‘প্রকৃত সংস্কার’ (৩০-৭) সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে ‘‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মীদের ১৫ শতাংশ বেতনবৃদ্ধির যৌক্তিকতা খুঁজিয়া পাওয়া ভার।’’ একটি রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির যৌক্তিকতা বিচার করা হবে কী দেখে? প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি ইত্যাদি সামাজিক পরিস্থিতি দেখে? চার বছর ধরে মূল্যবৃদ্ধির হার বিবেচনা করে? অথচ সেই দীর্ঘ সময়ে কেন্দ্র ও রাজ্য কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা বেড়েছে, নতুন পে কমিশন কার্যকর হয়ে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক কর্মীদের প্রত্যেক ঘরে জ়িরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে হবে, ফি বছর ১৫ অগস্ট লালকেল্লা থেকে ঘোষিত বিবিধ সরকারি প্রকল্পের সার্বিক রূপদান করতে হবে, মহামারি-কবলিত সময়ে জীবনের তোয়াক্কা না করে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে সরকারি অনুদানের টাকা, ঋণখেলাপিদের হাসিমুখে ঋণ দিয়ে যেতে হবে আবার। এত কিছুর পরও তাঁদের বেতনবৃদ্ধিতে ‘‘ক্ষতি গ্রাহকের। এবং অতি অবশ্যই, ক্ষতি ভারতীয় অর্থব্যবস্থার।’’
প্রসঙ্গত জানাই, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক জন নতুন নিযুক্ত কেরানির প্রথম মাসে হাতে-পাওয়া বেতন সরকারি গ্রুপ ডি কর্মচারীদের বেতনের তুলনায় যথেষ্ট কম। সদিচ্ছা মহৎ বস্তু, আর সেই সদিচ্ছাতেই ভর করে বিদেশ-বিভুঁইয়ে পড়ে থাকা ব্যাঙ্ককর্মীরা দীর্ঘ চার-পাঁচ মাস ধরে আপৎকালেও নিরন্তর পরিষেবা দিয়ে চলেছেন।
সায়ন নন্দী, নবদ্বীপ, নদিয়া
আড়ালে যাঁরা
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলি, যেমন ব্যাঙ্ক, বিমা সংস্থা, বিমান পরিষেবা ইত্যাদি পরিচালনার জন্য আলাদা আলাদা সরকার-অনুমোদিত বোর্ড বা নিগম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কাজেই এই সকল প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন পরিচালনা যেমন সরকারের কাজ নয়, তেমনই নিয়ন্ত্রণের রাশেও টান দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। অতীতে দেখা গিয়েছে তাবড় নেতাদের অঙ্গুলিহেলনে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে অযোগ্য লোকদের কোটি কোটি টাকা ব্যাঙ্কঋণ পেতে, যা কোনও দিনই আর ব্যাঙ্কে ফেরেনি। আখেরে ক্ষতিই হয়েছে সরকারের, প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে।
সম্প্রতি প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ব্যাঙ্ক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন, সে কথা কারও অজানা নয়। ঋণগ্রাহকের মাথায় যদি বড় বড় নেতার হাত থাকে, কর্মীর শত কুশলতাও তাঁর ঋণপ্রাপ্তি ঠেকাতে পারবে না। এই ভাবেই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি কঠিন আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে। ব্যাঙ্ক কর্মীদের কাজের চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে, কিন্তু নেতারা চিরকাল পর্দার আড়ালেই থেকে যান।
উৎপল মুখোপাধ্যায়, চন্দননগর, হুগলি
খোলা চোখে
সম্পাদকীয় নিবন্ধটি ‘‘কাজের সহিত বেতন সম্পর্কহীন’’ বলেই ক্ষান্ত হয়নি, কর্মচারীদের ‘‘সদিচ্ছার অভাব’’-ও লক্ষ করেছে। তার দু’টি মাত্র দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে— ‘গ্রাহকদের সহিত ব্যবহার’ আর ‘অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ’! ‘অনাদায়ী ঋণ’-এর সঙ্গে কর্মীদের কেন জড়াতে চাওয়া হচ্ছে, বুঝলাম না। ২০১৭ সালের ১ নভেম্বর থেকে বকেয়া বেতন বৃদ্ধির জন্য ব্যাঙ্ক শিল্পের বাৎসরিক খরচ হচ্ছে ৭,৮৯৮ কোটি টাকা। আর গত পাঁচ বছরে (২০১৪-২০১৯) মকুব হয়েছে ৬,৪০,২০২ কোটি টাকার ঋণ!
কর্মচারীদের ‘কর্মকুশলতা’ দেখতে চাইলে বলতে হয়, লকডাউনে ব্যাঙ্ককর্মীরা এক দিনের জন্যও এই শিল্পকে অচল হতে দেননি, যেখানে সরকারি দফতরগুলি বন্ধ দিনের পর দিন। চার মাসের মধ্যে অসংখ্য কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, শতাধিক প্রাণ হারিয়েছেন, এখনও অনেকে রোগশয্যায়।
গোটা দেশে ১ জুলাই, ২০২০ পর্যন্ত জনধন প্রকল্পে খোলা মোট অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৩৯.৭১ কোটি। এর মধ্যে শুধুমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মীরাই দৈনন্দিন অন্যান্য কাজ সামলে খুলেছেন ৩১.৫১ কোটি, আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলি খুলেছে আরও ৬.৯৪ কোটি। আর বেসরকারি ব্যাঙ্ক কত খুলেছে? সাকুল্যে মাত্র ১.২৬ কোটি! নোটবন্দির সময়ে অতিরিক্ত কাজের চাপে অন্তত ১২ জন কর্মীকে প্রাণ দিতে হয়েছিল।
নিবন্ধের শেষে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের ‘কাঠামোগত পরিবর্তন’ চাই। তবে কি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের হাতেই ব্যাঙ্ক শিল্পকে তুলে দিতে বলছেন? ২০০৪ সালে গ্লোবাল ট্রাস্ট ব্যাঙ্কের পরিণতির কথা মনে করুন। তখন তার গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে এগিয়ে এসেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অব কমার্স-ই! আর সম্প্রতি ইয়েস ব্যাঙ্কের পরিণতি? আবার তো সেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককেই ত্রাণকর্তা হিসেবে এগিয়ে আসতে হল।
প্রতিবেদনটির একেবারে শেষ লাইনে বলা হল, মালিকানা সরকারের হাতে যদি থাকেও তবে ‘পরিচালনা পেশাদারি হাতে’ যেন আসে। বাইরে থেকে আমদানি করা পেশাদারদের জন্য অর্থ নষ্ট করার কোনও প্রয়োজন নেই। এই শিল্পে রয়েছেন লক্ষ লক্ষ অভিজ্ঞ কর্মী, যাঁদের সঙ্গে ব্যাঙ্ক শিল্পের নাড়ির টান। তাঁদের মধ্যেই রয়েছে উন্নত পরিষেবা দানের মনোভাব, শিল্পের প্রসার, ও উন্নতির ভাবনা।
জয়ন্ত রায়, কলকাতা-৩৭
লাভের কড়ি
ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পন্ন হয়নি, শুধু ‘মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। বেতনের সামান্য অংশ কর্মীদের কর্মকুশলতার উপর নির্ভর করবে, এমন কিছু প্রস্তাবে নেই। যা আছে তা হল সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক শাখার লাভের উপর একটা ‘ইনসেনটিভ’ দেওয়ার কথা। লোকসান হলে যা পাওয়া যাবে না।
ব্যাঙ্ক শিল্পের বেতন সরকারের কোষাগার থেকে আসে না। ব্যাঙ্কই সেটা বহন করে। উল্টে প্রতি বছর সরকারকে লভ্যাংশের একটা বড় অংশ ডিভিডেন্ড হিসেবে প্রদান করে। সব ব্যাঙ্ক লোকসানে চলে না।
দীপঙ্কর কুমার, বাঁশবেড়িয়া, হুগলি
উৎকর্ষ চাই
ব্যাঙ্ক কর্মীদের কাজের উৎকর্ষের সঙ্গে বেতন বৃদ্ধি যুক্ত করলে ভাল হত। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মীদের গ্রাহক পরিষেবা মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। আমি কোন্নগর এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের শাখার এক জন পুরনো গ্রাহক। বর্তমানে এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের সংযুক্তি হয়েছে ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের সঙ্গে। ২০ জুলাই আমি জীবনবিমাকে বাৎসরিক প্রিমিয়াম বাবদ একটি চেক দিই। দু’দিন পরে এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক এসএমএস পাঠায় যে ওই চেক রিটার্ন হয়েছে।
আমি ব্যাঙ্কে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীকে জিজ্ঞাসা করি, অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা থাকা সত্ত্বেও কেন চেক রিটার্ন হল? উনি কম্পিউটার দেখে বললেন, কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার জন্য চেকটি রিটার্ন হয়েছে। এবং তার জন্য ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের হেড অফিস আমার অ্যাকাউন্ট থেকে ২৯০ টাকা কেটে নিয়েছে। আমি তাজ্জব হয়ে যাই। ব্যাঙ্ক কর্মীদের কর্তব্যে গাফিলতির মাশুল কেন গ্রাহককে দিতে হবে? উনি জানান, এটা হেড অফিসের বিষয়, তাঁদের কিছু করার নেই। এর পর বাড়ি থেকে আধার কার্ডের ফটোকপি জমা দিলে টেকনিক্যাল সমস্যা দূর হয়। অথচ, আমার কেওয়াইসি যথাসময়ে জমা দেওয়া ছিল।
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি
কর কমান
বিমা কোম্পানিগুলো চালু করেছে বিভিন্ন করোনা পলিসি। হাসপাতালগুলোর অর্থলালসার ভয়ে মানুষ বাধ্য হয়ে এই বিমায় বিনিয়োগ করছেন। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সেই বিমার টাকার উপর ৯% + ৯% = ১৮% জিএসটি নিচ্ছে। অথচ সোনা কিনলে জিএসটি ৩%! এই বিপর্যয়ের মুখে জিএসটি-টা বাদ দেওয়া বা কম করা যায় না?
শুভজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-১৪১
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy