এ বছর বঙ্গে বারোয়ারি দুর্গাপুজো বন্ধ— এই ঘোষণা হলেই কি ভাল হত না? পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অকালবোধনে পুজো হত। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন অগ্রাধিকারের, জীবন আগে, না উৎসব? এমনিতেই করোনায় সংক্রমিতের হার হ্রাস পাওয়ার কোনও লক্ষণ নেই, হাসপাতালে বেড অপ্রতুল। আগামী দিনে মেট্রো ও লোকাল ট্রেন চালু হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। মাস্ক পরা বা দূরত্ববিধি মানার ক্ষেত্রেই যেখানে আমাদের প্রবল অনীহা আর তাচ্ছিল্য, কান ধরে ওঠবস বা জরিমানাতেও টনক নড়ে না, সেখানে দূরত্ববিধি মেনে প্রতিমা দর্শন এক অলীক কল্পনা।
বরং মাঝারি ও বড় পুজোকমিটি তাদের নিজস্ব এলাকার বাসিন্দাদের জন্য র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা ও যথাযথ চিকিৎসায় সাহায্য করুক। অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাও নিশ্চিত করা হোক। এ সবই হোক পুজোকমিটির মধ্যে প্রতিযোগিতা ও পুরস্কারের বিষয়। কর্পোরেট স্পনসরের অভাব হবে না। পুজোর চাঁদা দিয়ে প্রতিমা শিল্পী, ঢাকি, ডেকরেটর, ইলেকট্রিশিয়ান আর ওই এলাকার কাজ-হারানো শ্রমিকদের সাহায্য করুক। মানুষ দু’-হাত তুলে আশীর্বাদ করবে। সবচেয়ে বড় কথা, অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাওয়া ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ার, হোমগার্ড, ট্রাফিক পুলিশরা হাঁপ ছেড়ে বাঁচবেন। বাংলাই পথ দেখাবে। শ্যামল চক্রবর্তী
কলকাতা-৭৮
তথ্যের ফাঁদ
‘তথ্যের অভাবে রোগী মরে?’ (৮-৯) নিবন্ধে স্বাতী ভট্টাচার্য যথার্থই বলেছেন, নীতি তৈরি করতে হলে তথ্য জানা অনিবার্য। কিন্তু তথ্য অমোঘ সত্য নয়। সম্প্রতি একটি বই হাতে এসেছে, ডাক্তার স্থবির দাশগুপ্তের স্বাস্থ্য নিয়ে বাদবিসংবাদ (আনন্দ)। সেখানে একটি অধ্যায় আছে, ‘‘সংখ্যা সংখ্যা... তোমার মন নাই?’’ সেটি পড়লে বোঝা যায়, কত রকম ভাবে ‘ডেটা মাসাজিং’ করা যায়। নির্ভুল তথ্য আমাদের পরিস্থিতি অনুধাবনে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু শুধুমাত্র তথ্যের উপর ভিত্তি করে নীতি নির্ধারণ অনুচিত। একতরফা কোনও নীতি চাপিয়ে না দিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে, এবং সর্বোপরি তা বাস্তবে প্রয়োগ করা সম্ভব কি না তা নিশ্চিত করে, তার পর সেই নীতি বলবৎ করা উচিত।
তথ্যকে কী ভাবে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়, তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল, করোনায় মৃত্যুহার ভারতে ক্রমশ কমে আসা। মৃত্যুহার কমছে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায়। প্রতি হাজার করোনা আক্রান্তের মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হলে মৃত্যুহার যত হবে, এক লক্ষ জনের মধ্যে ২০ জনের মৃত্যু হলে মৃত্যুহার অঙ্কের নিয়মেই কমবে। অথচ মৃত্যুহার হ্রাসকে অস্ত্র করে সরকার দাবি করছে, তাদের করোনা প্রতিরোধের নীতি সফল।
প্রবন্ধটিতে স্বাস্থ্যবিমার বাস্তব চিত্র পাওয়া গিয়েছে। সরকার তার জিডিপি-র যে সামান্য অর্থ ব্যয় করে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয়, তাতে কোনও প্রকার সরকারি স্বাস্থ্যবিমা যে কার্যকর হবে, সে আশা করা যায় না। সুতরাং, যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরা ছুটবেন বেসরকারি বিমা সংস্থাগুলোর কাছে। প্রকট হবে অর্থনৈতিক বৈষম্য। ব্রিটেন, তাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশের মতো আমাদের দেশেও সম্পূর্ণ সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব কি না, তা ভাবতে হবে নীতি নির্ধারকদের। ২০১৭ সালের নতুন স্বাস্থ্যনীতিতে স্বাস্থ্যখাতে অর্থবরাদ্দ বৃদ্ধি-সহ যে সব ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, সেগুলি বাস্তবে গ্রহণ করতে হবে।
সৌম্যজিৎ বিশ্বাস
কৃষ্ণনগর, নদিয়া
কার্ডের জন্য
‘তথ্যের অভাবে রোগী মরে?’ নিবন্ধে যথার্থই বলা হয়েছে যে, ডিজিটাল কার্ডের চেয়ে জরুরি রোগীর চিকিৎসা এবং একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। কোভিডের এই অতর্কিত আক্রমণ আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভেতরের চেহারাটা একেবারে নগ্ন করে চোখের সামনে এনে ফেলেছে।
যেখানে স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে, সেখানে সরকারের নথিতে অন্তত সেই নামের একটা অস্তিত্ব আছে। কিন্তু ভারত জুড়ে এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে এখনও সরকারের দৃষ্টিই পৌঁছয়নি। আমার পরিচিত এক দল ডাক্তার এক বার দার্জিলিং ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত একটি গ্রামে ক্যাম্প করতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁরা পৌঁছনোর পর গ্রাম ভেঙে লোক আসেন। ডাক্তাররা ভেবেছিলেন, সবাই চিকিৎসা করাতে এসেছেন। একটু পরেই ভুল ভাঙল। বুঝতে পারলেন, ওঁরা এসেছেন ডাক্তার কেমন দেখতে হয়, সেটা দেখতে। কোনও দিন ডাক্তারই দেখেননি তাঁরা। চিকিৎসা, পরীক্ষা, ওষুধ— এ সব তো অনেক পরের কথা। এই মানুষরা ডিজিটাল কার্ড নিয়ে কোথায় যাবেন? কে তাঁদের কার্ডে তথ্য ভরে দেবে?
সাম্প্রতিক নানা অভিজ্ঞতা থেকে মনে হচ্ছে, সাধারণ মানুষের করের টাকায় এই কার্ড নিয়ে সরকার প্রচারে নামবে। কেবল বিজ্ঞাপন নয়, চ্যানেলে চ্যানেলে সান্ধ্য তর্কসভায় এই কার্ডের মহিমা জোরের সঙ্গে তুলে ধরা হবে। নামীদামি ডাক্তাররা এত সুন্দর করে বুঝিয়ে দেবেন কার্ড থাকাটা কত জরুরি, যে সাধারণ মানুষ ভাবতে বাধ্য হবেন, কার্ড ছিল না বলেই তাঁরা চিকিৎসাবঞ্চিত ছিলেন। নিকটজনের বিনা চিকিৎসায়, বা চিকিৎসা-বিভ্রাটে মৃত্যু হলে তাঁরা কার্ড না-থাকাকেই দায়ী করবেন। হাসপাতাল আরও অনেক রোগী ফিরিয়ে দেওয়ার একটা মজবুত অজুহাত পাবে। মোট কথা, দৃষ্টি ঘুরে যাবে চিকিৎসার অব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক একটা বিষয়ে।
এক দিকে স্বাস্থ্যে বেসরকারি লগ্নির জন্য হা-পিত্যেশ চলছে, অন্য দিকে সরকারি ব্যবস্থাকে জটিলতর করে তোলা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার সব রাস্তাই ক্রমে ক্রমে বন্ধ।
বোলান গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা-৩
গ্রামে করোনা
নিজের পাড়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, গ্রামাঞ্চলে করোনা আক্রান্তদের অবস্থা খুবই করুণ। ‘হোম আইসোলেশন’-এ থাকলেও তাঁদের পরিবার ওষুধ, পানীয় জল ও খাদ্যসামগ্রী কী ভাবে পাবেন, খোঁজ রাখছে না কোনও সরকারি বা প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এলাকার হাটবাজার জীবাণুমুক্ত করা বা আক্রান্ত সুস্থ হলে তাঁদের বাড়ি জীবাণুমুক্ত করার ব্যাপারে পঞ্চায়েতের উদ্যোগ দেখা যায়নি।
এই ভয়েতেই উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও অনেকেই পরীক্ষা করতে রাজি হন না। সাধারণ মানুষ প্রতি দিন যে ভাবে হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে অবহেলায় মারা যাচ্ছেন, সেটাও তাঁদের ভাবিয়ে তুলেছে। শহরে তবু অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আছে, গ্রামে নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরাও উদাসীন। এর সমাধান করতে প্রশাসনিক উদ্যোগ প্রয়োজন।
রাসমোহন দত্ত
মছলন্দপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
আর নয়
পশ্চিমবঙ্গে এ বার লকডাউন বন্ধ হোক। কয়েক মাস ধরে কখনও লাগাতার, কখনও দফায় দফায় লকডাউন চলছে। দৈনিক সংক্রমণের হিসেব এক বারও বলছে না যে, এমন ব্যবস্থা ফলদায়ক হয়েছে। লকডাউনের আগে ও পরের দিন দোকান-বাজারে অত্যধিক ভিড় বিশেষজ্ঞদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা আইসিএমআর এমন বিক্ষিপ্ত লকডাউন অনুমোদন করে না। তবুও তা চলছে।
সামনেই শারদীয়া ও দীপাবলি উৎসব। এ সময়ে কিছু বাড়তি আয় হয় অসংগঠিত শ্রমিকদের। অর্থনীতিতে কিছুটা অক্সিজেন জোগাতে পারে উৎসবের বাজার। লকডাউন চলতে থাকলে এই মানুষরা আরও বিপদে পড়বেন। অফিস-আদালতে কাজের পাহাড় জমেছে। বহু দেশে লকডাউন-বিরোধী মিছিলও শুরু হয়েছে। এ রাজ্যেও যে আগামী দিনে হবে না, সে কথা বলা যায় না।
স্বপন কুমার ঘোষ
কলকাতা-৩৪
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy