গরমের ছুটির পর মিড-ডে মিল প্রকল্পটি চরম আর্থিক ঘাটতির মুখে পড়বে, এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন শিক্ষকরা (‘খাবারে টান’, ২৬-৪)। অতিমারির পর স্কুলগুলোতে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতির হার খুব বেশি ছিল না। কিন্তু গ্রীষ্মের ছুটির পর তাদের উপস্থিতির হার অনেকটাই বাড়ার সম্ভাবনা। সেই সময়ে ছাত্রছাত্রীদের মুখে রান্না-করা খাবার কতটা তুলে দেওয়া যাবে, এই আশঙ্কায় রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পঞ্চায়েত প্রধানরা। সুন্দরবন এলাকার একটি ব্লক পাথরপ্রতিমার ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ইতিমধ্যে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে, কী করে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।
অঙ্গনওয়াড়ি ও প্রাইমারি স্কুলগুলোতে কোনও দিন খিচুড়ি, কোনও দিন ভাত, ডাল, তরকারি দেওয়া হয়। এ ছাড়া আলু-সয়াবিনের ঝোল, সপ্তাহে এক দিন একটি করে ডিম দেওয়া হয়। এখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মিড-ডে মিলের মেনুতে স্কুল কর্তৃপক্ষ কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছেন। যেমন, খিচুড়িতে আনাজ দেওয়া হবে না। আলু দেওয়া যেতে পারে, তবে মাথাপিছু ২০ পয়সা বরাদ্দ। চাল ৫০ গ্রাম, ডাল ১৫ গ্রাম। সয়াবিন বরাদ্দ মাথাপিছু ৫ পয়সার। ডিম কিনতে হয় ৫ টাকা করে। এ বার থেকে অর্ধেক ডিম দেওয়া হবে, সপ্তাহে এক দিন। পরিস্থিতি সামাল দিতে মিড-ডে মিল সপ্তাহে দু’দিন বন্ধ করে দেওয়া হবে, এমন কথাও চলছে। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের আশঙ্কা, হয়তো তাঁদের অভিভাবকদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে। গ্রামের দরিদ্র মানুষেরা ভাবেন, সরকার তো দিচ্ছে, শিশুদের বঞ্চিত করা হচ্ছে কেন?
অতিমারির সময়ে স্কুল বন্ধ হলেও পড়ুয়াদের চাল, ডাল, আলু, সয়াবিন দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ে পাথরপ্রতিমা ব্লকের একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে এক পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছিল, ৬৮ জন শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। সম্প্রতি সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৯ জনে। এই সব শিশুর স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য কোনও কোনও গ্রাম পঞ্চায়েত মৎস্য ও প্রাণী-বিকাশ দফতর থেকে মুরগির বাচ্চা নিয়ে বিতরণ করেছে পরিবারগুলোকে। উদ্দেশ্য, মুরগির বাচ্চা বড় হবে, ডিম পাড়বে। অপুষ্ট শিশুদের পুষ্টির জোগান দেবে ওই ডিম।
অপরাজিতা রায়
কলকাতা-১১৩
বৈষম্য
“চাকরির নামে ‘পরিচারিকা’, কাঠগড়ায় মন্ত্রী” (৩০-৪) শীর্ষক সংবাদ আরও এক বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল, বৈষম্যের চোরাস্রোতে সমাজের পিছিয়ে-পড়া মানুষগুলো একই অবস্থানে রয়েছেন। এ ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে, তাই সংবাদটি অন্য মাত্রা পেয়েছে। অনেক সরকারি আমলা এতটাই ব্যক্তিসুখ উপভোগ করতে অভ্যস্ত হয়ে যান যে, তাঁদের মেধাও অভ্যাসের বশ্যতা স্বীকার করে নেয়। বৈভব, সুযোগ-সুবিধা, আভিজাত্যের ছোঁয়ায় তাঁরা অন্য মানুষে রূপান্তরিত হন। প্রান্তিকের দুর্দশা ভুলে শোষণের মানসিকতা জন্ম নেয়। ব্যতিক্রমী মানুষ অবশ্যই আছেন, তবে তাঁরা এত কম যে, আড়ালে থেকে যান। অধস্তনকে পীড়ন করার, অসম্মান করার প্রবণতা অজানতেই জন্ম নিতে শুরু করে। তাঁরা মানুন, না-মানুন, বহু বছর ধরে এই পদ্ধতিতে আমলাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কাজ করছে স্বাধীন ভারতেও। ডিএম, এসডিও, বিডিও, এসপি-দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে হামেশাই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। দেখা মিললেও কথা বলার সময় পাওয়া যায় না। হুমায়ুন কবীরের ঘটনাটি লোকসমক্ষে এসে পড়েছে। লোকচক্ষুর অন্তরালে এমন কত সবিতা লায়েক রয়ে যাচ্ছেন, তার হিসাব কে রাখে? প্রাক্তন আইপিএস ও বর্তমান মন্ত্রী মহোদয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তে ঢিলেমির আশঙ্কা থেকেই যায়।
রাজা বাগচি
গুপ্তিপাড়া, হুগলি
শ্রমিকের স্বার্থ
মে দিবসের সম্পাদকীয়তে (‘অবহেলার শ্রম’, ১-৫) খুব পরিমিত শব্দে ভারত-সহ দেশ-বিদেশের শ্রমজীবী মানুষের শোষণের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রশক্তির আর্থ-রাজনৈতিক অভিমুখটি তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের দেশের দক্ষিণপন্থী, অনুদার রাজনীতি আর আগ্রাসী নয়া উদারবাদী অর্থনীতির সমাপতন দেশের খেটে-খাওয়া মানুষের অধিকার লুণ্ঠন করে চলেছে। আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদী সঙ্কটের গর্ভে ডুবে-থাকা পুঁজিবাদ মুনাফার হার বজায় রাখতে যত প্রযুক্তির আধুনিকীকরণ করে শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা বাড়াচ্ছে, তত বেশি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছেন। তখন রাষ্ট্রকে ধরতে হচ্ছে ‘অপর’ সৃষ্টি করার রাজনীতি। ধর্ম, সম্প্রদায়, অভিবাসী, পরিযায়ী চিহ্নিত করার মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে একের পর এক অধিকার। শ্রমজীবী শ্রেণির মধ্যে অজস্র বিভেদের প্রাচীর তুলে দিয়ে মূল সমস্যা, অর্থাৎ রাষ্ট্রের প্রশ্রয়ে পুঁজির শোষণের আদিম চরিত্রটি আড়াল করা হচ্ছে। যাঁদের ওই সব ‘অপর’-এর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের কর্মসংস্থানও অসম্ভব হয়ে উঠছে। তাই এক ধরনের লুম্পেন রাজনীতির পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। অতিমারি কালে আমরা দেখেছি কী ভাবে এক দিকে সংসদীয় গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলি দুর্বল করে শ্রমিকস্বার্থ বিরোধী লেবার কোড, কৃষি আইন, এবং অজস্র সরকারি নির্দেশিকার মাধ্যমে একের পর এক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। অপর দিকে ৩৭০ ধারা বাতিল, অযোধ্যার জমির উপর অনৈতিক অধিকার, নাগরিকত্ব আইন পাশের পাশাপাশি পরিবেশ-সংক্রান্ত বিধিনিষেধের বেড়া ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।
মে দিবসের গুরুত্ব অনুভব করে নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে, উৎপাদনের হার বা আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে ওঠার সঙ্গে সর্বজনীন অধিকার আজ ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদের কাছে গুরুত্বহীন। এই উন্নয়নের আদর্শই আজ চূড়ান্ত প্রশ্নের মুখোমুখি। পুঁজিবাদের মসৃণ বিকাশের কালে শ্রম আর পুঁজির ভারসাম্য থাকে। আজ আর তা সম্ভব নয়। একদা পুঁজির বিকাশ ও নিরাপত্তার স্বার্থে কল্যাণকামী রাষ্ট্রনীতি দেশে দেশে স্থান করে নিয়েছিল। প্রয়োজনে সে দিন পুঁজির চলাচলের সঙ্গে সঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাগত জানানো হয়েছিল। আজ তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। আগ্রাসী নয়া উদারবাদ শ্রমিকদের একটি শোষিত শ্রেণি করে তুলছে, কিন্তু তাঁরা এখনও পুঁজিপতিদের মতো রাজনৈতিক শ্রেণি হয়ে ওঠেননি।
পার্থসারথি দাশগুপ্ত
রহড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
সঙ্কটে শৈশব
সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী নাবালক-নাবালিকারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। একটি অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দু’জন নাবালক জড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন গণধর্ষণের ঘটনাতেও এক বা একাধিক অপ্রাপ্তবয়স্কের ভূমিকা থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এক নাবালিকা নিজের মাকে খুন করেছে বলে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের এই অপরাধপ্রবণতার কারণ কি সামাজিক অবক্ষয়, না আর কিছু?
জরাজীর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা এর অন্যতম কারণ বলা যেতে পারে। কোভিডের কারণে দীর্ঘ দিন বাড়িতে থাকা শুধুই নয়, প্রাক্-কোভিড সময়ে কারণে-অকারণে স্কুল ছুটি এক বিপুল সংখ্যক অলস মস্তিষ্কের সৃষ্টি করে চলেছে। স্কুল না থাকার অর্থ নিষিদ্ধ জগতে অনধিকার প্রবেশের হাতছানি। এখনও কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন, যাঁরা প্রকৃত মানুষ তৈরির কারিগর। স্কুল যদি বছরের বেশির ভাগ সময়ে বন্ধ থাকে, তবে সেই সুযোগ ঘটে না। এর সঙ্গে রয়েছে নম্বর-কেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা। বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে মাথায় ঢুকে গিয়েছে, পড়ে কী হবে? প্রকৃত শিক্ষার অভাব শিশু-কিশোরদের অপরাধমনস্কতা বাড়িয়ে তুলেছে। অবিলম্বে অকারণ ছুটি ঘোষণা বন্ধ করা, পাঠ্যক্রমের আমূল সংস্কার, মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষকতায় নিয়োজিত না করলে ‘জুভেনাইল ক্রাইম’ মাত্রা ছাড়াবে।
সৌগত মাইতি
তমলুক, মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy