Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Fairness Cream

(সং)শোধন

সরকারি বিবৃতিতে বলা হইয়াছে, এই সকল পদক্ষেপই করা হইতেছে পরিবর্তিত সময় ও প্রযুক্তির সহিত তাল মিলাইতে।

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

ষাট বৎসরেরও অধিক পুরাতন ‘আপত্তিকর বিজ্ঞাপন আইন’-এর সংশোধনে খসড়া বিল তৈরি করিয়াছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক। জনপরিসরে ‘আশ্চর্য সমাধান’ বলিয়া পরিচিত কতকগুলি ঔষধ ও পণ্যের বিজ্ঞাপন রুখিতেই এই বিল। সময়ের সহিত পাল্লা দিয়া দেশ ও সমাজ দৌড়াইতেছে, কিন্তু আজও বহু ভারতীয় ত্বকের ঔজ্জ্বল্য, শারীরিক উচ্চতা, মেদবৃদ্ধি ও দৈহিক স্থূলতার ন্যায় স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য ও ক্রিয়াকলাপ লইয়া ব্যতিব্যস্ত। সেই ব্যস্ততা ও উদ্বেগের সুযোগ লইয়াই বাজারে ও জনপরিসরে ছড়াইয়া পড়ে রং ফর্সা করিবার প্রসাধনসামগ্রী, আশ্চর্য মলম বা বটিকা, মন্ত্রপূত তাবিজ-কবচের বিজ্ঞাপন। নূতন বিলের খসড়ায় উহাদের কাঠগড়ায় তোলা হইয়াছে, এ-হেন বিজ্ঞাপনদাতার প্রস্তাবিত শাস্তি ভাবা হইতেছে দশ লক্ষ টাকা জরিমানা ও দুই বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড, দ্বিতীয় বারও একই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইলে জরিমানা ও কারাদণ্ড দুই-ই বাড়িবে পাঁচ গুণ পর্যন্ত।

সরকারি বিবৃতিতে বলা হইয়াছে, এই সকল পদক্ষেপই করা হইতেছে পরিবর্তিত সময় ও প্রযুক্তির সহিত তাল মিলাইতে। ভাল কথা, সন্দেহ নাই। প্রতিটি যুগের সামাজিক মূল্যবোধগুলির কিছু বিশিষ্টতা থাকে; এক কালের মূল্যবোধ সময়ান্তরে নিরর্থক হইয়া দাঁড়ায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিধন্য এই যুগে গাত্রবর্ণ বা শারীরিক উচ্চতার ন্যায় বিষয়গুলি যে পরিবার ও জনপরিসরে বিশেষ আলোচনার বস্তু হইয়া উঠিতে পারে, ইহাই আশ্চর্যের। অথচ তাহাই হইয়াছে। গায়ের রঙের কারণে এই কালেও ভারতীয় নারীর বিবাহ হয় না। বিবাহের বিজ্ঞাপনে আজও সুশ্রী বা সুন্দরীর অবধারিত প্রতিশব্দ গৌরবর্ণা; ‘উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা’র ন্যায় বিশেষণ অহরহ ব্যঙ্গ করিতে থাকে বিবাহযোগ্যা নারীটির শিক্ষা-সংস্কৃতি-পেশাগত যাবতীয় গুণ ও দক্ষতাকে। ইহাই যখন একুশ শতকের ভারত, তখন টেলিভিশন হইতে শপিং মল সর্বত্রই যে গাত্রবর্ণ উজ্জ্বল করিবার প্রসাধনীর বিজ্ঞাপন ও পণ্যসম্ভার কাঁপাইবে, অস্বাভাবিক কি? ব্যবসায়িক সংস্থাগুলিও প্রভূত অর্থব্যয়ে ও বিনোদনজগতের নক্ষত্রদের দৌত্যে নিশ্চিত করে, বিজ্ঞাপনগুলি যাহাতে দিবারাত্র সম্ভাব্য উপভোক্তার কায়মনোবাক্যে অধিকার করিয়া থাকে। কখনও বিজ্ঞাপনের ভিতর সুকৌশলে বুনিয়া দেওয়া হয় আয়ুর্বেদ বা ভেষজ দ্রব্যাদির প্রশস্তি। তাহারই ফাঁদে পড়িয়া কেহ মেদবৃদ্ধি রুখিতে ব্যায়ামাদি ছাড়িয়া স্মার্টফোনে আশ্চর্য বটিকার ফরমায়েশ করে, টেলিভিশনের পর্দা কাঁপাইতে থাকে যৌনতাবর্ধক আশ্চর্য ‘ঔষধ’।

আইন করিয়া বিজ্ঞাপন বন্ধ করা যায়, মানুষের চেতনা ফিরানো যায় কি না সন্দেহ। যে পণ্যগুলির বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে বিল আসিতেছে, সেগুলি কেবল মূর্খের ভোগ্য নহে, অজস্র সুশিক্ষিত নারী-পুরুষেরও ব্যবহারধন্য। মনের গভীরে লুকাইয়া থাকা কোন হীনম্মন্যতা শিক্ষা ও রুচিনির্বিশেষে মানুষকে এই সকল বস্তুর প্রতি তাড়িত করিতেছে, তাহা লইয়া গবেষণা হইতে পারে। ভয় দেখাইয়া অনেক সময় কার্যসিদ্ধি হয়, সংশোধিত আইনের জোরে হয়তো ত্বক উজ্জ্বল করিবার প্রসাধন বা সত্বর সুঠাম দেহ লাভের ঔষধ কিনিবার হিড়িকে সাময়িক ছেদ পড়িবে। দীর্ঘলালিত কুসংস্কার দূর করিয়া নাগরিকের মন ও মানসিকতার সংশোধন নিশ্চিত করিবে কোন আইন?

অন্য বিষয়গুলি:

Fairness Cream Advertisement Society
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE