বাড়ি না ফিরতে পারলে কী হবে ওঁদের? -পিটিআইয়ের ছবি।
চিঠি-১: খাওয়ার পয়সাও নেই, গুয়াহাটি থেকে ফেরান আমাদের
ঘরবাড়ি বানাতে আমরা এক মাস আগে এসেছিলাম গুয়াহাটিতে। রয়েছি জিএমসিএইচ হাসপাতালের কাছে (পিন- ৭৮১০০৭)। এখন সব কাজ বন্ধ। এখানে আটকে পড়েছি। টাকাপয়সা প্রায় শেষ। খাওয়ার পয়সাও নেই। আমাদের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, আমাদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করুন। আমাদের বার্তা যাতে প্রধানমন্ত্রীর দফতের পৌঁছয়, তাই এই চিঠি।
অভিজিত মান্না, মোবাইল- ৮৫৮৪৮৮৮১৮৪
চিঠি-২: হায়দরাবাদে আটকে রয়েছি, এগরায় ফেরান
আমার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরা থানার খুরুটিয়া গ্ৰামে। আমি কর্মসূত্রে হায়দরাবাদের একটি শপিং মলে কাজ করি। সারা রাজ্যে লকডাউনের জন্য শপিং মল বন্ধ রয়েছে বর্তমানে। তাই আমি একটি হস্টেলে আটকে রয়েছি। পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা নেই। হস্টেল ভাড়া দেওয়ার মতো টাকাও নেই। তাই প্রশাসনের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, বাড়ি ফেরার জন্য কিছু ব্যবস্থা করুন। আমি বাড়ি যেতে চাই।
নাড়ুগোপাল গিরি, যোগাযোগ- ৬২৯৬৮৩১৮৯৩, ইমেল- narugopalgiri2000@gmail.com
চিঠি-৩: অনাহারে আছি বেনারসে, বোলপুরে ফেরান
আমার বাড়ি বীরভূমে বোলপুরের কাছে বেলুটি গ্রামে। আমি কর্মসূত্রে হোটেল কর্মচারী। বর্তমানে হোটেল বন্ধ। এক মাস ধরে আমি বেনারসে আটকে আছি। ১০ দিন ধরে আমি প্রায় অনাহারে আছি। দয়া করে আমার বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করলে বাধিত থাকব।
অমিত কুমার সাহা, বেলুটি, বীরভূম, মোবাইল- ৮৯১৮৪৭৯১৮৯ এবং ৮৯৬৭৬১৫৩০৩
চিঠি-৪: ১৭ জন আটকে রয়েছেন বেনারসে, ফেরান ওঁদের
আমার বাবা-সহ ১৭ জন বেনারসে আটকে আছেন। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আপনারা যদি ফেরার ব্যবস্থা করেন তা হলে খুব ভাল হয়। ওঁরা কিছু করতে পারছেন না।
সৌমিতা বিশ্বাস, ইমেল- soumita34b@gmail.com
চিঠি-৫: খাবার জল, গ্যাস পাচ্ছি না ভেলোরে, বাঁকুড়ায় ফেরান
ভেলোরে সিএমসি-তে এসেছিলাম চিকিৎসার জন্য গত ১৭ মার্চ। মায়ের হার্টের সমস্যা ও আমার ডায়াবেটিসের সমস্যার জন্য। সিএমসি-র মেন গেটের সামনেই আমাদের হোটেল। গত ২৫ মার্চে ফেরার ট্রেন লকডাউনের জন্য আর ছাড়েনি। লকডাউনের জন্য খাবারদাবার পাওয়া খুব দুস্কর হয়ে পড়েছে। খাবারের জল এবং গ্যাস পাওয়াও দুস্কর হয়ে পড়েছে। জীবনধারণ করাই সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাঁকুড়ায় বাড়িতে ৭৮ বছরের বাবা একা চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। দয়া করে আমাদের ফেরার ব্যবস্থা করুন।
কৌশিক পাল, মোবাইল-৭৬০২২৯৬৬৪৫, ইমেল- rkaushik.pal@gmail.com
চিঠি-৬: থানাকে বলেও কাজ হয়নি, আমাকে দুর্গাপুরের বাড়িতে ফেরান
দমদম স্টেশনের পাশে মেসে থাকি। খুব অসুবিধায় আছি। দুর্গাপুরে আছেন মা, স্ত্রী, আর একটি বাচ্চা। এখানে স্থানীয় থানাকেও জানিয়েছি। কেউ কোনও সাহায্য করছেন না। না খেতে পেয়ে আমি এ বার মরে যাব। আমার পরিবারও মরে যাবে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, ফেরার একটা ব্যবস্থা করে দিন আমার।
সুদীপ দে, ইমেল- ind650@gmail.com
চিঠি-৭: জল, খাবারও পাচ্ছি না, চেন্নাই থেকে ফেরান আমাকে
আমার বাড়ি কলকাতায়। আইটি সেক্টরে কাজ করি চেন্নাইয়ে। লকডাউন ঘোষণার পর থেকই এখানে আটকে পড়েছি। জল, খাবারদাবার কিছুই পাচ্ছি না। আমার বৃদ্ধ মা, বাবা কলকাতায়। ওঁরা অসুস্থ। কেউই দেখার নেই ওঁদের। আমাকে কলকাতায় ফেরানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।
শুভঙ্কর বসু, যোগাযোগ- ৯১২৩৫০৩৫৭১, ইমেল- subhankar89.saheb@gmail.com
চিঠি-৮: নেটে ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছি অসুস্থতা নিয়েও
করোনা নিয়ে ২০২০ সালের শুরুতে ভারতে বিশেষ প্রভাব দেখা যায়নি। আর পাঁচটা সাধারণ নাগরিকদের মতো চেনা ছন্দে দিন কাটছিল। আমি পশ্চিমবঙ্গের সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিযুক্ত এবং আমার স্বামী কর্মসূত্রে দিল্লি নিবাসী। সময়সুযোগ মতো ছুটিতে দেখা হওয়া দিনগুলো আমার কাছে এক মুঠো অক্সিজেন। দিল্লি থেকে ১ জানুয়ারি ফেরার সময় ঠিক করি মার্চ মাসে আবার দিল্লি যাব। বেশ কয়েক বছর ধরে পায়ের সমস্যায় ভুগছি। দিল্লিতে গত এক বছর ধরে ডাক্তার দেখাচ্ছি। এখন অবস্থা কিছুটা উন্নতির পথে। যাই হোক সব ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু হঠাৎ মাধ্যমিকের খাতা দেখার চিঠি আসায় ৮ মার্চ দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসি। কারণ, খাতা দেখার সময়কালের মধ্যে অন্য কোথাও যাওয়া অসুবিধা হতে পারে এবং খাতা দেখা নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা প্রয়োজন। কিন্তু এর মধ্যে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে করোনার প্রবল ঢেউ ভারতের বুকে আছড়ে পড়ে। বিদ্যালয় যাওয়া-আসার মাঝে নিস্তরঙ্গ জীবনে কোথাও যেন প্রবল ঘূর্ণি তৈরি হয়। এর মধ্যে একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় বুঝলাম আমরা কি ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে চলেছি। এর মধ্যে টিভি চ্যানেলে দেখলাম হ্যান্ডওয়াশ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাই কোথায়? অগত্যা স্কুলে ১৬ মার্চ স্যানিটাইজার তৈরি করলাম কয়েকটি, আমার সহকর্মীদের জন্য। এর পর গৃহবন্দি হলাম ও প্রতি দিন খবর দেখতে লাগলাম। পশ্চিমবঙ্গে এখনও যে সব ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পারলাম তাঁরা বেশির ভাগই ১০-২০ মার্চের মধ্যে অন্য দেশ বা রাজ্য থেকে ফিরেছেন বা ওই রকম কারও সংস্পর্শে এসেছেন। আজ এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বার বার মনে হচ্ছে হয়তো আমি ওই দলেরই এক জন হতাম, কারণ দিল্লি থেকে ১৫ তারিখ ফ্লাইট ছিল ফেরার। আমার দ্বারা অজান্তে যে কত জন যে সংক্রামিত হতেন! অদৃষ্টের অঙ্গুলি নির্দেশ তা হতে দেয়নি। ডাক্তার দেখানোর দিন পেরিয়ে যাওয়ায় পায়ের যন্ত্রণা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন বাড়িতে থেকে নেটের সাহায্যে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভের উপায় বের করার চেষ্টা করছি। হয়তো লিগামেন্টের আঘাতের যন্ত্রণা বেশ কষ্ট দিচ্ছে এবং আগামী দিনগুলো কী ভাবে কাটবে এই পরিস্থিতিতে তা জানা নেই। তবে অদৃষ্টের এই অদ্ভুত নির্দেশ আমাকে ও আমার পরিবারকে রক্ষা করেছে। এখন শরীর মাঝে মাঝে ঠিক থাকলে ছাত্রীদের নেটের সাহায্যে পড়ায় সাহায্য করছি, ভবিষ্যতে লকডাউন উঠলে আবার আমাকে দীর্ঘ চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, হয়তো স্কুল বন্ধ হবে আমার। স্কুল খোলার কিছু দিনের মধ্যে আমার ছাত্রীদের থেকে সাময়িক দূরে সরে যেতে হবে আমার চিকিৎসার জন্য। তাই যতটা পারা যায় ওদের সাহায্য করা। তত দিন পর্যন্ত সচেতন নাগরিক হিসেবে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যতটুকু লড়ার সেই লড়াইটুকু করব আর অপেক্ষা করব নতুন দিনের, যে দিন ভারত করোনা-মুক্ত হবে।
সংহিতা ঘোষাল, শিক্ষিকা, হাওড়া
চিঠি-৯: মেয়ে অনেক দিন দেখতে পাচ্ছে না, ওকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে দিন
আমার স্ত্রী, ৭ বছরের মেয়ে বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরে শ্বশুর বাড়িতে আটকে রয়েছেন। আমি থাকি কলকাতার নরেন্দ্রপুরের সুগম সবুজে। আমি এখন বাড়ি থেকে কাজ করছি। ঘরবন্দি হয়ে রয়েছি গত ২৭ দিনেরও বেশি। সুস্থ আছি, আমার পরিবারও। কিন্তু আমাকে অনেক দিন না দেখতে পাওয়ায় আমার মেয়ে খুব কষ্টে আছে। লকডাউনের জন্য ওর স্কুলও হচ্ছে না। বর্ধমানে থাকার ফলে অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগও পাচ্ছে না। ওর বইপত্র, জামাকাপড়, ওষুধ সব আমার নরেন্দ্রপুরের ফ্ল্যাটে পড়ে রয়েছে।
আমাকে গাড়ি চালিয়ে পাণ্ডবেশ্বের গিয়ে ওদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হোক। আমি নিজেই চালাব গাড়ি। কোনও ড্রাইভার লাগবে না।
কৌলিন পাল, ইমেল- koulin.pal@gmail.com
চিঠি-১০: হোটেলের ভাড়া মেটাতে পারছি না, আমাকে জলপাইগুড়ির বাড়িতে ফেরান
ভেলোরে এসেছিলাম চিকিৎসার জন্য। আমি কার্ডিয়াক ও গ্যাস্ট্রিকের রোগী। এখন ভেলোরের একটা হোটেলে আটকে রয়েছি। টাকাপয়সা সব শেষ। হোটেলের ভাড়া মেটানোরও ক্ষমতা নেই আমার। খাবারও কিনে খেতে পারছি না। আমাকে বাঁচান। আমার বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করুন।
নিতাই দাস, মোবাইল- ৮৯৭২৩২১৮০৬, জেলা- জলপাইগুড়ি, থানা- ময়নাগুড়ি
চিঠি-১১: রয়েছি অনাহারে উত্তরপ্রদেশে, লালগোলার বাড়িতে ফিরতে চাই
আমরা উত্তরপ্রদেশের ভাদহি জেলার সুরিয়ামা থানা এলাকায় আছি গত ২২ মার্চ থেকে। আমরা ৬০ জন লোক আছি এখানে। আমাদের সকলের ঠিকানা মুর্শিদাবাদ লালগোলা। একটাই অনুরোধ, আমাদের বাড়ি পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। না হলে আমরা না খেতে পেয়ে মরে যাব।
সুহানা ইসলাম, ইমেল- mdislampearul@gmail.com
চিঠি-১২: ওড়িশায় আটকে আছি, মেদিনীপুরের বাড়িতে ফেরান
আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করছিলাম। লকডাউনের জন্য বাড়ি ফিরতে পারছি না। এখন ওড়িশার জাজপুরে কেওনঝর রোডে আছি। আমার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি-৩-এর মারিশদা থানা এলাকায়। আমাকে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করুন।
সঞ্জয় পাত্র, ইমেল- sanjaypatra.1661979@gmail.com
চিঠি-১৩: রাজমিস্ত্রির কাজে আটকে চেন্নাইয়ে, বাড়ি না ফিরতে পারলে মরে যাব
আমার বাড়ি বীরভূমের নানুরে। বর্তমানে চেন্নাইয়ে পরাপ্পায় আছি। লকডাউনের ফলে বাড়ি যেতে পারছি না। বাড়িতে বাবা, মা ও স্ত্রী আছেন। বাবা হার্টের রোগী। ওপেন সার্জারি হয়েছে, মা প্যারালাইজড। স্ত্রী আট মাসের গর্ভবতী। বাবার ওষুধ শেষ হয়ে গিয়েছে। মাসে মাসে কলকাতায় যান চেক-আপের জন্য, সেটাও হচ্ছে না। বাবার কাছেও পয়সা নেই। আমরা এখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করি। এখানে ৩০ জন আটকে আছি, বাড়ি ফিরতে চাই। খাবারও টাকা নেই। আনাদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করুন।
আব্দুল সুরজ, যোগাযোগ জামাল জামাল, ইমেল- jj4172759@gmail.com
চিঠি-১৪: না খেয়ে মারা যাব, চেন্নাই থেকে ফেরান আমাকে
আমি বাঁকুড়া জেলার ছাতনা থানার শিউলিপাহাড়ির (পিন- ৭২২১৩৭) বাসিন্দা। আমরা চেন্নাইয়ে কাজ করি কিন্তু এখন বেহাল অবস্থা, টাকাও হাতে নেই। যা ছিল, সব শেষ হয়ে গিয়েছে। টিকিট করা ছিল ১৫ এপ্রিলের। কিন্তূ শুনছি ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কিছুই চলবে না। এখন আমরা যদি বাড়ি না ফিরতে পারি, তা হলে তো না খেতে পেয়ে মারা যাব। আমরাও চাই লকডাউন চালু থাকুক, কিন্তূ আমাদের অবস্থাটাও দেখুন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এটাই অনুরোধ, আমাদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করুন। নয়তো আমরা না খেতে পেয়ে মারা যাব।
অনন্ত মণ্ডল, আর/৭ এমএমডিএ কলোনি, অরুমবাক্কম, চেন্নাই, তামিলনাড়ু- ৬০০১০৬, মোবাইল- ৭৫৮৫৯৬২৬৪৩, ইমেল- anantamondal464@gmail.com
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy