লকডাউনের আদেশের বদলে আমেরিকায় রয়েছে বাড়িতে থাকার অনুরোধ।
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ১৮ মাইল দূরে ফেয়ার ফ্যাক্স শহরে থাকি আমরা। মার্চের ১৩ তারিখ থেকে আমাদের লকডাউন। তবে এখানে লকডাউন শব্দটা ব্যবহার করা হয় না। আমেরিকার জন্মলগ্ন থেকেই ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং সরকারি শাসনের দ্বন্দ্ব চলছে। তাই, আমাদের লকডাউনের আদেশের বদলে রয়েছে বাড়িতে থাকার অনুরোধ। কিন্তু ২৫০ মাইল দূরে নিউ ইয়র্কয়ের ভয়ানক অবস্থা দেখে সেই অনুরোধেই কাজ হয়েছে।
করোনা-পর্বে এখানে কিছু নতুন শব্দের ব্যাপক চর্চা চলছে। প্রথমে টয়লেট পেপার, তার পর অনলাইন গ্রসারি সরবরাহ এবং জুম ভিডিও মিটিং।
মার্চের শুরু থেকেই অশনিসঙ্কেত অনুভব করে সব সুপারমার্কেটে চূড়ান্ত ভিড় শুরু হয়ে গিয়েছিল। ভারতীয় দোকান থেকে উধাও হচ্ছিল চাল, ডাল আর আটা। মার্কিন দোকানে অদ্ভুত ভাবে সব থেকে চাহিদা বাড়ল টয়লেট পেপারের। গত সপ্তাহেও ভারতীয় দোকানে খালি তাক দেখে এলাম। এখন, প্রত্যেক সুপারমার্কেটে ঢোকার আগে লম্বা লাইন। সামাজিক দূরত্ব বা সোশ্যাল ডিসটেন্সিং বজায় রাখার জন্য ভিতরে কম লোক ঢোকানো হচ্ছে। তাই, এখন রমরমা হচ্ছে অনলাইন বাজার সরবরাহ ব্যবস্থাগুলোর। আগে একই দিনে সরবরাহ হত। আর এখন একটা স্লট পেলেই লটারি জেতার আনন্দ হয়। এখন যদি সেই মহা মূল্যবান ডেলিভারি স্লট পাওয়া যায়, তা হলে আনাজপত্র আসবে মোটামুটি এক-দেড় সপ্তাহ পরে। তবু, সেটাই একটা বিরাট প্রাপ্তি। এখানে রেস্তরাঁর চালানোর জন্য ফুড অ্যাপের ব্যবসায় খুব ব্যস্ততা চলছে। সব রকম আনাজ আর রেস্তরাঁর খাবারের সরবরাহ ‘নো কন্টাক্ট’ করা হচ্ছে। বাড়ির দরজার বাইরে আনাজপত্র রেখে যাচ্ছেন ডেলিভারি বয়রা।
আরও পড়ুন: লকডাউনের সময় রোজগার হারিয়েছি, সঞ্চয়ও শেষ, সংসার চলবে কী করে?
যেখানে সম্ভব হচ্ছে, এক সপ্তাহের ট্রেনিং দিয়ে বাড়ি থেকে কাজ করার ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিল মার্চের শেষ নাগাদ। তাই, করোনার নতুন সুপারস্টার হল জুম ভিডিয়ো প্ল্যাটফর্ম। বেশির ভাগ অফিসের মিটিং আর স্কুল-কলেজের পড়াশোনা চলছে জুম-এর মাধ্যমে। এখানে পাবলিক স্কুলে ক্লাস শেষ হয় জুন মাসে। কিন্তু এ বার আর ক্লাস হবে না। তাই বিনা পরীক্ষায় সবাই পরের ক্লাসে উঠে যাবে। বেশির ভাগ ঘরে এখন একই চিত্র। সব সদস্য নিজের কম্পিউটারের সামনে, নিজের কাজে মগ্ন। সব রকম সামাজিকতা এখন জুম আর হোয়াট্সঅ্যাপের মাধ্যমে হচ্ছে। জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, রোজকার আড্ডা— হ্যাপি আওয়ার পর্যন্ত!
আরও পড়ুন: ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, পৃথিবী যেন ফের স্বাভাবিক হয়
তবে, সবকিছুই যে স্বচ্ছন্দে চলছে তা নয়। খুব কম লোকেরই কাজ বাড়ি থেকে সম্ভব হয়। তাই, বাকি সব দেশের মতো এখানেও সমস্যা চূড়ান্ত। কাজে ছাঁটাই এখন রোজকার খবর। বেকারভাতার জন্য বিশাল আবেদনের লাইন।
আমাদের মত প্রবাসীদের মন পড়ে থাকে কলকাতায়। বাড়ির সবাই, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের খবর আদানপ্রদান চলতে থাকে। মনে খালি প্রশ্ন আসে, কবে যেতে পারব দেশে? বিমান চলাচল কবে শুরু হবে? কবে আসবে মার্চের আগেকার জীবন? ইচ্ছে মতো বাড়ির বাইরে যাওয়া, নির্ভয়ে বাজারে যাওয়া, অফিস বা স্কুলে ফেরত যাওয়ার আনন্দ। এই সব নিতান্ত সাধারণ ইচ্ছেগুলো ঘুরে বেড়ায় মনের মাঝে।
বৈশালী রায়, ফেয়ার ফ্যাক্স, ভার্জিনিয়া, আমেরিকা
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy