‘বেল বিতর্ক নিয়ে সরব কোহালি...’ (১১-৬) পড়লাম। আলো জ্বলার জন্যই নাকি বেল ভারী হয়ে গিয়েছে, তাই তার বপু মাঝে মাঝেই, বল লাগলেও নট নড়নচড়ন। ফলে, উইকেটে বল লেগেছে, তবু বেল পড়েনি বলে আউট দেওয়া যাচ্ছে না।
আচ্ছা, বেল-এ আলো জ্বলাটাই যদি মুখ্য করা যায়, তা হলে কেমন হয়? বেল না-ই বা পড়ল! বল লেগে আলো জ্বললেই আউট। সে ক্ষেত্রে আরও ‘সেনসিটিভ’ বেল তৈরি করাই যেতে পারে। ন্যাড়া না-হয়, থুড়ি আইসিসি না-হয়, অন্য বেলতলা থেকে ঘুরে আসতে পারে। মানে, আইনটা না-হয় একটু বদলাল।
তাতে কী-ই বা এসে যায়। বিশ্বের সবই তো পরিবর্তনশীল।
রাজীব কুমার পাত্র
ইমেল মারফত
কত ধানে
‘কত ধানে কত স্মৃতি’ (১১-৬) শীর্ষক লেখাটিতে সময়োপযোগী কিছু বক্তব্য উঠে এসেছে। সবুজ বিপ্লবের হাত ধরেই দেশে এসেছে High Yielding Variety (HYV) এবং বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ গোল্ডেন রাইস; সরকারি বদান্যতায় ও বহুজাতিক সংস্থার দক্ষতায় এগুলোই হয়ে উঠেছে চাষিদের একমাত্র সহায়। এর ফলাফল সম্পর্কে তর্ক চলতে পারে, কিন্তু এ কথা সত্য, যে সব প্রাকৃতিক শস্য অতি-উৎপাদনে সক্ষম ছিল, তাদের সরিয়ে জায়গা করে নিয়েছে এই সব HYV শস্য, যা কিনা সম্পূর্ণরূপে রাসায়নিক সারের ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল।
এই ধরনের সারের বহুব্যবহারের কুফল আজ আমরা ভাল ভাবেই জানি। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা আরও স্পষ্ট হবে। পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটা সময় গরিবশাল ধানের চাষ হত, এখন অবশ্য আমাদের কারও কাছেই এই নাম পরিচিত নয়। জানলে চমকে উঠতে হয়, প্রতি কেজি গরিবশাল ধান প্রায় ১৫ মিলিগ্রাম রুপো আত্মীকরণে সক্ষম! প্রচলিত কথা অনুযায়ী, ক্রনিক গ্যাস্ট্রোলজিক্যাল সমস্যায় এই ধান খুব কাজ দেয়। যদিও এই দাবি পরীক্ষিত নয়, তাও যে কোনও Genetically Modified (GM) শস্যের তুলনায় এর ক্ষমতা অনেক বেশি।
আর এক প্রকার অখ্যাত ধান, বাদশাশাল, প্রতি কেজিতে ১৩০ মিলিগ্রাম আয়রন ধারণে সক্ষম, যেখানে বহু খরচে নির্মিত GM শস্য Monsanto MS13-এ আয়রন থাকে প্রতি কেজিতে ৭ মিলিগ্রাম! তুলনা করাটাও হাস্যকর। সরকারি স্তরে এই ধানগুলির চাষের কোনও উদ্যোগ তো নেই-ই, উল্টে গোটা কৃষিব্যবস্থাটাকেই একমুখী করে দেওয়ার একটা জোরদার প্রচেষ্টা আছে। বর্তমানে অবশ্য এই দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছুটা বদল দেখা যাচ্ছে। আর ব্যক্তিগত স্তরে কিছু উদ্যোগ আছে যা বিশেষ ভাবে প্রশংসনীয়।
২০১৩-১৪ নাগাদ ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউট-এ গবেষণার সময়ে একটি সেমিনারে আমার সৌভাগ্য হয় ড. দেবল দেব-এর বক্তব্য শোনার। এই গবেষক অত্যাধুনিক সুযোগসুবিধা ছেড়ে কৃষিজমিকেই তাঁর ল্যাবরেটরি বানিয়ে নিয়েছেন। ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও কৃষক বন্ধুদের সহায়তায় গড়ে তুলেছেন একটি আঞ্চলিক বীজ-ব্যাঙ্ক তথা ধান-গবেষণাক্ষেত্র। ইনি এবং এঁর সহযোগীরা বিভিন্ন প্রজাতির বিশেষ বিশেষ ধান খুঁজে বার করেন চাষিদের সঙ্গে কথা বলে, তার পর সেই চাষিদের সাহায্য করেন এই ধান ফলাতে।
এই ভাবে শুধুমাত্র ওড়িশায় ৩৫০ প্রকার ধানের ফলন সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে আছে ৬৭ রকম আয়রন-সমৃদ্ধ ধান, ১৬ রকম খরা-প্রতিরোধী এবং ১১ রকম লবণ-প্রতিরোধী ধান। এর মধ্যে ৬ রকম লবণ-প্রতিরোধী ধান কয়েক বছর আগে এঁদের উদ্যোগেই সুন্দরবনে চাষ করা হয় এবং সেই ফলন সম্পূর্ণরূপে সফল। সমস্যাটা হল, এগুলি স্রোতের বিপরীতে যাওয়ার উদাহরণ। এই রকম উদাহরণ যদি আরও স্বাভাবিক হয়, ভারতের খাদ্যশস্যের বৈচিত্র কিছুটা রক্ষা পায়।
সায়নদীপ গুপ্ত
কলকাতা-৭৮
জয় বাংলা
এখন ‘জয় বাংলা’ কে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্লোগান করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। ‘জয় বাংলা’ শুনলে অনেকেরই মনে পড়ে ‘চোখ ওঠা’ (কনজাংটিভাইটিস) অসুখের কথা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সে সময়কার পূর্ব পাকিস্তানে রোগটা ছড়িয়ে পড়েছিল মহামারির মতো। শরণার্থীদের ‘চোখ’ ধরে সীমানা পেরিয়ে রোগটা থাবা বসিয়েছিল এ বঙ্গের (এমনকি পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়েও) শরণ-দাতাদাত্রীদের চোখেও।
তখনকার (ছাপাই) গণমাধ্যমগুলো রোগটা নিয়ে নানা আশঙ্কা, সমস্যা ও তার সমাধানের নানা দিক গণগোচরে তুলে ধরেছিল বেশ গুরুত্ব দিয়েই। দৈনিক যুগান্তরের এক শিরোনাম ছিল ‘চোখের রোগে ট্রেন বন্ধের আশঙ্কা’। আরও জানা যায়, বন্ধ রাখা হয়েছিল অনেক স্কুল-কলেজ, বাতিল হয়েছিল ফুটবল ম্যাচ। চোখ এড়ায়নি তখনকার আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলোরও। নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, পশ্চিমবঙ্গে ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত, রেহাই পাননি তাদের সংবাদ সংগ্রাহকেরাও।
খবরের কাগজে বেরোত নানা রকম টোটকার হদিশ: “চোখের রোগের টোটকা নিন: লেবুর রস দিয়া লৌহপাত্রের উপর... চোখের পাতার উপর প্রলেপ দিন, হাতি শুড়ার পাতার রস... চক্ষু উঠা ভাল হইবে..., ২ চামচ দুগ্ধ এক সের জলে জ্বাল দিয়া ফুটাইয়া... ভাপরা চক্ষু চাহিয়া লইলে..., ছোট পেঁয়াজের রস... চক্ষের মধ্যে...” (বিকাশভানু, যুগান্তর) ইত্যাদি। আবার কত না ওষুধের বিজ্ঞাপন: “আপনিও চোখওঠায় কষ্ট পাচ্ছেন? অপ্টিসল ২০% আই ড্রপস এখুনি ব্যবহার করুন। স্ট্যাডমেড/ কলিকাতা”, “সাবধান! চারিদিকে সংক্রামক চক্ষুরোগ!... আইকুল ব্যবহার করুন। প্রস্তুতকারক: কনমিক হোমিও ফার্মেসী, বহু ব্যাপক চক্ষু রোগের হোমিওপ্যাথিক ঔষধ।” আবার, “চক্ষুরোগ ও কালো চশমা/ ইন্টারন্যাশনেল অপ্টোডেন্টাল কোম্পানী”, “সালফাসিটল”, “তরল সাবান”। তখনকার বহুল প্রচলিত এক টোটকার কথা তর্জমা করে বলি: ছিলিমের (হুক্কা) বাসি জল চোখে লাগাইলে উপকার পাইবেন।
পাশাপাশি, শরণার্থীদের ‘আর্থিক অসঙ্গতি’-র দিকটা মাথায় রেখে বাজার ছেয়ে গিয়েছিল ‘জয় বাংলা’ (সস্তার) স্যান্ডেল, সাবান, তেল, ছাতা, স্যান্ডো গেঞ্জি, লুঙ্গিতে।
Georges Childs Kohn তাঁর 'Encyclopedia of plague and pestilence: From Ancient Times to the Present' বইতে উল্লেখ করেছেন, এ বঙ্গের অন্তত ৫০ লাখ (৬৫%) মানুষ রোগটার শিকার হয়েছিলেন। সরকারি হিসেবে, মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর (১৯৭১) অবধি চিকিৎসার সেবা পেয়েছেন কমপক্ষে ৫ লাখ রোগী। ডি ডি প্রামাণিকের গবেষণা-নিবন্ধ বলছে, রোগটাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধেই হয়েছিল, কারণ, আগে থেকে এই রোগে অভ্যস্ত না থাকায়, পাক হানাদারদের বিপাক ছিল একটু বেশিই। তাই পূর্ব পাকিস্তানের স্বদেশি যোদ্ধারাই রোগটার নাম দেন ‘জয় বাংলা’।
কল্লোল সরকার
রথতলা, উত্তর ২৪ পরগনা
ড্যামেজ কন্ট্রোল
গুজরাতের নরোদার বিজেপি বিধায়ক বলরাম থাবানিকে নিজের এলাকার জলের সমস্যার কথা জানাতে গিয়ে, তাঁর কাছে চড়, ঘুসি, লাথি খেলেন এক মহিলা। শোনা যাচ্ছে, এই ঘটনায় গুজরাত রাজ্য বিজেপি নাকি ভীষণ অস্বস্তিতে পড়েছে। চেষ্টা করছে ড্যামেজ কন্ট্রোলের। এ দেশের সাংবিধানিক কাঠামো, রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও গণতন্ত্রের উদ্ভট ধ্যান-ধারণায়, মাঝে মাঝে এক জন অপরাধী (যার অপরাধ এখনও অপ্রমাণিত) বা সমাজবিরোধীও বিধায়ক সাংসদ হয়ে যেতে পারেন। আইনের ফাঁক গলে তা না-হয় হল, কিন্তু এত দিনের দাদাগিরি ও অসভ্যতার অভ্যাসে রাশ টানা শক্ত হয়ে পড়ে। তখন কোনও ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ নয়, ওই ব্যক্তিকে দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত।
প্রণব রাহা
দুর্গাপুর-৪
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy