সাইবার জালিয়াতির রাজধানী জামতাড়া বিষয়ে এই সংবাদপত্রে ১৬-১৯ জুলাই চার কিস্তির প্রতিবেদন পাঠ করে রাতের ঘুম উধাও। কষ্ট করে উপার্জিত সারা জীবনের সঞ্চয়, বা কারও চিকিৎসার জন্য চেয়ে-চিন্তে সংগৃহীত অর্থ কয়েক মিনিটের মধ্যে গায়েব হয়ে যাচ্ছে। রীতিমতো ট্রেনিং চালু রয়েছে জালিয়াতদের কাজে হাত পাকানোর জন্য। কী শৃঙ্খলাবোধ! যে কোনও পর্যায়ের প্রতিকূল পরিস্থিতি স্ব-বশে রাখার আত্মবিশ্বাস রাখে মাফিয়ারা। তাদের অপরাধ মোকাবিলা করার জন্য প্রশাসন যে সাইবার থানা বা অন্য ব্যবস্থা চালু করেছে, তার সীমাবদ্ধতার বৃত্তান্তে সাধারণ নাগরিকের উদ্বেগের পারদ চড়তে বাধ্য। ওটিপি না জানালেই প্রতারকদের যাবতীয় চেষ্টা ব্যর্থ— বিশিষ্ট পুলিশ-কর্তার এই আশ্বাসে আশ্বস্ত হওয়ার জায়গা কম। এই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, ওটিপি ছাড়াই নজরদারি চালানো সম্ভব এমন কোনও ‘অ্যাপ্লিকেশন’ মোবাইলে ডাউনলোড করিয়ে নিলেই জালিয়াতদের উদ্দেশ্য সফল। প্রতিরোধ ব্যবস্থা যে কত ঢাল-তরোয়ালহীন, দিব্যি মালুম হয় এই জালিয়াত চক্রের সাম্প্রতিক বাড়-বৃদ্ধিতে। জামতাড়া অনেকের নজরে চলে আসায় নতুন অপরাধ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে দেওঘর-গিরিডিতে। কঠোর ভাবে তাকে প্রতিরোধ না করলে আরও নতুন নতুন জায়গার নাম ঢুকবে তালিকায়।
এই জাতীয় বিপর্যয়ের কথা ব্যাঙ্কে জানালে তারা গ্রাহককে টোল-ফ্রি নম্বরে ফোন করে কার্ড বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়। এক জন গ্রাহকের হয়ে জরুরি কাজ কি বিকল্প পথে ব্যাঙ্কের পক্ষে করে দেওয়া একেবারেই অসম্ভব? সাইবার জালিয়াতির বিষয়টিকে অতি দ্রুত সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হোক, না হলে সাধারণ মানুষ শীঘ্রই আস্থা হারাবে প্রচলিত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায়।
বিশ্বনাথ পাকড়াশি, শ্রীরামপুর, হুগলি
অসাম্যের বহর
দেশে সুস্থায়ী উন্নয়নের (সাসটেনেবল ডেভলপমেন্ট) অগ্রগতি সংক্রান্ত ২০২৩-এর রিপোর্ট প্রকাশ করতে গিয়ে মোদী সরকারের নীতি আয়োগের সিইও বি ভি আর সুব্রহ্মণ্যম বলেছেন, দেশে আর্থিক অসাম্য উদ্বেগের কারণ (‘অসাম্য-উদ্বেগ নীতি আয়োগ রিপোর্টেও’, ১৩-৭)। এর সঙ্গে যে প্রশ্নটি উঠে আসে— নীতি আয়োগ কি এই উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো অসাম্য দূর করার কোনও নিদান সরকারকে দিয়েছে? না, তেমন কোনও নিদানের কথা তাদের প্রকাশিত উন্নয়নের রিপোর্টে নেই। তা হলে নীতি আয়োগের কাজ কী? পরিস্থিতির বিবরণ দেওয়া এবং তার বিবর্ণ চিত্র দেখে উদ্বিগ্ন হওয়া?
বহুজাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এ বছর মে-জুন মাসে ৫১ জন অর্থনীতিবিদকে ভারতের আর্থিক ভবিষ্যৎ বিষয়ে প্রশ্ন করে যে উত্তরগুলি পেয়েছে, তাতেই উপরের প্রশ্নগুলির উত্তর পাওয়া যেতে পারে৷ সংস্থার প্রশ্নের উত্তরে অর্থনীতির এই বিশেষজ্ঞদের বেশির ভাগই এ ব্যাপারে সহমত যে, আগামী দিনগুলিতে ভারতের অর্থনীতিতে আয়বৃদ্ধি দ্রুত গতিতে ঘটতে থাকবে। কিন্তু তাঁরা এ ব্যাপারেও সহমত যে, এই দ্রুত গতির আয়বৃদ্ধি সত্ত্বেও সমাজে যে আর্থিক বৈষম্য ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে তা কমবে না। বরং আগামী দিনগুলিতে তা আরও বাড়তে থাকবে। কেন দ্রুত আয়বৃদ্ধি সত্ত্বেও আর্থিক অসাম্য কমবে না? দিল্লি আইআইটি-র উন্নয়ন-অর্থনীতির অধ্যাপিকা রীতিকা খেরা তাঁর উত্তরে বলেছেন, অসাম্য এমন একটা বিষয় যা আপনাআপনি দূর হয়ে যায় না। তা দূর করার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতি ও পরিকল্পনা দরকার।
বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, নীতি আয়োগই হোক বা মন্ত্রিসভা, দেশ থেকে অসাম্য দূর করার কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই। তা হলে কী ধরনের নীতি তাঁরা নির্ধারণ করে চলেছেন? মার্চে প্যারিস স্কুল অব ইকনমিক্স-এর ‘ওয়ার্ল্ড ইনইকোয়ালিটি ল্যাব’-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে আর্থিক অসাম্য এখন ব্রিটিশ জমানার থেকেও বেশি। আর্থিক অসাম্য নিয়ে অক্সফ্যাম রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০২১-এর মধ্যে দেশে তৈরি ৪০ শতাংশের বেশি সম্পদ ধনীতম এক শতাংশ মানুষের কুক্ষিগত হয়েছে। দরিদ্রতম ৫০ শতাংশ মানুষের ভাগে জুটেছে সম্পদের মাত্র ৩ শতাংশ। এই তথ্য থেকে স্পষ্ট, বর্তমান অর্থনীতিতে আয়বৃদ্ধি যা ঘটছে, যাকে দ্রুততম আয়বৃদ্ধি বলা হচ্ছে, তা ঘটছে কেবল সমাজের মুষ্টিমেয় ধনীতম অংশের মানুষেরই। অর্থাৎ, যে নীতি নির্ধারণ এই আয়োগ বা কমিশনগুলি এবং মন্ত্রিসভা ও তাদের দফতরগুলি করে চলেছে, তা এই ধনীতম অংশটির মুনাফাবৃদ্ধি তথা আয়বৃদ্ধির দিকে লক্ষ্য রেখেই।
সম্প্রতি গৌতম আদানি বর্তমান সময়টিকে ভারতীয় অর্থনীতির সবচেয়ে ভাল সময় বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে, অর্থনীতির চলতি গতি বজায় থাকলে আগামী এক দশকে প্রতি ১২ থেকে ১৮ মাসে এক লক্ষ কোটি ডলার যুক্ত হবে ভারতীয় অর্থনীতিতে। আর ২০৫০ সালে ভারতীয় অর্থনীতি ৩০ লক্ষ কোটি ডলারে পৌঁছে যাবে।
অর্থনীতির এই বিপুল কলেবর বৃদ্ধির যে কথা বলা হচ্ছে, তা কি সাধারণ মানুষের রোজগার, কেনাকাটা, ভোগব্যয় বাড়ার জন্য হচ্ছে? একেবারেই তা নয়। বরং সাধারণ মানুষের ভোগব্যয় কমছে। ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশে প্রায় ১০০ কোটি কর্মক্ষম মানুষ পরিশ্রম করে নিয়মিত দেশের সম্পদ বৃদ্ধি করে চলেছেন। কিন্তু তার ফলে দেশে যে আর্থিক বৃদ্ধি ঘটে চলেছে, তার সুফল তাঁদের ঘরে পৌঁছয় না। তা চলে যায় মুষ্টিমেয় পুঁজিপতি তথা ধনকুবেরের দখলে।
বাস্তবে অর্থনীতির নজিরবিহীন অগ্রগতি ঘটছে দু’টি উপায়ে। প্রথমটি হল, রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদগুলিকে ধনকুবেরদের দখল করা, তার সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদের অবাধ লুটতরাজ। আর দ্বিতীয়টি হল, শোষণকে সীমাহীন মাত্রায় পৌঁছে দেওয়া। এই ভাবে বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়ে উঠছেন দেশের ধনকুবেররা। সেই সম্পদকে পুঁজি করে তাঁরা দেশীয় বাজারের সঙ্গে বিশ্ববাজারে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে অবতীর্ণ হয়ে দেশে দেশে ব্যবসা করছেন এবং সেখানকার সস্তা শ্রম ও কাঁচামালকে কাজে লাগিয়ে ক্রমশ আরও বিপুল সম্পদের অধিকারী হচ্ছেন। আর এই মুষ্টিমেয় পুঁজিপতি তথা ধনকুবেরের সম্পদ বৃদ্ধিকেই জাতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধি হিসাবে দেখানো হচ্ছে।
সমর মিত্র, কলকাতা-১৩
রাস্তা খোঁড়া
প্রত্যেক বর্ষার আগেই বিভিন্ন রাস্তা খুঁড়ে জলের পাইপলাইন সারানো হয়। এর সঙ্গে বৃষ্টির জল জমলে কাদা-জলে রাস্তাটির অসহনীয় অবস্থা হয়ে যায়। কাজ শেষ হয়ে গেলে রাস্তাটিকে পূর্বাবস্থায় ফেরানোর কোনও উদ্যোগও দেখা যায় না। রাস্তাগুলি ক্রমশ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
সুমিতা সাহা, কলকাতা-৩৩
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy