সুস্মিতা নাথের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পটি (রবিবাসরীয় ২০-৯) প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়। যতই বিবাদ বা দাঙ্গার জিগির তুলে কোনও পক্ষ মুনাফা লাভের চেষ্টা করুক না কেন, ভারতের শিকড়ে সম্প্রীতির ফল্গুধারা নিরন্তর প্রবহমান।
এই গল্প পড়তে পড়তে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের একই নামের আর একটি গল্পের কথা মনে পড়ছে, যা তাঁর শ্রেষ্ঠ গল্প (দে’জ) বইতে রয়েছে। সেখানে এক অজ্ঞাতপরিচয় বৃদ্ধার নিঃসাড় শরীরকে মৃত মনে করে হিন্দুরা নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে আসে। বিকেল হতেই মুসলিমরা সেই দেহকে বাজারের মাঝে নিয়ে এসে তাকে মুসলমান ভেবে সমাধিস্থ করার প্রয়াস করে। শুরু হয়ে যায় দুই পক্ষের কাজিয়া। উত্তেজনা বাড়তে থাকে। মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে মোল্লাসাহেবের নেতৃত্বে মুসলিম সম্প্রদায় এবং ভটচাজ্ মশাইয়ের নেতৃত্বে হিন্দু সম্প্রদায় আস্ফালন শুরু করে।
এই অবস্থায় বুড়ির দেহ নড়ে ওঠে। সবাই অবাক হয়। সবার সন্দেহ নিরসনের জন্য চৌকিদার তাকে সরাসরি প্রশ্ন করে, বুড়ি তুমি কে? তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বুড়ি উত্তরে বলে, ‘‘...দেখতে পাচ্ছিস না আমি কে?’’ আসলে শুধু চোখ দিয়ে যা দেখা যায়, তা হল, সে এক জন মানুষ। মানুষের ‘মানুষ’ পরিচয় ছাড়া দ্বিতীয় আর কোনও পরিচয় কি থাকতে পারে? আনন্দের কথা, এই গল্পটি পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ শিক্ষা সংসদের ‘বাংলা ভাষা ক’ পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও শিখুক, মানুষের মানুষ ছাড়া আর কোনও পরিচয় নেই।
শঙ্খ অধিকারী
সাবড়াকোন, বাঁকুড়া
স্মৃতিতে সিরাজ
‘সুযোগ পেলেই মাছ ধরতে ভালবাসতেন’ (রবিবাসরীয়, ১১-১০) পড়ে বেশ ভাল লাগল। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজকে নিয়ে বাংলা সাহিত্যে আবেগের প্রকাশ তেমন চোখে পড়ে না। অথচ, উনি বড় মাপের এক সাহিত্যিক, যাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে জ্ঞানপীঠ ছাড়া আর প্রায় সব পুরস্কার আছে। ওঁর ‘অলীক মানুষ’ উপন্যাসে আমরা দেখেছি বাস্তব আর পরাবাস্তবতার আশ্চর্য সংমিশ্রণ। ছোটবেলায় বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া এই মানুষটির অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যে অমূল্য সম্পদ ছিল, তা দিয়ে পরবর্তী জীবনে উনি নানা সাহিত্য সৃষ্টি করে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। উনি এক সময়ে ‘ইবলিস’ ছদ্মনামে লিখতেন। ‘ভালোবাসা ও ডাউনট্রেন’ ছিল দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত ওঁর প্রথম গল্প। কর্নেল নীলাদ্রি সরকার ওঁর সৃষ্ট গোয়েন্দা, যাঁর নানা কাহিনি কর্নেল সমগ্র-তে লিপিবদ্ধ আছে।
অশোক বসু
বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
স্বাধীনতার স্বাদ
মুর্শিদাবাদ জেলার খোশবাসপুর গ্রামে ১৪ অক্টোবর, ১৯৩০ সালে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের জন্ম। পিতা সৈয়দ আবদুর রহমান ফেরদৌসী ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। মা আনোয়ারা বেগম ছিলেন লেখিকা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের সংযোগ ছিল বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে। ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মুর্শিদাবাদ অঞ্চলের জনপ্রিয় লোকনাট্য আলকাপের দলে সক্রিয় ছিলেন তিনি। আলকাপ পালা লিখেছেন, আলকাপ দল পরিচালনা করেছেন।
বহু ধরনের উপন্যাস তিনি লিখেছেন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ‘নীল ঘরের নটী’ (১৯৬৬)। গল্প-উপন্যাস মিলিয়ে দু’শোরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। যে সব উপন্যাস কেবল পাঠক চিত্তবিনোদনের জন্য রচিত, তাদের মধ্যে আছে অনেক গোয়েন্দা উপন্যাস এবং ছোটদের জন্য লেখা অনেক আখ্যান। জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি মুর্শিদাবাদ অঞ্চলের প্রকৃতি, মানুষ এবং সীমান্ত অঞ্চলের বিপজ্জনক জীবনকে তাঁর উপন্যাসের উপজীব্য করে তুলেছেন।
১৩৮৩ (১৯৭৬) বঙ্গাব্দের দেশ সাহিত্য সংখ্যায় মুদ্রিত তাঁর উপন্যাসে বর্ণিত মানবচরিত্র সম্পর্কে লেখকের নিজস্ব মন্তব্য— ‘‘এখানে মানুষের মনে আছে সভ্যতাপূর্ব কালের আদিম স্বাধীনতা। প্রকৃতি-সঞ্জাত এই স্বাধীনতার স্বাদ মানুষকে প্রেমিক করে, দার্শনিক করে, আবার যোদ্ধাবেশধারী হত্যাকারীও করে। মানুষ তখন রাষ্ট্র ও অন্যের প্রভুত্ব অস্বীকার করে। সে তখন নিজেকে এমন এক বিশ্বের বাসিন্দা করে যেখানে রাষ্ট্র নেই, আইন নেই, শাসন নেই, সমাজ নেই, তথাকথিত ধর্ম নেই, তার ঈশ্বর সে নিজে। এবং সে প্রকৃতির সন্তান বলে তার কাছে শ্লীলতা-অশ্লীলতা নেই। শুধু আছে জীবন— মুক্ত, উদ্দাম জীবন। এই জীবন আমি দেখেছি, ভালবেসেছি। তাদের কথাই বলতে চেয়েছি।’’ নগর আর নাগরিক মানুষের তুলনায় পল্লি আর মফস্সলের মানববৃত্তান্ত রচনায় সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্য দেখিয়েছেন।
তাঁর সেরা উপন্যাসগুলির মধ্যে রয়েছে ‘তৃণভূমি’ (১৯৭১), ‘মায়ামৃদঙ্গ’ (১৯৮৪) এবং ‘অলীক মানুষ’ (১৯৮৮)। ‘অলীক মানুষ’ একই সঙ্গে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার ও ভুয়ালকা পুরস্কার লাভ করেছিল। বাঙালি হিসেবে যাঁদেরকে নিয়ে গর্ব অনুভব করতে পারি, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তাঁদের অন্যতম।
সাবির চাঁদ
রেজিনগর, মুর্শিদাবাদ
মলুটির মন্দির
সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলার অন্তর্গত মলুটি গ্রামে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। মলুটি একেবারে বীরভূমের গা ঘেঁষে অবস্থিত, এবং বাঙালি অধ্যুষিত গ্রাম। জায়গাটি বিখ্যাত তার মন্দিরের জন্য। প্রখ্যাত সাহিত্যিক কালকূট তথা সমরেশ বসুর ‘কোথায় পাবো তারে’ উপন্যাসে মলুটি গ্রাম, তার ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সর্বোপরি দেবী মৌলীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা আছে।
মলুটি গ্রামে গিয়ে চাক্ষুষ করার সৌভাগ্য হল সেই সব মন্দিরের অনুপম স্থাপত্য ও ভাস্কর্য। বর্তমানে ৭০-৭২টি মন্দির অবশিষ্ট রয়েছে, যার অধিকাংশেরই জরাজীর্ণ অবস্থা। কয়েকটি মন্দির দেখে মনে হল ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংস্কার করা হয়েছে। বাকিগুলো অবহেলিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মন্দিরগুলো সম্পর্কে কোনও তথ্যাবলিও আশপাশে লেখা নেই। গ্রামে গাইড বলে কেউ নেই। মনে হল, গ্রামের মানুষ মন্দিরগুলো সম্পর্কে বাইরের লোককে কিছু জানাতে অনাগ্রহী। একমাত্র মৌলীক্ষা দেবীর মন্দিরটি সুন্দর ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এর সঙ্গেই বামাখ্যাপার ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া, ঝাড়খণ্ড সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার কি মিলিত ভাবে মন্দিরগুলো রক্ষা করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে পারে না?
সুরথ রায়
ভদ্রকালী, হুগলি
আলোর দিশা
লকডাউন কালে যৌনকর্মীদের পরিস্থিতি বিচার করে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত তাঁদের বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সেই সূত্রে ‘স্বীকৃতি’ (সম্পাদকীয়, ৯-১০) যৌনকর্মীদের জীবন-সংগ্রাম নিয়ে যুক্তিযুক্ত বিশ্লেষণ।
১৯৯৫ সালে বাম-সরকারের জমানায় দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির পরিচালনায় সমবায় প্রতিষ্ঠান ‘ঊষা’ গড়ে ওঠার সময়েও আপত্তি উঠেছিল যে, ওই সমবায় ‘অনৈতিক পেশা’-র সঙ্গে যুক্ত। সেই সময় ‘ঊষা’-র অন্যতম উদ্যোক্তা জনস্বাস্থ্য-বিজ্ঞানী ডাক্তার স্মরজিৎ জানা তীব্র প্রতিবাদ করে জানিয়েছিলেন, ‘‘আমি ডাক্তার। আমি পরিষেবা দিই। যৌনকর্মীরা চুরি বা ডাকাতি করেন না, তাঁরাও পরিষেবা দেন।’’ বস্তুত, এমন জোরালো প্রতিবাদের জন্যই সমবায়টি নথিভুক্ত করতে সরকার বাধ্য হয়।
এবার যৌনকর্মীদের খাদ্যের সুরক্ষার জন্য সুপ্রিম কোর্ট রায় দিল, এ দেশের যৌনকর্মীদের অবিলম্বে বিনামূল্যে রেশন দিতে হবে। স্বীকৃতি, অধিকার ও সুরক্ষা আদায়ের পথে এ ভাবেই দু’টি কঠিন বাধা জয় করে যৌনকর্মীরা এগিয়ে গেলেন।
পৃথ্বীশ মজুমদার
কোন্নগর, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy