ফাইল চিত্র।
‘কী করিতে হইবে’ (২৬-৪) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে সমাজতন্ত্রকে ‘অগণতান্ত্রিক কানাগলি’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সফল হয়েছিল ১৯১৭ সালে। এই সফলতা সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের কাছে প্রেরণা সৃষ্টি করেছিল ও আশার আলো জ্বালিয়েছিল। যার প্রভাব থেকে আমাদের দেশও মুক্ত ছিল না। স্তালিন-বিরোধিতার মাধ্যমে আসলে এই সম্পাদকীয়তে সমাজতন্ত্রের পথপ্রদর্শক লেনিনকেই অপমান করা হয়েছে সুকৌশলে।
রাশিয়ার মাটিতে এই সমাজতন্ত্রই প্রমাণ করেছে যে, এই সমাজই প্রকৃত গণতন্ত্রের মূল সূত্র, অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষের স্বার্থ বা অধিকারকেই রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। লেনিনেরই শিক্ষায় শিক্ষিত এবং তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি স্তালিন এই সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে রক্ষার জন্য, সারা পৃথিবীর ত্রাস ফ্যাসিস্ট শক্তি হিটলারকে পরাজিত করে মানবতাকে রক্ষা করেছিলেন। তিনিই রাশিয়াকে অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া দেশ থেকে দ্রুত উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছিলেন। সেখানে সমস্ত সাধারণ মানুষের খাওয়া, থাকা, পরা, চিকিৎসা, শিক্ষার পূর্ণ অধিকার ছিল— যা সারা বিশ্বের সমস্ত বড় মানুষকে আকর্ষণ করেছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রোম্যাঁ রলাঁ-র মতো মানুষরা রাশিয়াকে প্রশংসা না করে থাকতে পারেননি।
করোনা মোকাবিলায় আজ যেখানে প্রয়োজন সমস্ত দেশ, সংগঠন ও মানুষের পারস্পরিক সহযোগিতার, সেখানে গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী মূল শক্তি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, হু-র নির্ধারিত টাকা বন্ধের হুমকি দিচ্ছেন। আবার আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী মুখে যা-ই বলুন না কেন, তাঁদের গঠিত পার্লামেন্টারি কমিটি বন্ধ কলকারখানার শ্রমিকদের লকডাউনের সময় বেতন দেওয়ার বিষয়ে মালিকদের পক্ষেই দাঁড়িয়েছে। আর বিভিন্ন জায়গায় আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের করুণ অবস্থার বিষয়ে তো সবাই জানে। ১২ বছরের বাচ্চা শ্রমিক, অনাহারে ক্লান্তিতে বাড়ি ফেরার পথে হাঁটতে হাঁটতেই মারা যাচ্ছে। সরকারের মানুষের প্রতি দরদ ও দায়বদ্ধতা থাকলে কি এমন হতে পারত?
অথচ মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদে উদ্বুদ্ধ কিউবার মতো একটা ক্ষুদ্র দেশ করোনা মোকাবিলায় তাদের ডাক্তার দেশে দেশে পাঠিয়ে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছে। আর আমাদের মতো দেশে গণতন্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে এক প্রহসন, যেখানে সংবিধানে বাঁচার অধিকার থাকলেও, উপার্জনের উপায়ের সাংবিধানিক কোনও স্বীকৃতি নেই।
তপন মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-১৩
মুশকিলে পড়েছি
আমরা ১৩ জন পর্যটক গত ১৪ মার্চ একটি পর্যটন সংস্থার মাধ্যমে গুজরাতে বেড়াতে এসেছিলাম। সঙ্গে সংস্থার চার জন কর্মী রয়েছেন। ২৫ মার্চ আমাদের কলকাতা ফেরার উড়ানের টিকিট ছিল। কিন্তু ২৩ মার্চ আমদাবাদ আসার পথে জানলাম, পরের দিন মধ্যরাত থেকে অভ্যন্তরীণ উড়ান বন্ধ থাকবে। আমরা ২৪ মার্চ সন্ধ্যার উড়ানের টিকিট কাটলাম, কিন্তু আগের দিন রাতে বিমান-সংস্থা জানায়, ‘অপারেশনাল’ কারণে উড়ান বাতিল করা হয়েছে। সেই দিন থেকে আমরা আমদাবাদে হোটেলে আটকে রয়েছি।
সংস্থার কর্মীরা রান্না করে আমাদের নূন্যতম আহারের ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু ১৪ এপ্রিলের পর কড়াকড়ির ফলে জিনিসপত্র সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দুপুর একটা থেকে চারটে পর্যন্ত শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য দোকান-বাজার খোলা হচ্ছে। মহিলার সঙ্গে কোনও পুরুষ গেলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ কোনও কথাই শুনছে না।
আমরা আমাদের কথা আমাদের সাধ্যমতো গুজরাত ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন স্তরে ইমেল ও টুইটারের মাধ্যমে জানিয়েছি। ফোন করার চেষ্টা করেছি। এলাকার বিধায়ক ও সাংসদকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোথাও থেকে কোনও সাড়া পাইনি। এ দিকে হোটেলের বিল বাড়ছে। ন্যূনতম খাওয়া জোটানোও কঠিন হয়ে পড়েছে। এও জানাই, আমাদের সঙ্গে সত্তরোর্ধ্ব প্রবীণ ও ছ’বছরের শিশু রয়েছে।
অসীম কুমার ভট্টাচার্য
নৈহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
উৎসব?
চুঁচুড়া শহরের মুল সড়কপথগুলির থেকে কিছুটা ভেতরে অবস্থিত কলোনির বাসিন্দাদের কাছে লকডাউনের অন্য অর্থ। হুগলি চুঁচুড়া পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড-এ এমনই এক কলোনির বাসিন্দা আমি। তিন হাজারের অধিক মানুষের বাস এখানে। সামাজিক দূরত্ববিধির নিয়ম অনেক বাসিন্দার কাছে ‘বুঝতে পারছি কিন্তু মানতে পারছি না’ ধরনের।
সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মচারী থেকে খুচরো সবজি বিক্রেতা, রাজমিস্ত্রি— এমন বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্তরের মানুষের মিশ্রণ এই এলাকাগুলিতে। রোগের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিও সামাজিক স্তরবিন্যাসের কারণে স্বভাবতই ভিন্ন।
বাড়ির বাইরে না বেরোনোর সিদ্ধান্ত নেওয়া মানুষও রয়েছেন, আবার বিকেলে চা-দোকানে বসে আড্ডাতে না পেয়ে তাঁদের তিরস্কার করে চলেছেন একদল। বিকেলে মাঠে দল বেঁধে ফুটবল থেকে ধাপিতে বসে লুডো বা তাস— বাদ পড়ছে না কিছুই। নিত্য খেটে খাওয়া মানুষের কর্মহীনতা, পড়ুয়াদের ছুটি— সব মিলে পাড়ার আড্ডা সন্ধে পার করে চলছে রাত্রি পর্যন্ত। টিভি সিরিয়াল বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে, সন্ধের পর পাড়ার মাঠ হয়ে উঠছে গোটা পাড়ার ড্রয়িং রুম। হ্যান্ড স্পিকারে গানও বাজাছে একদল। কিছু বলতে গেলে, জিজ্ঞেস করলে রেগে উত্তর আসবে, “পাড়াতেই তো আছি।’’
পুলিশের ভয়? না, তা মোটেই নেই, এই ভেতরের কলোনিগুলিতে আসার সময় বা ইচ্ছে কোনও দিনই তাদের হয়ে ওঠে না , তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার থাকার বদলে সামাজিক নৈকট্য হয়ে উঠছে নিবিড় থেকে নিবিড়তর।
শমীক কুমার মুখোপাধ্যায়
কেওটা ষষ্ঠীতলা, হুগলি
বড় একা
আমি ৭৭, আমার স্ত্রী ৭০, দুজনেই ৩০/৩৫ বছর ধরে ইনসুলিন-নির্ভর ডায়াবিটিক, দুজনেরই রক্তের চাপ প্রবল, দুজনেই স্নায়ু রোগাক্রান্ত, হাত-পা কাঁপে, দুজনেরই চোখ অপারেশন করাতে হবে অবিলম্বে। বর্তমানে দুজনেই বয়সজনিত কারণে বদরাগি, তাই দাম্পত্য কলহ বেড়ে যাচ্ছে। রাস্তাঘাটে কেউ অনর্থক হর্ন বাজালেও মনে হয়, দিই লাঠি মেরে গাড়ির গায়ে।
মাস তিনেক হল কানেও শুনতে পাচ্ছি না ভাল, বছর দুই আগে আমার ডান হাঁটু পাল্টানো হয়েছে, লাঠি ছাড়া চলতে পারি না। অর্থাৎ আমায় বুড়ো, কালা, কানা, খোঁড়া, খ্যাপা ইত্যাদি বলে গালমন্দ করলে প্রতিবাদ করার উপায় নেই। গত কাল হঠাৎ কলের নল ফেটে যাবার কারণে জল তুলতে পারছি না। প্লাম্বার আসতে পারবে না বলে দিয়েছে। মনে সুখ নেই। শুধুই দুশ্চিন্তা।
ছেলে মেয়ে নাতি নাতনিরা সবাই বিদেশে থাকে, আমরা একা থাকি কলকাতার বাড়িতে। একই কারণে আমার বিদেশ-যোগাযোগ ঘন ঘন হয়। মাসখানেক আগেই আমার আমেরিকান নাতি নাতনি ছেলেরা আমার বাড়িতে এসেছিল। তাদের দেহে ভাইরাস যে ঘুমিয়ে ছিল না, সেটা জোর করে বলা যায় না।
আমার স্ত্রী মাত্র দু’মাস আগে ফুসফুস কিডনি ইত্যাদির সংক্রমণে আইসিইউ-তে ভর্তি ছিল, কোনও রকমে বেঁচে ফিরেছে। কারণে-অকারণে সব সময় আতঙ্কে মরছি। বারে বারে আমরা এ-ওর কপালে হাত দিয়ে দেখি, করোনার করুণা হল নাকি।
দাঁতের ব্যথাও হচ্ছে, কিন্তু ডাক্তারের কাছে যাওয়ার উপায় নেই। মাসখানেকের বেশি হল রান্নার বৌ, কাজের মেয়েকে ছুটি দিয়ে দিয়েছি করোনার কারণে। ঘরময় ময়লা। অনভ্যস্ত হাতে আমি সবজি কাটি, গিন্নি কোনও রকমে সেদ্ধ করে।
সহকর্মী ও সমবয়সী বন্ধুরা একে একে বিদায় নিচ্ছে। তাদের বাড়িতে ফোন করতে ভয় পাই। হয়তো শুনব কোনও দুঃসংবাদ। আমরা বড় একা।
অশোককুমার দাস
কলকাতা-৭৮
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy