লকডাউনের মধ্যেও জাকার্তায় চলছে অল্প কিছু যানবাহন।
আমি মেদিনীপুর শহরের ছেলে। গত ১০ বছর ধরে কাজের সূত্রে এই জাকার্তায় আছি। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী। আমরা সেন্ট্রাল জাকার্তায় থাকি। গত দু’বছর ধরে আমি নিজের সংস্থা খুলেছি, যেখানে আমি পাম অয়েল পরিদর্শনের কাজ করি। গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে জাকার্তাতে স্কুল-কলেজ-অফিস সব বন্ধ। এমনকি সমস্ত বিলাসিতার জায়গা এবং আনন্দ-উল্লাসের জায়গা সব বন্ধ আছে। তবে গত ১০ এপ্রিল থেকে সরকার লকডাউন শুরু করেছে। আমার মেয়ে ক্লাস ফাইভে পড়ে। গত এক মাস ধরে অনলাইনে স্কুল করছে। আর স্ত্রী অনলাইনে ভারতনাট্যম শেখাচ্ছে। তবে রাস্তাঘাট দেখে একদম মনেই হবে না যে, এখানে করোনাভাইরাসের সে ভাবে কোনও প্রভাব আছে। আক্রান্তের সংখ্যা এখানে খুবই নগণ্য। কিন্তু মৃত্যুর হার সব সময় ১০ শতাংশের বেশি।
সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার, গত মার্চ মাসে শুধু ডাক্তারই মারা গেছেন ২৪ জন। পয়লা বৈশাখে আমরা সমস্ত ধরনের বাঙালি রীতিনীতি উদযাপন করে থাকি আমাদের জাকার্তা বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে। কিন্তু গত দু’মাস ধরে সমস্ত উৎসব মুলতুবি রাখা হয়েছে।
কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হল, যেখানে মৃত্যুর হার সব সময় ১০ শতাংশের বেশি, তার পরেও এখানকার সরকার পুরোপুরি লকডাউন করেনি। এরা কেন এত উদাসীন। অবশ্য ইন্দোনেশিয়ানদের চরিত্র এমনই। এরা কোনও কিছুকে সিরিয়াসলি নেয় না। এখানকার লোকেরা সাধারণত খুব সহজ-সরল সাদাসিধে হয়। এখানকার সমাজের একটা বড় অংশ দিন আনা দিন খাওয়া শ্রেণির। তাঁদের কথা মাথায় রেখেই এখানকার সরকার লকডাউন করতে পারছে না। এঁরা আগামিকালের চিন্তা ভাবনা করে না। কালকের কথা ভেবে ‘আজ’-কে নষ্ট করে নাI আমরা ভারতীয়রা অবশ্য এর উল্টোটাই ভাবি।
আরও পড়ুন: লকডাউন উঠলেই বিদেশে আটকে পড়াদের ফেরানো হবে, প্রস্তুতি কেন্দ্রের
পরিবহণ ব্যবস্থা এখানে পুরোপুরি খোলা। পুলিশ রাস্তায় শুধু মানুষ মাস্ক পরেছে কিনা চেক করছে, আর সঙ্গে সোশ্যাল ডিসটেন্স মেনটেন করা হচ্ছেI লকডাউন বলতে শুধু এটুকুই মানা হচ্ছেI আমরা যাঁরা ভারতীয় আছি, তাঁরা কিন্তু গত এক মাস ধরে ঘরেই থাকছি। অফিসের কাজ সমলাচ্ছি ঘর থেকেই। আমাদের কমপ্লেক্সে অধিকাংশ ভারতীয় থাকেন। ফলে একটা বড় ভারতীয় মুদিখানা দোকার আর তিনটে ভারতীয় রেস্টুরেন্ট খোলাI ফলে আমাদের দৈনন্দিন জিনিস পেতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে নাI তবে কমপ্লেক্সের অন্যান্য সুযোগ সুবিধা যেমন জিম সুইমিং পুল ওয়াকিং ট্রাক প্লে এরিয়া সব বন্ধ। গত এক মাস ধরে কোন বাচ্চাকে নিচে খেলতে গেছে দেখিনি।
আমরা ভারতীয়রা ইন্দোনেশিয়ান লকডাউন এর নিয়মকানুন এর থেকে ইন্ডিয়ান লকডাউন এর রুলস রেগুলেশন বেশি ফলো করছি। লিফটের মধ্যে টুথপিক রাখা আছে যাতে লিফটের বাটন হাত দিয়ে না টিপতে হয়। প্রতিটি লবিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা আছে। বাইরের সমস্ত লোকের প্রবেশ নিষেধ। এমনকি, দুধওয়লাও বালা লবিতে দুধ রেখে চলে যায়।
আরও পড়ুন: চিন থেকে বিশেষ বিমানে কলকাতায় করোনা মোকাবিলায় এল ১০ টন সুরক্ষা সামগ্রী
যাই হোক, কবে আবার আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী ফিরে পাব, সেই আশায় বাড়িতে বসে করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছি। জানি না, ভবিষ্যৎটা আবার অনলাইন হয়ে যাবে কি নাI করোনা যা শেখাচ্ছে, তা এই এত বছরের জীবনে কোনদিন শিখিনি। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাইকে একদম সেম সাইজ বানিয়ে দিয়েছে।
অভিজিৎ মহাপাত্র
জাকার্তা ইন্দোনেশিয়া
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy