সংগৃহীত চিত্র
‘সুনীলরা ১০৯’ (১৮-৯) খবরটি পড়ে মনে হল, এ খুব একটা সুখের কথা কি? কবে, কোন কালে ‘ভারত’ নামক দেশটি এশিয়াতে নাকি ফুটবলে প্রথম সারির একটি দেশ ছিল। চার বার অলিম্পিক ফুটবলে খেলে এক বার চতুর্থও হতে পেরেছিল, যা এযাবৎ ভারতীয় ফুটবলের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রদর্শন। দু’টি এশিয়ান গেমসে চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল। এক বার নাকি বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলার চান্স পেয়েও বুট ও যথেষ্ট অনুশীলন না থাকায় যেতে পারেনি। এই সব ঘটেছিল আজ থেকে প্রায় ৬০-৭০ বছর আগে।
সে কথা এখনকার প্রজন্মকে বললে তুচ্ছতাচ্ছিল্য তো করবেই! যে দেশ এক সময় এত ভাল ফুটবল খেলতে পারত, দীর্ঘ কাল তার এই দৈন্যদশা কেন? যে দেশ শৈলেন মান্না, পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামীদের মতো দিকপাল ফুটবলারের জন্ম দিয়েছিল, এত কাল ধরেও কেন সেই দেশ এঁদের কাছাকাছি মানের কোনও ফুটবলার তৈরি করতে পারছে না? ভারতীয় ফুটবলের বিশ্বমান শুধু একটা পরিসংখ্যান— ১০২, ১০৬, ১০৮, আর এখন ১০৯। আর কত কাল ধরে যে দেখতে হবে ভারতীয় ফুটবলের এই অধঃপতন, কে জানে। এই পিছোনোর দায় কার?
তাপস সাহা
শেওড়াফুলি, হুগলি
চাষি তিমিরেই
অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের উত্তর সম্পাদকীয়টি (‘পূর্ণ স্বরাজ আগত ওই’, ২৫-৯) পড়ে একটি অভিজ্ঞতা জানাতে চাই। ব্লক অফিসে চাকরিসূত্রে আমি সপ্তাহে এক দিন করে একটি পঞ্চায়েত অফিসে বসতাম। অঞ্চলটির অর্থনীতি ৮০ শতাংশই সবজি চাষ-নির্ভর, এবং অফিস ভবনটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে। অফিসের সামনে বেলা একটা-দেড়টার পর থেকেই চাষিরা ঝুড়ি করে সবজি নিয়ে আসতেন। এখনও আসেন। মোড়টিতে বেশ কিছু চায়ের দোকােন বসে থাকে ‘ফড়ে’ নামক মধ্যস্বত্বভোগীর দল। কোনও চাষি ফসল নিয়ে মোড়ে আসামাত্র যে কোনও এক জন এগিয়ে যেত তাঁর কাছে। তিন বছরের মধ্যে কোনও দিন দেখিনি, একই পণ্য কেনার জন্য দু’জন একসঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। এক দিন দেখলাম, এক চাষি ঝুড়িতে বড় বড় সাতটি পেঁপে নিয়ে যাচ্ছেন। তার মধ্যে একটি কেজিখানেক ওজনের গাছপাকা পেঁপে দেখে দাম জানতে চাইলে জবাব পেলাম, ‘‘বিক্কিরি করবোনি।’’ একটা পেঁপের জন্য ৪০ টাকা দিতে চাইলাম, সে সময়ে যা বাজারদরের চেয়ে বেশি। এক জবাব।
দেখলাম, পাশের দোকানের বেঞ্চে বসা ফড়ের কাছে ওই সাতটি পেঁপে মাত্র পঁয়তাল্লিশ টাকার বিনিময়ে হাতবদল হল। জানলাম, ফড়ে ছাড়া অন্য কারও কাছে যদি কোনও চাষি একটি কাঁচা লঙ্কাও বিক্রি করেন, তবে কোনও ফড়েই তাঁর কাছ থেকে আর সবজি কিনবে না। এপিএমসি/মান্ডির সরকারি বাবুদের সঙ্গে দালালদের সুসম্পর্কের কথা সর্বজনবিদিত। ফলে চাষি যে তিমিরে আছেন, সেই তিমিরেই থাকবেন। শুধু জিনস-টি শার্ট শোভিত ‘ফড়ে’দের জায়গায় দেখা যাবে কোট-টাই পরিহিত ‘এজেন্ট’দের।
পরিমল সমাদ্দার
কলকাতা-৯৬
অবহেলার মূল্য
আবাহন দত্ত (‘তেলে জলে মিশ খায় না’, ২৫-৯) লিখেছেন—“মাতৃভাষার পক্ষে এক বন্ধনীতে অন্য কোনও শ্রেণিকে বসানো রবীন্দ্রনাথের পক্ষে অসম্ভব ছিল।’’ এতে দ্বিমতের কোনও অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন, শৈশবে ইংরেজি শিক্ষা ঠিক ভাবে না অর্জন করার আক্ষেপ রবীন্দ্রনাথেরও কি ছিল? তিনি ‘শিক্ষার সাঙ্গীকরণ’ প্রবন্ধে লিখেছেন, “আমার বারো বৎসর পর্যন্ত ইংরেজি বর্জিত এই শিক্ষাই চলেছিল। তার পরে ইংরেজি বিদ্যালয়ে প্রবেশের অনতিকাল পরেই আমি ইস্কুল-মাস্টারের শাসন হতে ঊর্ধ্বশ্বাসে পলাতক।’’ অর্থাৎ, তিনি ১২ বছর বয়সে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা আরম্ভ হওয়ার পর স্কুল যাওয়া ছেড়ে দেন। ইংরেজি শিক্ষাকে এ ভাবে ‘অবহেলা’ করার বিষয়টা কার্যত যে তাঁর ‘ভুল’ ছিল, সেটা কালান্তর গ্রন্থে ‘রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রনৈতিক মত’ প্রবন্ধে প্রকাশও করেছেন।
সে কালে সভায় দেশের শিক্ষিত ও নামী নেতারা ‘উপরওয়ালা’ (রবীন্দ্রনাথের ভাষায়) ইংরেজ-শাসককে সরাসরি বার্তা দিতে সাধারণত ইংরেজিতে ভাষণ দিতেন। এ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ কেমন লজ্জাকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন, তাঁর লেখা থেকে সেটাই উঠে আসে, “...রাজসাহী সম্মিলনীতে নাটোরের পরলোকগত মহারাজা জগদিন্দ্রনাথের সঙ্গে চক্রান্ত করে সভায় বাংলাভাষা প্রবর্তন করবার প্রথম চেষ্টা যখন করি, তখন উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় প্রভৃতি তৎসাময়িক রাষ্ট্রনেতারা আমার প্রতি একান্ত ক্রুদ্ধ হয়ে কঠোর বিদ্রূপ করেছিলেন। বিদ্রূপ ও বাধা আমার জীবনের সকল কর্মেই আমি প্রচুর পরিমাণেই পেয়েছি, এ ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয় নি। পর বৎসরে রুগ্নশরীর নিয়ে ঢাকা-কন্ফারেন্সেও আমাকে এই চেষ্টায় প্রবৃত্ত হতে হয়েছিল। আমার এই সৃষ্টিছাড়া উৎসাহ উপলক্ষ্যে তখন এমনতরো একটা কানাকানি উঠেছিল যে, ইংরেজি ভাষায় আমার দখল নেই বলেই রাষ্ট্রসভার মতো অজায়গায় আমি বাংলা চালাবার উদ্যোগ করেছি। বাঙালির ছেলের পক্ষে যে গালি সবচেয়ে লজ্জার সেইটেই সেদিন আমার প্রতি প্রয়োগ করা হয়েছিল, অর্থাৎ ইংরেজি আমি জানি নে। এত বড়ো দুঃসহ লাঞ্ছনা আমি নীরবে সহ্য করেছিলুম তার একটা কারণ, ইংরেজিভাষা-শিক্ষা বাল্যকাল থেকে আমি সত্যই অবহেলা করেছি; দ্বিতীয় কারণ, পিতৃদেবের শাসনে তখনকার দিনেও আমাদের পরিবারে পরস্পর পত্র লেখা প্রভৃতি ব্যাপারে ইংরেজিভাষা ব্যবহার অপমানজনক বলে গণ্য হ’ত।’’ এর প্রেক্ষিতে বিচার করতে হবে, প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি-শিক্ষার বিষয়টি কতটা অপরিহার্য।
পৃথ্বীশ মজুমদার
কোন্নগর, হুগলি
সেই মানুষটি
সরকারি বাসে চড়ে কলকাতা চলেছি ৩৪ নং জাতীয় সড়ক ধরে। আচমকা একটি বাইকের সঙ্গে বাসের ধাক্কা লাগল, আর বাইকের আরোহী ছিটকে পড়লেন রাস্তার ধারে। মুহূর্তের মধ্যে প্রায় শ’খানেক মানুষ ছুটে এসে বাসটিকে ঘিরে ফেলল। প্রাণভয়ে যাত্রীরা বাস থেকে নেমে পড়লেন। কন্ডাক্টরকে দ্রুত নেমে যেতে দেখলাম। কিন্তু ড্রাইভারকে দেখলাম না। ড্রাইভারের কেবিন তত ক্ষণে ঘিরে ফেলেছে বহু মানুষ।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ কানে এল, ‘‘আমার জামাটা আমি কী ভাবে ফিরে পাব?’’ চোখে পড়ল, দরিদ্র এক মুসলিম প্রৌঢ় পাশে দাঁড়িয়ে। অবাক হয়ে বললাম, কোন জামা খুঁজছেন? উনি হাতের ব্যাগ দেখিয়ে বললেন, ‘‘ছিলাম ড্রাইভারের কেবিনের কাছেই। বিপদের আঁচ করে তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে আমার একটা জামা বার করে ড্রাইভারকে দিলাম। উনিও পরে নিলেন। ওঁর পরনে সরকারি ড্রাইভারের ইউনিফর্ম ছিল।’’ বাক্রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। তার পর বললাম, আপনি আজ যে কাজটা করলেন, তার প্রশংসার ভাষা নেই। একটা জামা হারিয়ে আপশোস করবেন না। এখন এখানে এই আলোচনা করবেন না।গন্ডগোলের মধ্যে প্রৌঢ়ের নাম- ঠিকানা আর নেওয়া হয়নি।
শশাঙ্ক শেখর মণ্ডল
কৃষ্ণনগর, নদিয়া
প্রবীণের কথা
আমি একটি বড় আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অবসর নিয়েছি, কিন্তু পেনশনভোগী নই। অবসরকালীন প্রাপ্য ব্যাঙ্কে রেখে যে সুদ পেতাম, তাতে বেশ চালিয়ে নিচ্ছিলাম। বাধ সাধল সরকারের নতুন ঋণনীতি, এবং ব্যাঙ্কের সুদনীতি। এই ক্রমহ্রাসমাণ আয়ে সংসার সামলে সামাজিকতা সামলানো তো দায় হয়ে উঠেছে। পেনশনহীন সুদনির্ভর প্রবীণদের কথা একটু গুরুত্ব দিয়ে ভাবার অনুরোধ করি প্রধানমন্ত্রীকে।
দিলীপ কুমার ভট্টাচার্য
কলকাতা-৫৭
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy