Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Piyali Basak

সম্পাদক সমীপেষু: বঙ্গকন্যার শীর্ষজয়

ক্রেভাসে পা আটকে যাওয়ার পরেও নিশ্চিত মৃত্যুকে হারিয়ে এভারেস্ট চূড়ায় দাঁড়িয়ে পিয়ালির উপলব্ধি মন ছুঁয়ে যায়।

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২২ ০৪:৩১
Share: Save:

বেসক্যাম্প থেকে লেখা এভারেস্ট-জয়ী পিয়ালি বসাকের প্রতিবেদন ‘সামিটে দাঁড়িয়ে মনে হল, ফিরব তো?’ (২৮-৫) পড়ে এই পত্রের অবতারণা। ক্রেভাসে পা আটকে যাওয়ার পরেও নিশ্চিত মৃত্যুকে হারিয়ে এভারেস্ট চূড়ায় দাঁড়িয়ে পিয়ালির উপলব্ধি মন ছুঁয়ে যায়। তিনি বলেছেন, “বেঁচে ফিরলে যেন আরও একটু ভাল মানুষ হয়ে উঠতে পারি। জীবনের মূল্য যে কতটা— সে দিন এভারেস্টের শীর্ষে কাটানো ওই ৫-৭ মিনিট বার বার আমায় তা মনে করিয়ে দিয়েছে।” এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে যাচ্ছে, প্রায় ১৭ বছর আগে, প্রথম বাঙালি মহিলা এভারেস্টজয়ী শিপ্রা মজুমদারের উপলব্ধির কথা। ২ জুলাই, ২০০৫ এই সংবাদপত্রে ‘আপাতত জয় করার জন্য আর কোনও শৃঙ্গ নেই’ শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, “পায়ের তলায় পৃথিবী। আমার ভাষার এত ক্ষমতা নেই যে, এই মুহূর্তের অনুভূতিকে ধরে রাখতে পারে। সাদা তুলো তুলো মেঘ ভেদ করে আমার নীচে দিকচক্রবাল আচ্ছন্ন করে রয়েছে একের পর এক রুপোলি শৃঙ্গ। অক্সিজেনের ঘাটতি, বিশেষ পোশাকের আস্তরণ ভেদ করে দাঁত বসানো শীত, কিছুই আর গায়ে লাগছে না। পুরোটাই যেন স্বপ্ন।”

এ বছর প্রথম এভারেস্ট অভিযানের শতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে। ১৯২২ সালে এক ব্রিটিশ অভিযাত্রী দল এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তাঁরা ২৯,০২৮ ফুট উচ্চতার এভারেস্টের ২৭,০০০ ফুট পর্যন্ত উঠতে পেরেছিলেন। তার পর একের পর এক ব্যর্থ অভিযান। অবশেষে ১৯৫৩ সালের ২৯ মে তেনজিং নোরগে আর এডমন্ড হিলারি প্রথম এভারেস্ট শিখরে পা রাখেন।

পুরুষেরা যে কাজ পারেন, নারীও যে সেই কাজে সক্ষম, তার প্রমাণ ছড়িয়ে আছে এভারেস্ট অভিযানের অসংখ্য সাফল্য ও ব্যর্থতায় ভরা ইতিহাসে। ১৯৭৫ সালের ১৬ মে প্রথম মহিলা হিসেবে এভারেস্ট শিখরে পদচিহ্ন আঁকেন জাপানের জুনকো তাবেই। আর প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে ১৯৮৪ সালের ২৩ মে এভারেস্ট শিখরে ওঠেন বাচেন্দ্রী পাল। কেন এত কষ্ট সহ্য করে বার বার অভিযাত্রীর দল ছুটে যায় এভারেস্টের দিকে? এর দার্শনিক উত্তর দিয়েছিলেন এভারেস্ট অভিযানের এক ট্র্যাজিক নায়ক, ব্রিটিশ পর্বতারোহী জর্জ ম্যালোরি— “বিকজ় ইটস দেয়ার” (কারণ ওটা ওখানে রয়েছে)। জেদ, ক্ষমতা, ধৈর্য, আর সহিষ্ণুতার পরীক্ষা হল এভারেস্ট অভিযান। পিয়ালি বসাক আবারও প্রমাণ করলেন বাঙালি মেয়েরাও পারেন সেই পরীক্ষায় সফল হতে। তাঁকে অভিনন্দন।

সুদীপ্তা চিনা, মুন্সিরহাট, হাওড়া

দায় কার?

গত ২১ মে, বিকেলে রবীন্দ্র সরোবরে রোয়িং করার সময় কালবৈশাখীর কবলে পড়ে জলে ডুবে মৃত্যু হয় দুই কিশোরের। পুষ্পেন সাধুখাঁ (১৪) ও সৌরদীপ চট্টোপাধ্যায় (১৪), দু’জনেই সাউথ পয়েন্ট স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্র। রবিবার তাদের স্কুল পর্যায়ের রোয়িং প্রতিযোগিতার ফাইনাল ছিল, শনিবার তারই শেষ পর্যায়ের অনুশীলন চলছিল। মেয়র ফিরহাদ হাকিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে বলেছেন, পরিবেশের দোহাই দিয়ে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালে পিটিশন করে তৈলচালিত রেসকিউ বোটটিকে ওখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওটা থাকলে দুটো জীবন বেঁচে যেত, কারণ বিপদ দেখলে রেসকিউ বোট দ্রুত ছুটে যেতে পারত। এ ভাবেই মহানাগরিক তাঁর কর্তব্য সেরেছেন।

এই দুর্ঘটনার দায় সরকার যে ভাবে পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীদের উপর চাপিয়ে দিল, তা গভীর উদ্বেগের এবং আশঙ্কার। রাজ্য প্রশাসনের কাছে এ রাজ্যের পরিবেশকর্মীরা হলেন রাজনৈতিক ভাষায় সফট টার্গেট। তাঁদের বাহুবল, জনবল, অর্থবল— কোনওটাই নেই। থাকার মধ্যে আছে একটি দুর্বল বিবেক, তারই নির্দেশে তাঁরা যতটুকু যা করেন। রবীন্দ্র সরোবর ১৯২ একরের একটি কৃত্রিম জলাভূমি, যাকে ঘিরে আছে ৭০০০ গাছ। সেখানে প্রায় দু’শো প্রজাতির পাখির বসবাস ও আনাগোনা। ২০০৩ সালে জাতীয় লেক সংরক্ষণ প্রকল্পে এই সরোবর তালিকাভুক্ত হয়। রবীন্দ্র সরোবরের এই জীববৈচিত্রকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে ও সরোবরকে দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী সুভাষ দত্তর উদ্যোগে জাতীয় পরিবেশ আদালতে (ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল) একটি মামলা দায়ের হয়, সঙ্গে দু’টি সংগঠন যুক্ত হয়। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে যে ১২টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই মামলা হয়, তাদের মধ্যে লেক ক্লাব-সহ বেশ কয়েকটি রোয়িং এবং সুইমিং ক্লাব ছিল। মোহনবাগান ক্লাব লেক স্টেডিয়ামে ফ্লাড লাইটের আলোয় নৈশ ফুটবল (আইএসএল) খেলত, সেই কারণে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়। কারণ, ফ্লাড লাইটের চড়া আলোয় পাখিদের অসুবিধে হয়। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল দেশের কয়েকটি বড় বড় সংস্থার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গড়ে এবং তাঁদের মতামত জানতে চায়। বিশেষজ্ঞরা প্রায় ৩০০ পাতার রিপোর্ট লিখে আদালতের কাছে পেশ করেন। তার ভিত্তিতেই ১৫ নভেম্বর ২০১৭, জাতীয় পরিবেশ আদালত যে নির্দেশ দেয়, তাতে অনেকগুলি বিধি-নিষেধের সঙ্গে এ-ও বলা হয় যে, সরোবরে অবস্থিত ক্লাবগুলোর খেলাধুলোর জন্য কর্তৃপক্ষ একটি গাইডলাইন বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর (এসওপি) তৈরি করবে।

হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ও জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়ে কোথাও স্পিড বোট বা লাইফ সেভিং বোট চালানোর বিষয়টি আলোচনা হয়নি। কোথাও বলা হয়নি, প্রয়োজনে স্পিড বোট রাখা যাবে না। ২১ মে-র দুর্ঘটনার পর জানা গেল, স্পিড বোট নেই। তা হলে এত দিন যাঁরা রোয়িং করছেন, তাঁরা কি সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীন অবস্থায় অনুশীলন করতেন? পুলিশের ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট টিম না আসা পর্যন্ত ক্লাব কর্তৃপক্ষ কী করছিলেন? তাঁদের নিজস্ব ‘লাইফ সেভার’ নেই কেন? তাঁরা কি ‘পুল সেফটি ম্যানুয়াল’ (২০১৭) মেনে চলছেন? খোঁজ নিয়ে জানা উচিত, কে বা কারা গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশের নামে স্পিড বোট সরিয়ে দিয়েছিলেন। মনে রাখতে হবে, ছেলে দু’টি রোয়িং প্রতিযোগিতায় তাদের স্কুলের প্রতিনিধিত্ব করছিল। তাই দায়িত্ব এড়াতে পারে না স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং স্কুল ইনস্ট্রাকটর।

প্রয়াত পুষ্পেন ও সৌরদীপ যে লেক ক্লাবের সদস্য ছিল, সেই ক্লাবটির বয়স হল ৯৩ বছর। কোচবিহারের মহারানি ইন্দিরা দেবী এই ক্লাবের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, শিল্পপতি স্যর বীরেন মুখোপাধ্যায় এক সময়ে এর সেক্রেটারি ছিলেন। সেই ক্লাবটির কর্তৃপক্ষের কাছে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ছিল না? না কি তাদের অভ্যাসে নেই ব্যাপারটা?

পুলিশ কমিশনার তিনটি ক্লাবকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘এসওপি’ তৈরি না করা পর্যন্ত ক্লাবে রোয়িং বন্ধ রাখতে হবে। তা হলে এত দিন এই তিনটি ক্লাবে কোনও ‘এসওপি’ ছিল না! যা গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশ।

কয়েক বছর আগে কলেজ স্কোয়ার সুইমিং পুলে এক কিশোরের জলে ডুবে মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কলকাতা পুরসভা ‘লাইফ সেভিং সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’কে দিয়ে শহরের বিভিন্ন সুইমিং পুলের সমীক্ষা করায়। সেই রিপোর্টের কয়েকটি তথ্য, অনেক সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষিত লাইফ সেভার নেই, টাকা বাঁচাতে হাতুড়েদের দিয়ে কাজ চালানো হয়। পুলে লাইফ গার্ডের চেয়ার থাকে না। ডুবন্তকে উদ্ধারের মহড়া হয় না, বিপদে কর্তব্যের তালিকা নোটিস বোর্ডে টাঙিয়ে রাখা নেই সর্বত্র। অনেক পুলে সিসিটিভি নেই। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে পুরসভা কী ব্যবস্থা করেছে? মহানাগরিক এই সব প্রশ্ন করেননি। পরিবেশকর্মীরা সফট টার্গেট, তাই তাঁদের উপর টার্গেট প্র্যাকটিস করে চলে গিয়েছেন।

সুরজিৎ সেন

সদস্য, সবুজ মঞ্চ, কলকাতা

কয়েন চাই

বাজারে এক টাকার কয়েনের অভাব। কেনাকাটার সময় এক টাকা বেশি অথবা বাকি রাখতে হচ্ছে। তাই বাজারে আরও এক টাকার কয়েন ছাড়তে সরকারকে অনুরোধ করছি।

সঞ্জয় চৌধুরী, ইন্দা, খড়্গপুর

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Piyali Basak Mount Everest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy