‘বঙ্গ কৌতুক’ ক্রোড়পত্র (১১-১১) সম্পর্কে এই চিঠি। বহু বিষয়েই নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, খুব ভাল লাগত বাংলা ছায়াছবির হাসির গান বিষয়ে একটি পৃথক লেখা থাকলে। ‘শিং নেই তবু নাম তার সিংহ’ (লুকোচুরি), ‘লেগেছে লেগেছে আগুন’ (বসন্তবিলাপ), ‘তুমি আকাশ এখন যদি হতে’ (৮০তে আসিও না) ‘তাক ধিন ধিন তা’ (সাবরমতী), ‘হ্যাদে গো পদ্মরাণী’ (ফুলেশ্বরী), ‘ছ্যা ছ্যা ছ্যা ক্যা শরম কি বাত’ (ছদ্মবেশী), ‘ওরে মন তল্পিতল্পা’ (শ্রীমান পৃথ্বীরাজ), ‘আমি তো কুমির ধরে আনিনি’ (কবিতা) প্রভৃতি গান কি ভোলা যায়? সেই অনাবিল হাসির নির্মল কৌতুকের পসরা আজ বাংলা ছবির গানে দুর্লভ।
আর একটা
বঙ্গ কৌতুক পাঠ করে নির্মল আনন্দ পেলাম, কয়েকটি কথা যোগ করি। দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ময়দানি রসিকতা’ পড়ে মনে পড়ল, মোহনবাগান ক্লাবের কিংবদন্তি কর্মকর্তা ধীরেন দে-র রসবোধের কথা। এক বার এক ফুটবলার সবে বিয়ে করেছেন, সেই সময় ক্লাব তাঁবুতে তাঁর এক প্রাক্তন বান্ধবী দেখা করতে এলেন। ধীরেন দে ফুটবলারটিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘মেয়েটি কে?’’ খেলোয়াড়টি আমতা আমতা করে উত্তর দিলেন, ‘‘স্যর, আমার মামাতো বোন।’’ ধীরেনবাবু বললেন, ‘তুমি তো সবে বিয়ে করেছ, এর মধ্যেই আবার মামাতো বোন-টোন আসছে কোত্থেকে?’’
শোভনলাল বক্সি
কলকাতা-৪৫
বিদর্ভ
সেমন্তী ঘোষের ‘ভোট কেবলই কৌশল নয়’ (১-১১) প্রতিবেদনের বিদর্ভ প্রসঙ্গে একটিই কথা।
সংবিধান অনুসারে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের হাতে আছে বিশেষ ক্ষমতা— বিদর্ভ এবং মরাঠাওয়াড়ার ক্ষেত্রে। এই দুই অঞ্চলের তাবৎ উন্নতি, বিশেষত এসসি/এসটি তালিকাভুক্ত মানুষগুলির জন্যে বিভিন্ন রকম বোর্ড গঠন করে মুখ্যমন্ত্রীর অতিরিক্ত সিদ্ধান্তও তিনি নিতে পারেন। কেন্দ্রীয় সাহায্য নিয়ে নির্দেশ দিতে পারেন অনেক বিষয়েই। এমনকি রাজ্য মন্ত্রিসভার সঙ্গে বিরোধ করেও। স্বাধীনতার পর থেকেই এমনটা চলে আসছে। কিন্তু, রাজনৈতিক দলের চাপানউতোর নিয়ে বহু পর্যালোচনা হলেও, রাজ্যপালের সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে তেমন কোনও ফলপ্রসূ আলোচনা উঠে এসেছে, এমন নয়।
এই দু’টি অঞ্চলই ছিল নিজাম শাসিত। ভারতভুক্তির সময় থেকেই অবহেলিত। তবে দু’টি অংশ দু’রকম। বিদর্ভ মানেই একের পর এক সংরক্ষিত জঙ্গল আর মরাঠাওয়াড়া হল পার্বত্য এবং ‘অজন্তা-ইলোরা’ প্রসিদ্ধ। বিদর্ভ প্রথম থেকেই মহারাষ্ট্র-সংযুক্তি চায়নি। স্বাধীন প্রদেশ হিসেবেই থাকতে চেয়েছিল।
তবে মরাঠাওয়াড়ার কৃষক মৃত্যু, খরা আর অনাহার নতুন করে খবরে এনেছে তাকে। এ সব জায়গায় পর্যটন ছাড়া আয় নেই। অনুন্নতি প্রবল। রাজ্যপাল নানা কমিটি এবং সংশোধনী কমিটি বানিয়েও চলেছেন। প্রধান নদী কৃষ্ণা, গোদাবরী আর তাপ্তী ছাড়াও আছে কিছু ছোট নদী ও উপনদী। কিন্তু সেচ প্রকল্প এবং নদী সচেতনতা লাল ফিতের বাঁধনে হাঁসফাঁস। তবে সে বিষয়ে বিশেষত একের পর এক বোর্ড গঠনে সরকার কিন্তু দরাজ-হাত। তার ওপর এখন তো এখানে কেন্দ্র-রাজ্য এবং রাজ্যপাল সব একই দলের প্রতিনিধি! কিন্তু ওই, ‘‘লাও তো বটে কিন্তু আনে কে’’!
Peasants and Workers Party of India (PWPI)— স্বাধীনতার আগে থেকে সংগঠিত হয়ে এই বামপন্থী দলটি আজও সক্রিয়। আর দ্বিতীয় দল হল VBA— Vanchit Bahujan Aghadi, যার বর্তমান নেতা প্রকাশ অম্বেডকর হলেন বি আর অম্বেডকরের নাতি। এঁরা সরকারি দুর্নীতি ও অবহেলার যে কথা তুলছেন, তার মধ্যে বিশেষ গুরুত্বের হল বিদর্ভ ও মরাঠাওয়াড়া এবং রাজ্যপালের বিশেষ ক্ষমতা।
এটি সংবিধান অনুযায়ী প্রশাসনিক বিষয় হলেও, রাজ্যপালের ক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে ভীষণ ভাবেই দলতান্ত্রিক। তাই সময় এসেছে, অন্য কয়েকটি প্রদেশের মতো মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের এই বিশেষ ক্ষমতা নিয়েও আলাপ আলোচনার। কারণ সেটিও তো সরকারিকরণ ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার মধ্যেই পড়ে। রাজ্যপাল যদিও ভোটে নির্বাচিত হন না, কিন্তু কে না জানে, রাজ্যপাল নির্বাচনে ভোটের রংই জ্বলজ্বল করে। বিদর্ভের এই বিশেষ অবস্থান খেয়াল রাখলে সাম্প্রতিক কৃষি সঙ্কট ও সেই সঙ্কটের নিরাময়হীনতাকেও আমরা একটু অন্য দৃষ্টিতে দেখতে পারি।
মন্দার মুখোপাধ্যায়
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, শ্রীশিক্ষায়তন কলেজ, কলকাতা
গঙ্গা ও সুরা
‘নাই রস নাই’ (৭-১১) প্রতিবেদনের সামান্য প্রতিবাদ। লেখা হয়েছে: ‘‘...গঙ্গায় কারণবারি মেশানোর রীতি নেই বলেই দাবি প্রবীণ পুরোহিতদের।’’ মূল রামায়ণ যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা জানবেন, সীতা অযোধ্যা থেকে রাম লক্ষ্মণের সঙ্গে বনবাসে যাওয়ার সময় ভাগীরথীর মাঝখানে পৌঁছে ভাগীরথীকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন: আমি অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করে সহস্রসংখ্যক ঘট-পরিমিত সুরা ও পলান্ন (মাংস মিশ্রিত অন্ন) দিয়ে তোমার অর্চনা করব। ‘‘সুরাঘটসহস্রেণ মাংস ভূতৌ দনেন চ।’’ (দ্বিপঞ্চাশঃ সর্গ: অযোধ্যাকাণ্ডম্, শ্লোক ৮৯)। বোঝাই যাচ্ছে, গঙ্গাকে সুরা বা মদ দেওয়ার রীতি ছিল। আর আজকের মতো নিরামিষ ফলমূল বেলপাতা নয়, মাংস মিশ্রিত অন্ন দেওয়া হত।
আর যাঁরা ধর্ম মানেই নিরামিষ ফলমূল বলে চালাতে ও গেলাতে চাইছেন তাঁরা মূল রামায়ণ পড়ে দেখুন। বনবাসের প্রথম রাতে বটের ক্ষীর দিয়ে জটা তৈরি করে রাম সীতা লক্ষ্মণ কী খেলেন? বরাহ, ঋষ্য, পৃষৎ, ও রুরু নামক চারটি মহামৃগ। তিন জনে খাবেন চারটি মহামৃগ। ‘‘তৌ তত্রা হত্বা চতুরো মহামৃগান বরাহমৃশ্যং পৃষতং মহারুরুম্।’’ (দ্বিপঞ্চাশঃ সর্গ, শ্লোক ১০২)।
ইমানুল হক
গোয়েঙ্কা কলেজ অব কমার্স
প্রতিবেদকের উত্তর: প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল, ‘‘সরযূতে প্রাণপ্রিয় ভাই লক্ষ্মণকে বিসর্জন থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপচারে নদীতে বিসর্জনের যোগ কিন্তু আবহমান কালের।’’ অজ্ঞাতপরিচয় কোনও ব্যক্তি গঙ্গায় মদের বোতল বিসর্জন দিচ্ছেন, এমন কয়েকটি ছবির নেপথ্যকাহিনির খোঁজে যে প্রবীণ পুরোহিতদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল, তাঁরা অধুনা প্রচলিত পূজা-পদ্ধতির ভিত্তিতেই বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করেছেন। তাঁদের মতে, গঙ্গায় কারণ-বারি বিসর্জন তো প্রচলিত নেই-ই, কিছু কিছু পুজোয় কারণবারি নিবেদনের রীতি থাকলেও, সেটি বাজারজাত মদ তা-ও বলা যায় না। শম্ভুনাথ স্মৃতিতীর্থের মতো প্রবীণ পুরোহিত যেমন বলেন, ‘‘আদা, ডাবের জল, আখের গুড় কাংস্যপাত্রে ঢাললেই অন্য রূপ নেয়। তা-ই কারণবারি।’’ রামায়ণের কোনও একটি শ্লোকে গঙ্গায় মদ্যমাংস বিসর্জনের উল্লেখ থাকলেও, এই ধরনের শ্লোক খুব বেশি নেই বলে মনে করেন পুরাণবিদেরা। নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর মতে, ‘‘রামায়ণেও এমন শ্লোক আর পাওয়া যাবে না। ক্ষত্রিয় রাজবংশের সন্তান রামের মাংসাহারের নিদর্শন অবশ্যই রয়েছে। তবে প্রাচীন বৈদিক যুগের ধারা পাল্টে রামায়ণ-মহাভারত লেখার সময়কালে গোবধ কার্যত বন্ধই হয়ে গিয়েছে। প্রাচীন বৈদিক যুগের ছায়া অবলম্বনে ব্রাহ্মণদের গোদানের রীতি অবশ্য চালু ছিল। কিন্তু গোমাংস ভক্ষণ তখন বহুল প্রচলিত নয়।’’ প্রতিবেদনটির ভিত্তিতে এই সাতকাহন অবশ্য কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক। গঙ্গায় মদ্য বিসর্জনের রীতিটি সাধারণ ভাবে অপরিচিত— প্রতিবেদনে সেটুকুই বলা হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy