Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: তাঁর গানের সম্ভার

কলেজে ভর্তির সময় ধর্মের অপশন তুলে ধরার পক্ষে লেখক যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘সেখান থেকেই আসতে পারে সংস্কারের পরিকল্পনা’’।

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

‘প্রয়াত রুমা গুহঠাকুরতা’ (আনন্দ প্লাস, ৪-৬) প্রতিবেদনে তাঁর গানের দিকটির বিষয়ে অনেক কিছুই বলা হয়নি। ‘পলাতক’ (১৯৬৩) ছবিতে রুমা দেবী অভিনয় করেছিলেন এবং ‘মন যে আমার কেমন কেমন করে’ গানটি গেয়েছিলেন। বোধহয় ওঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় গান। কিন্তু এই গানটি ওই ছবিতে গীতা দত্তও গেয়েছিলেন। সেই গানটি ছিল অনুভা গুপ্তার ঠোঁটে। গীতা দত্তের গানটি হিজ় মাস্টার্স ভয়েস থেকে ১৯৯১ সালে একটি ক্যাসেটে প্রকাশিত হয়। সে যুগে একটি বিতর্ক শুরু হয়েছিল, গানটি গীতা না রুমা, কে বেশি ভাল গেয়েছেন। রুমার গানটি মেগাফোন প্রকাশ করে।
রুমা ছিলেন মূলত মেগাফোনের শিল্পী। বহু জনপ্রিয় গান মেগাফোন থেকে প্রকাশিত— ‘চিনিতে পারিনি বঁধু’ (পলাতক), ‘শুধু পথ চেয়ে থাকা’ (বাঘিনী), ‘শুক বলে সারী রে তোর’ (‘এন্টনী ফিরিঙ্গী’ ছবিতে মান্না দে-র সঙ্গে দ্বৈত সঙ্গীত)। এ ছাড়া তাঁর প্রচুর আধুনিক গানও মেগাফোনের— ‘আজ ঘরে কেউ থাকব না’, ‘মুখে বল ভালবাসি’, ‘ওরা আজ করবে আঘাত’, ‘যদি মনেতে রঙ’ প্রভৃতি। ‘বেনারসী’ (১৯৬২) ছবিতে তিনি দুটি ঠুম্‌রি গেয়েছেন, সেই দুটিও মেগাফোন থেকে প্রকাশিত, আলি আকবরের সুরে। তুলনায় কম একক গান, যেমন ‘একখানা মেঘ ভেসে এল’, ‘কী করি উপায়’, ‘ছি! তুমি কী যে কর’, ‘তোমার আমার ঠিকানা’ প্রভৃতি। এ ছাড়া ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়্যারের গানগুলির কয়েকটি লং প্লেয়িং রেকর্ড আছে, যেখানে পরিচালনা ও প্রধান কণ্ঠ রুমা দেবীর। এর মধ্যে আছে ‘বিস্তীর্ণ দুপারের’, ‘ভারতবর্ষ সূর্যের এক নাম’, ‘বল বল বল সবে’ প্রভৃতি। এ ছাড়া ‘ফোক সংস অব বেঙ্গল’ নামক লং প্লেয়িং রেকর্ডে রুমা দুটি পল্লিগীতি গেয়েছেন— ‘এসে এক রসিক পাগল’ ও ‘বাথান বাথান করে মইষাল’।
‘আশিতে আসিও না’ (১৯৬৬) ছবিতে মান্না দে ও রুমা দ্বৈত কণ্ঠে একটি গান গেয়েছিলেন— ‘তুমি আকাশ এখন যদি হতে’। কিন্তু হিজ় মাস্টার্স ভয়েস থেকে এই গানটি রেকর্ডে প্রকাশিত হলে, রুমার পরিবর্তে নির্মলা মিশ্র গানটি গাইলেন মান্না দে-র সঙ্গে। রুমা দেবীর এই গানটির কোনও রেকর্ড নেই। কয়েকটি ছায়াছবিতে তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছেন, প্রশংসিতও হয়েছেন, কিন্তু সে গানগুলিও রেকর্ডে প্রকাশিত হয়নি। এর মধ্যে সত্যজিৎ রায়ের ‘তিন কন্যা’ ছবির ‘বাজে করুণ সুরে’ গানটি উল্লেখের দাবি রাখে।


শ্রীশঙ্কর ভট্টাচার্য
কলকাতা-৩৯

কাঁঠালি আমসত্ত্ব


গৌতম চক্রবর্তী ‘আর, ধর্মীয় মানবতা? (৬-৬) শীর্ষক লেখায় লিখেছেন, ‘হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান সব ধর্মেই মানবিকতা আছে’। আপাত ঠিক কথাই লিখেছেন। কিন্তু ওই জাতীয় প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের শাস্ত্র ও আচারে প্রচুর অমানবিকতাও আছে। আছে বর্ণভেদ, নারীবিদ্বেষ, নারীবঞ্চনা এবং যুক্তিহীন ভয় দেখানো ও প্রলোভনের হাতছানি। এই সব ‘ধর্ম’ আসার আগেও সমাজে ‘মানবিকতা’র প্রচলন ছিল, ছিল মানুষের প্রতি মানুষের দয়া, মায়া, সহমর্মিতা। ওই সব মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন মানবসমাজ তৈরির সমগ্র কালটাকে যদি ধরা যায় ২৪ ঘণ্টা, তবে ‘ধর্ম’ এসেছে মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে। আর সেই ধর্মের মধ্যে মানবিক গুণের সম্পূর্ণতা থাকলে, এই সামান্য কালের মধ্যেই বিশ্বে প্রায় সাড়ে চার হাজার ধর্মের উদ্ভব হত না। প্রতিটি নতুন ধর্মের সৃষ্টি হয়েছে চালু ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। সে বিদ্রোহ সব সময় কীর্তনের মাধ্যমে নয়, কর্তনের মাধ্যমেও হয়েছে।
‘প্রতিটি ধর্মের মধ্যেই একটা সহিষ্ণুতার বার্তা আছে’ লেখকের এই কথার উত্তরে বলা যায়, সেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের নিজধর্মের মানুষের মধ্যেই রাখতে বলা হয়েছে (যদিও নিজ ধর্মের মধ্যেও যথেষ্ট ভেদাভেদ আছে) এবং স্ববিরোধী বার্তাও আছে। আর প্রত্যেক ধর্মের লক্ষ্যই হল— নিজ ধর্মের সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে দল ভারী করা। জোর করে বা লোভ দেখিয়ে নিজধর্মের অন্তর্গত করার পন্থা ছেড়ে দিলেও, ‘সব ধর্মের চেয়ে আমারটাই শ্রেষ্ঠ’ এই কুমন্ত্রণা ছাড়া সদস্য বাড়ানোর আর কোনও পন্থা চালু আছে কি? তা হলে তো ধর্মের ‘সহিষ্ণুতা’ ডাহা ফেল সেখানেই। তাই ‘ধর্মীয় মানবতা’ কাঁঠালের আমসত্ত্ব ছাড়া কিছুই নয়।
রবীন্দ্রনাথের ‘চতুরঙ্গ’ উপন্যাসে পাই, “জগমোহনের নাস্তিকধর্মের একটা প্রধান অঙ্গ ছিল লোকের ভালো করা।...নাস্তিকের পক্ষে লোকের ভালো-করার মধ্যে নিছক নিজের লোকসান ছাড়া আর কিছুই নাই— তাহাতে না আছে পুণ্য না আছে পুরস্কার, না আছে কোনো দেবতা বা শাস্ত্রের বক্‌‌শিশের বিজ্ঞাপন বা চোখ-রাঙানি। যদি কেহ তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিত ‘প্রচুরতম লোকের প্রভূততম সুখসাধনে আপনার গরজটা কী’ তিনি বলিতেন, কোনো গরজ নাই, সেইটেই আমার সব চেয়ে বড়ো গরজ।” এই ‘কোনো গরজ নাই, সেইটেই আমার সব চেয়ে বড়ো গরজ’কে আপ্তবাক্য করে বর্তমান প্রজন্ম এগিয়ে না এলে সামনের দিন যে অতি ভয়ঙ্কর, সে বিষয়ে নিশ্চয় লেখক দ্বিমত পোষণ করবেন না।


সাধন বিশ্বাস
নোনাচন্দন পুকুর, বারাকপুর

বৌদ্ধিক প্যাঁচ


লেখাটি পড়ে মনে হল, একটি সুন্দর সাধারণ বিষয়কে অপ্রয়োজনীয় বৌদ্ধিক প্যাঁচে কাবু করার চেষ্টা করা হয়েছে। কলেজে ভর্তির ফর্মে ধর্মের ঘরে ‘মানবিকতা’ শব্দটিকে আক্ষরিক বিকল্প অর্থে হিন্দু বা মুসলমানের সমগোত্রীয় আর একটা অপশন না ভেবে, বরং ভাবা যায়, ওটা যিনি বাছছেন তাঁর মোদ্দা বক্তব্য, ‘‘ওই ক্লিশে ধর্মপরিচয়ে আমার বিশ্বাস নেই, এবং আমার জীবনকে ধারণ করে আছে যে বিশ্বাস, তাতে মানুষের উপরে আর কিছু নেই।’’
আমি ধর্মের ঘরে প্রচলিত কিছু না লিখে মানবিকতা বাছলে, যাঁরা হিন্দু বা মুসলিম লিখছেন তাঁরা সবাই অমানবিক, এটা অতিসরলীকরণ নয় কি? বরং প্রচলিত যে ধর্মবোধ ও তৎসংক্রান্ত বজ্জাতি (প্রায় জাতের নামে যে রকম ততটাই), তার প্রতি একটা সুন্দর প্রতিবাদ, ধর্মের ঘরে ‘মানবতা’ বাছাই।

তরুণ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৪২

বাবার ধর্ম


ধর্মের দুটো দিক আছে। ধর্মীয় আচরণ পালন, আর ধর্মীয় মূল্যবোধের রূপায়ণ। আমি কোন ধর্মের লোক বললে— আমি কোনও ধর্মাচরণ করি কি না, বা কোনও ধর্মীয় মূল্যবোধকে আমার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে মান্যতা দিই কি না, তা কিন্তু বোঝা যায় না। যেটা বোঝা যায়: আমি কোন পরিবারে জন্মেছি। আমার বাবা বা তাঁর পূর্বপুরুষরা কোন ধর্মের দ্বারা সমাজে চিহ্নিত হয়ে আসছেন। বাবা হিন্দু বলে আমাকে হিন্দু হতে হবে ? বাবা মুসলমান বলে আমাকে মুসলমান লিখতে হবে? এ তো জবরদস্তি।
মানবতাও মাত্র এক প্রকার নয়। তৃণভোজী বলতে গরু, মোষ, ছাগলকে বোঝায়, কিন্তু মানবতা বলতে কেবল ধর্মীয় মানবতাকে বোঝায় না। নিবন্ধকার এখানে ধর্মীয় মানবতাকেই দেখছেন, পার্থিব মানবতাকে নয়। ধর্মীয় মানবিকতা নিঃসন্দেহে এক কালে সমাজকে পথ দেখিয়েছে, কিন্তু সমাজ পরিবর্তনের ধারায় তা আর নতুন পথের সন্ধান দিতে পারছে না। আচারসর্বস্বতা এবং অন্ধতা, কূপমণ্ডূকতা আজ যে কোনও ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।


গৌরীশঙ্কর দাস
সাঁজোয়াল, খড়গপুর

ধর্মনিরপেক্ষ


কলেজে ভর্তির সময় ধর্মের অপশন তুলে ধরার পক্ষে লেখক যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘সেখান থেকেই আসতে পারে সংস্কারের পরিকল্পনা’’। কিন্তু প্রশ্ন হল, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশে উন্নয়ন ও সংস্কার কি ধর্মীয় বিভেদের সাপেক্ষে হওয়ার কথা? গণতন্ত্রের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ধর্মীয় পরিসংখ্যানের আনুপাতিক হার জানার সত্যিই খুব প্রয়োজন আছে কি?


আলোক রায়
কলকাতা-১১০

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Music Ruma Guha Thakurta History
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy