লকডাউনের স্টুটগার্টকে দেখে চেনা দায়! ছবি- লেখিকা।
আমার স্বামী কর্মসূত্রে জার্মানির স্টুটগার্ট শহরের বাসিন্দা। দীর্ঘ এক বছর ধরে ভিসার অনুমতির নানা নিয়ম পালন করে অবশেষে যখন আমি ও আমার দেড় বছরের ছেলে তার বাবাকে আর আমি আমার স্বামীকে দেখার জন্য প্লেনে উঠলাম, তখনও জানতাম না যে কী অবস্থার মধ্যে আমরা পড়তে চলেছি!
প্রথম দিকে সব কিছু স্বাভাবিকই ছিল। সঙ্গে ছিল প্রচন্ড ঠাণ্ডা, বৃষ্টি ও বরফ। এটাই ইউরোপীয় মহাদেশের শীতের চরিত্র। কিছু দিন চলার পর প্রথম করোনাভাইরাসের কথা ফেসবুকের মাধ্যমে শুনি ও দেখি। তার পর ‘হু’-র একটি প্রতিবেদনে চিনের খবর জানতে পারি। মহামারীর কথা ইতিহাসে পড়েছিলাম। আমাদের প্রজন্মকে কোনও দিন তার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।
প্রথম দিকে কিছু দিন সব কিছু পেলেও আস্তে আস্তে অনেক কিছুই দোকান থেকে উধাও হতে শুরু করল। মাস্ক নেই, স্যানিটাইজার নেই, এমনকী হাত ধোওয়ার সাবানও নেই। এই প্রথম দেখলাম লোকজন যত বেশি খাবারদাবার কিনছেন, তার চেয়ে বেশি কিনছেন টয়লেট পেপার। তার ফলে, বাজার থেকে সেটাও উধাও হয়ে গেল কিছু দিন পর। যদিও জার্মানির সরকার বলেছিল, সব জিনিসপত্রই দোকানে পাওয়া যাবে। কিন্তু সবাই বাইরে বেরনোর ভয়ে বেশি বেশি করে জিনিস কিনে ঘরে মজুত করা শুরু করলেন। আমরাও সেই দলেই ভিড়ে গেলাম।
প্রায় দেড় মাস ধরে আমরা গৃহবন্দি। দেশে ফেরার কথা ছিল, উড়ান বন্ধ থাকায় সে রাস্তাও বন্ধ। হোয়াটসঅ্যাপ ও ভিডিও কলের মাধ্যমে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে অবশ্য। এই ভাবে কত দিন চলবে জানা নেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা আমার ছেলেকে নিয়ে। সে আর কোনও মতেই ঘরে থাকতে চায় না। আর সে এতটাই ছোট যে তাকে কিছু বোঝানোও সম্ভব নয়।
জনমানবহীন হয়েই কি প্রকৃতি আরও সুন্দর হয়ে উঠল স্টুটগার্টে? ছবি-লেখিকা।
এর আগেও আমি ইউরোপ সফরে এসেছি। কিন্তু এই রকম প্রাণবন্তহীন ইউরোপ আগে কখনও দেখিনি। নিত্যদিনের কাজের সঙ্গে রোজ ঘুম থেকে ওঠা ও ঘুমোতে যাওয়ার আগে ওয়ার্ল্ড ও মিটার দেখাটা যেন অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আগে খুব আতঙ্ক বোধ করতাম, এখন যেন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। এখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খুব উন্নত। তাই খুব সুন্দর ভাবে এরা এই অবস্থার মোকাবিলা করছে। সেই অর্থে, এখানে লকডাউন কিছু রিজিয়নে ছাড়া অন্য কোথাও হয়নি। একটা কোথাও তাল কেটেছিল ঠিকই, কিন্তু সবারই এখানকার সরকারের প্রতি আস্থা ছিল বা এখনও তা আছে। একটা সুন্দর ও স্বাভাবিক সহাবস্থান দুই পক্ষের মধ্যে। পার্কগুলোর গাছ এখন শীতের ধূসরতা থেকে বসন্তের সবুজে নিজেদের পরিবর্তন করছে। তা ঘরে বসে দেখা ছাড়া আর অন্য কোনও উপায় নেই। সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের জন্য সপ্তাহে এক দিন বাজার করতে হচ্ছে। তা-ও যতটা সম্ভব ভোরে, যাতে বেশি লোকজনের সংস্পর্শে আসতে না হয়। শীত এখানে গিয়েও যায় না। তাই বাইরে বেরতে হলে গরম জামা মাস্ট! আর এখন তার সঙ্গে জুড়েছে মাস্ক ও গ্লাভস।
আরও পড়ুন- কোন জেলায় করোনা আক্রান্ত কত, মৃত কত, তালিকা দিল রাজ্য সরকার
আরও পড়ুন- কেন্দ্রীয় সহায়তা চায় তৃণমূল, বিজেপি রাজ্যে
এই মুহূর্তে জার্মানিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৬৫ হাজার ৬৬৪। এঁদের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৬০০ জন।
করোনা আক্রান্তদের সুস্থ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশের থেকে অনেকটাই এগিয়ে জার্মানি। ঠিকই, সময় লাগবে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে। কিন্তু ধৈর্য্য আমাদের রাখতে হবেই। সময় পরিবর্তন হবেই।
সোহিনী চক্রবর্তী, স্টুটগার্ট, জার্মানি।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy