাষণে আবার আশঙ্কার সিঁদুরে মেঘ প্রতিফলিত হচ্ছে। যদিও সংখ্যালঘুদের প্রতি অভয় মুদ্রা প্রদর্শন করে বলা হচ্ছে তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কিন্তু ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২-এর বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং পরবর্তী ঘটনাবলি, কিংবা গোধরা কাণ্ড স্মৃতিতে আজও দগদগে। ভারতভূমিতে হিন্দু পুনরুত্থানবাদের ইতিহাস বেশ পুরনো। আজ আরএসএস ঘোষিত ভাবে কাজটা শুরু করে দিয়েছে। তবু বহু ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ আছেন, যাঁরা এখনও দেশটাকে ধর্মনিরপেক্ষতার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। এই বিপরীত শক্তি বলবান ও লাগসই হওয়া দরকার।
যা কিছু হিন্দুত্বের আওতায় পড়ছে না, তা খাঁটি ভারতীয় নয়, এই কথাটা এত প্রকাশ্যে ও সাবলীল ভাবে আগে কখনও প্রচারিত হয়নি। আজ থেকে সিকি শতাব্দী আগেও কেউ ভাবতে পারত না যে, একটি হিন্দুত্ববাদী দল ভারতে এমন শক্তিশালী ও নির্ণায়ক ভূমিকায় থাকবে, সাভারকরের মতবাদ এতখানি জমি পাবে। তাই এই রাজনীতি নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা জরুরি। বিনায়ক দামোদর সাভারকর হিন্দুত্বকে যে ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন, সেটা প্রণিধানযোগ্য। সাভারকর বলেছিলেন, ভারতের যে সকল অধিবাসী রক্তসম্পর্কের সূত্রে ভারতকেই তাঁদের পুণ্যভূমি বলে মানেন, যাঁদের তীর্থক্ষেত্র এই দেশের মধ্যে, তাঁরাই হিন্দু ও এই ভূখণ্ডের একমাত্র দাবিদার; যাঁদের পুণ্যভূমি এই দেশের বাইরে, তাঁরা নন। বৌদ্ধ, ব্রাহ্ম, শিখ, এঁদের সঙ্গে তাই সমঝোতা করা যেতে পারে; কিন্তু মুসলমান বা খ্রিস্টানদের সঙ্গে আপস নয়। এঁদের পুণ্যভূমি ভারতের বাইরে, তাই তাঁরা এ দেশে থাকতে পারেন, কিন্তু হিন্দুদের সমান অধিকার পেতে পারেন না।
সাভারকরের আগে আর কেউই রাজনীতিকে ধর্মের সঙ্গে মিলিয়ে হিন্দুত্বের এই চেহারা হাজির করতে পারেননি। বিষবৃক্ষের বীজ তখনই বোনা হয়ে গিয়েছিল, এখন আমরা শুধু তার পল্লবিত চেহারাটি দেখতে পাচ্ছি। একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশের সংবিধানকে দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙে ফেলার জন্য কত রকমের আয়োজন করা হচ্ছে। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে বছরের পর বছর ধরে সুকৌশলে রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডায় হিন্দু ধর্মের একরৈখিক নির্মাণ চলছে, যা একটা নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মাথায় বেছে বেছে নিজেদের লোক বসানো (যোগ্যতার প্রশ্ন যেখানে অবান্তর), ইতিহাসের পাঠ্যবইয়ের আমূল সংস্কার, বিভিন্ন স্থানের মুসলিম নাম বদলে তথাকথিত ‘হিন্দু’ কিংবা সঙ্ঘ ঘেঁষা নামকরণ হচ্ছে। নবতম সংযোজন, হিন্দি ভাষায় ডাক্তারি পড়া। ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের মতো সম্মানিত মঞ্চও এই হানাদারি থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। রাজনীতিবিদ/ শাসকেরা তাঁদের প্রয়োজনে যুগে যুগে ধর্মান্ধতার প্যান্ডোরার বাক্স ভোটের ময়দানে উন্মুক্ত করবেন, জনগণ যেন তাতে বিভ্রান্ত কিংবা বিমোহিত না হন।
বিশ্বদীপ ভট্টাচার্য, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
চাষির বিদায়
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গদেশের কৃষক’ প্রবন্ধের কিছু অংশ প্রকাশিত হয়েছিল সাম্য নামে একটি প্রবন্ধ গ্রন্থে। সেটা ছিল ১৮৯৭ সাল। এর পরে প্রবন্ধটি বিবিধ প্রবন্ধ দ্বিতীয় ভাগ-এ সন্নিবিষ্ট হয়। মোট কথা, আজ থেকে প্রায় ১২৫ বছর আগে তিনি ‘বঙ্গদেশের কৃষক’ প্রবন্ধে এক প্রকার ঘোষণার সুরে জানিয়েছিলেন, “তোমার আমার মঙ্গল দেখিতেছি, কিন্তু তুমি আমি কি দেশ? তুমি আমি দেশের কয়জন? আর এই কৃষিজীবী কয়জন? তাহাদের ত্যাগ করিলে দেশে কয়জন থাকে? হিসাব করিলে তাহারাই দেশ— দেশের অধিকাংশ লোকই কৃষিজীবী।”
ভারত কৃষিপ্রধান দেশ। কিন্তু আজ ভারতে প্রতি দিন কৃষিজমির মৃত্যু হচ্ছে, কৃষকরা পরিণত হচ্ছেন শ্রমিকে। উদাহরণ, উত্তর ২৪ পরগনার একটি বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কৃষকেরা ধান, পাট বা অন্যান্য শস্যের চাষের জমিকে আম বাগান, পেয়ারা বাগান, ফুল বাগান অথবা লম্বু বা মেহগনি বাগানে পরিণত করছেন। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অগোচরেই আপাতনিরীহ, কিন্তু ভয়ঙ্কর দু’টি ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এক, বহু কৃষক চাষ থেকে সরে যাওয়ায় তাঁরা কালক্রমে শ্রমিকে রূপান্তরিত হচ্ছেন। দুই, কাগজে-কলমে সরকারি রেকর্ডে যে পরিমাণ কৃষিজমি থাকছে, বাস্তবে কিন্তু তা থাকছে না। বরং জমির চরিত্র বদলে যাচ্ছে। মুশকিল হল, এই প্রক্রিয়ার কুফল হাতে হাতে মিলবে না। কিন্তু কুফল ফলবেই, এবং তা রাষ্ট্রের অগোচরে! আমাদের সংশয়, দেশের প্রতিটি প্রান্তেই এক-একটি উত্তর ২৪ পরগনা তৈরি হচ্ছে না তো? বৃহত্তর কৃষক আন্দোলন সেই সংশয়কেই মান্যতা দিয়েছে কিছু দিন আগে।
দেশের প্রযুক্তিগত উন্নতি শিখরে পৌঁছবে, সে তো ভাল কথা। কিন্তু পেটে ভাত বা রুটি না থাকলে সে উন্নয়ন ভোগ করা যাবে তো? মানুষের প্রাথমিক চাহিদার জোগানের কান্ডারিরা ক্রমশ বঞ্চিত হতে হতে বিলুপ্ত হয়ে যাবে না তো? এ ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার করুণ অবস্থা কিন্তু সিঁদুরে মেঘ দেখাচ্ছে। অসম্ভব মুদ্রাস্ফীতি সে দেশর অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। এ দেশেও জিনিসপত্রের দাম যে বর্তমানে আকাশছোঁয়া, সে কথা ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন।
আমরা দেখেছি মাত্র দু’বছরে ভেঙে পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। অবশ্য ভারত প্রসঙ্গে মনে হতে পারে, দেশের মোট আয়তনের প্রায় ৫৫ শতাংশ জমিতে প্রতি বছর কৃষিকাজ হয়, এবং ৭% জমিতে দু’তিন বছর অন্তর এক বার চাষ করা হয়। তার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার তুলনা আসছে কেন?
তুলনার কারণ খুব স্পষ্ট, ভারতের মোট শ্রমশক্তির ৫২% যে ক্ষেত্রে নিযুক্ত, সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী আদতে কিন্তু সেই সংখ্যাটি কমে যাচ্ছে প্রতি দিন। সকলের আড়ালে একটু একটু করে শেষ হয়ে যাচ্ছে কৃষক ও কৃষিজমি। এখনই সতর্ক না হলে বড় মূল্য দিতে হতে পারে।
দীপায়ন প্রামাণিক, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
টাকায় নজর
সম্পাদকীয় ‘দায় ও দায়িত্ব’ (১৪-১১) প্রসঙ্গে কিছু কথা। প্রথম বিশ্বের কাছ থেকে পরিবেশ দূষণ সম্পর্কিত ‘ক্ষতিপূরণ’ পাওয়ার একটা আশা ধীরে ধীরে পল্লবিত হচ্ছে। বিভিন্ন মহল এতে আশান্বিত হয়ে হিসাবনিকাশ শুরু করে দেবে বা দিয়েছে ওই ক্ষতিপূরণের অর্থ নিয়ে। শতাব্দী ধরে নানা খাতে বিদেশি অর্থসাহায্য এসেছে ভারতে— শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়নের উদ্দেশ্যে। সম্প্রতি জানলাম, ২০ বছরে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি সাহায্য এসেছে টিবি প্রতিরোধের জন্য। সচেতন মানুষমাত্রেই জানেন, এই বিপুল অর্থের প্রকৃত ব্যবহার হলে এত দিনে ওই মারণব্যাধি সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যেত। স্বামী বিবেকানন্দ যখন বিপুল জ্ঞানসম্পদে ভরা ভারতের মহিমা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে লড়াই করছেন, তখন কিছু স্বার্থান্বেষী ভারতের দুর্দশাকে পণ্য করে অধিক সাহায্য আদায় করতে চেয়েছে। আর এখন অবস্থা আরও করুণ— দেশি-বিদেশি অর্থ যেন প্রকৃত প্রাপক না পায়, দুরবস্থা যেন অপরিবর্তিত থাকে, তা সুনিশ্চিত করার নতুন নতুন পন্থা আবিষ্কার হয়েছে। ভারতে আসা অর্থসাহায্যের ব্যবহারের প্রমাণ ও বীক্ষণ (ট্র্যাকিং ও মনিটরিং) চালু রাখা দরকার। নয়তো দরিদ্ররা যে তিমিরে, সেই তিমিরেই থেকে যাবেন।
কৌশিক দাস, বেঙ্গালুরু
‘অনুষ্ঠাতব্য’
‘এক নজরে’ স্তম্ভে (১১-১১) প্রকাশিত ‘হরমনদের টি-২০ বিশ্বকাপের মহড়া’ সংবাদে ‘অনুষ্ঠিতব্য’ শব্দ লেখা হয়েছে। এটি কিঞ্চিৎ প্রচলিত একটি ভুল শব্দ। ঠিকটি হবে ‘অনুষ্ঠাতব্য’। কারণ অনু-পূর্বক স্থা ধাতু তব্য = অনুষ্ঠাতব্য হয়। অনুরূপ ভাবে ‘প্রতিষ্ঠাতব্য’, ‘অধিষ্ঠাতব্য’ শব্দগুলির ব্যবহার কম হলেও এগুলিই ঠিক শব্দ। প্রকৃতপক্ষে, যে উপসর্গগুলো ই বা উ-কারান্ত, সেগুলোর ক্ষেত্রে ণ-ত্ব বিধি কার্যকর হয়।
দেবাশিস মজুমদার, কলকাতা-৩৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy