মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কন্যাশ্রীতে পাওয়া অর্থ দান করছে মুখ্য়মন্ত্রীর ত্রা৪ণ তহবিলে।
এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা মনোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।
চিঠি-১) কন্যাশ্রীর টাকা মুখ্যমন্ত্রীর তহবিলে দিল শ্রেয়সী
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর শহরের অলিগঞ্জ ঋষি রাজ নারায়ন বিদ্যামন্দির বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রেয়সী মহাপাত্র কিছু দিন আগে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। দিনকয়েক আগে কন্যাশ্রী প্রকল্পের ৩ হাজার টাকা শ্রেয়সীর অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির কথা ভেবে শ্রেয়সী সিদ্ধান্ত নেয়, মুখ্যমন্ত্রীর রিলিফ ফান্ডে সে ওই অর্থ দান করবে। শ্রেয়সীর বাবা গোপীবল্লভপুর-২ নম্বর ব্লকের বেলিয়াবেড়া কেসিএম হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সুব্রত মহাপাত্র। শ্রেয়সী তার ইচ্ছার কথা তার বাবা সুব্রতবাবুকে জানায়।
সুব্রতবাবু বুধবার সকালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কালেক্টরেট অফিসের অধীন সাবডিভিশনাল অফিসে যান। সেখানকার এক্সিকিউটিভ অফিসার ইউসুফ রেজার হাতে ৩ হাজার টাকা তুলে দেন। শ্রেয়সীর এই প্রয়াসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইউসুফ রেজা। শ্রেয়সীর কথায়- "এই পরিস্থিতিতে এইটুকু সাহায্য করতে পেরে আমি আনন্দিত।"
সুব্রতবাবুও তাঁর মেয়ের এই কাজের জন্য গর্বিত বলে জানিয়েছেন।
নরসিংহ দাস, রবীন্দ্রনগর, মেদিনীপুর শহর, পিন- ৭২১১০১, ফোন- ৮২৫০৬১০১৪৭
চিঠি-২) লকডাউনে কাজ হারিয়েছি, খাব কী?
হুগলির শ্রীরামপুর শহরে কোর্টের পাশে একটি ছোট্ট জেরক্সের দোকানে কাজ করি। মাসমাইনে নেই। দোকানে যেমন কাজ, তা দেখে মালিক খুশি হয়ে যা দেন, তা দিয়ে কোনও ভাবে দিন গুজরান করি। কাজ না করলে কোনো উপার্জন নেই। বাড়িতে স্ত্রী, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া আমার মেয়ে, ৭২ বছর বয়সী আমার বাবা। বাবা হার্টের রোগী।
লকডাউনের জন্য আমার এখন কোনও কাজ নেই। বাড়িতে অভাব অনটন নিত্যসঙ্গী। প্রতি দিন যা রোজগার করি, তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যাই। ঘরে যেটুকু সঞ্চয় ছিল সব শেষ। লকডাউনের বাকি দিনগুলো কী ভাবে উপার্জনহীন হয়ে কাটাবো আর কী খাব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
আর বাড়ি থেকে কাজ? সে তো আর আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই হাত কামড়াচ্ছি।
এতো দাম দিয়ে কী ভাবে রোজ জিনিস কিনবো?
আমাদের শীতলতলা বাজারে মুড়ির দাম প্রতি কিলোগ্রামে ৫০ টাকা। তবু কিনতে বাধ্য হচ্ছি।
সরকার কি আমার মতো দিন আনা-দিন খাওয়া লোকদের জন্য কোনও চিন্তাভাবনা আদৌ করছে?
আমি কোথায় যাব? কার কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করব? কোথায় যোগাযোগ করলে আমার এই সমস্যার সমাধান হবে? আপনাদের মাধ্যমে আমার মতো খেটে খাওয়া মানুষদের আর্তনাদ যাতে সরকারের এবং মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসে, তাই আমার এই অবস্থার কথা তুলে ধরলাম।
আমাকে দয়া করে সাহায্য করুন।
বিশ্বনাথ দত্ত, চাতরা, শ্রীরামপুর, হুগলি, মোবাইল- ৯৮৩০৩০৪৭২০
চিঠি-৩)দোকানমালিক বেতন দেওয়ার ভয়ে যোগাযোগ রাখছে না, কী করব?
আমি একটা প্রাইভেট ফার্মে বিএমডি টেস্টিংয়ের কাজ করতাম। কিন্তু হঠাৎ করোনা ভাইরাসের সমস্যায় আমাদের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমাদের মালিক আর কোনও যোগাযোগ রাখছেন না বেতন দিতে হবে বলে। কত দিন এমন অচলাবস্থা চলবে? এই ভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে কী হবে? খুব চিন্তায় আছি।
আমার বৃদ্ধ বাবা, মা, স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। অর্থাভাবে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। কী ভাবে বেঁচে থাকব, জানি না। দয়া করে যদি আপনি রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই বিপদ থেকে আমাদের উদ্ধার করেন, তা হলে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব।
বাবু সেনাপতি, বজবজ, দক্ষিণ ২৪পরগনা, ইমেল: senapatibabu2012@gmail.com
চিঠি-৪)গৃহশিক্ষকতাই উপার্জন ছিল, এখন কী করব?
আমার বাড়ি গাইঘাটা, উত্তর চব্বিশ পরগনা। আমি পেশায় এক জন গৃহশিক্ষক। সারা বছর ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে আমার সংসার চলে। এখন করোনা আতঙ্কে লকডাউনের ফলে আমার উপার্জনের সব পথ বন্ধ। ঘরে যেটুকু সঞ্চয় আছে, তাতে আর কয়েকটি দিন চলবে। কিন্তু তার পর? লকডাউন ওঠার পর নতুন করে পড়ানো শুরু করতে পারলেও মাইনে পাব আরও এক মাস পর। তত দিন স্ত্রী, পুত্র নিয়ে কী ভাবে বাঁচব?
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, আমার মতো অসহায় গৃহশিক্ষকদের কথা একটু ভাবুন।
মানবেন্দ্র হালদার, মোবাইল: ৯৭৭৫৫৯৫৮২৫
চিঠি-৫)কোনও রোজগার নেই, মুখ্যমন্ত্রী কি সাহায্য করবেন?
আমাদের ছোট পরিবার। আমি, মা আর বাবা। বাবা ছাপাখানায় কাজ করতেন। এখন বাড়িতে বসে গিয়েছেন। খুব সামান্য বেতন পেতেন বাবা। আমিও বেকার। কী ভাবে আছি, ভগবান জানেন! বাকি দিনগুলো কী ভাবে কাটাব, কে জানে? একমুঠো খাবার জোগাড়েরও কোনও রাস্তা খোলা নেই।
মুখ্যমন্ত্রী যদি দয়া করে সাহায্য করেন, খুব উপকৃত হই। না হলে না খেয়েই মনে হয় মরে যেতে হবে।
বিমল ওঁরাও, গ্রাম: দ্বীপচর, ওয়ার্ড নম্বর ১৫, পোস্ট অফিস ও থানা আলিপুরদুয়ার, পিন- ৭৩৬১২১
চিঠি-৬)অনলাইনেও আর খাবার মিলছে না আটলান্টায়
প্রায় দু‘বছর কলকাতা থেকে আটলান্টায় এসেছি কাজের সূত্রে। আমি যে অ্যাপার্টমেন্টে থাকি সেখানে ৯০ শতাংশ পরিবারই ভারতীয়। সাজানোগোছানো একটা শহর। এই সময়টা এখানে বসন্ত।
শেষ বাইরে বেরিয়েছিলাম ১৫ দিন আগে বাজার করার জন্য। তখনই টয়লেট পেপার, হ্যান্ড সানিটাইজারে টান পড়েছিল। এখানকার দোকানে তেমন একটা সব্জি পাওয়া যায় না। তবে যেগুলো পাওয়া যায় তার মধ্যে বাঁধাকপি, ফুল কপি, গাজর, বেগুন আমরা খেয়ে থাকি। দুধ, রুটি, মাখন, ডিম, মাংস, হিমায়িত মাছ পাওয়া যাচ্ছে, যা দিয়ে খিদে মেটানো যায়। এখন যা অনলাইনে পাওয়া যায় তাই অর্ডার দিচ্ছি। আর বাইরে যাচ্ছি না। তবে ভারতীয় ও হালাল দোকানগুলি অনলাইনে ডেলিভারি দিচ্ছে না। তাই কচি পাঁঠা, ডাল, দেশীয় সব্জি পাওয়া যাচ্ছে না।
আমেরিকাতে রোজ যে ভাবে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে তা দেখে ভয় হচ্ছে। এখন কমিউনিটির রাস্তায় মানুষজন তেমন একটা বেরোন না। দু’-এক জন বিকেলে হাঁটতে বেরোন। তবে তাঁরাও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখেন। শেষ অফিস গিয়েছিলাম গত ১১ মার্চে। পরে জানতে পারি আমারই এক সহকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আপাতত বাড়ি থেকেই অফিসের কাজ করছি।
জানুয়ারিতে স্ত্রী ও ছোট্ট মেয়েকে ভারতে রেখে এসেছিলাম। বাড়িতে বাবা, মা আছেন। এত দ্রুত দেশে ফেরার সব রাস্তা বন্ধ হল যে ফিরতে পারলাম না। এখন বাড়ির জন্য মন খারাপ করছে। ভয়ও লাগছে খুব। ভারতের মতো এত জনবহুল দেশে যদি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তা হলে দাবানলের মতো সব ধ্বংস হয়ে যাবে।
সরকারের উচিত, ঘরে ঘরে খাবার, কাঁচামাল পৌঁছে দেওয়া। তাতে বোধ হয় সংক্রমণ একটু কমবে।
সৌরভ রায়, আটলান্টা, জর্জিয়া, আমেরিকা, ফোনঃ +১ ৮৪৮২২৮০৭১৭
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy