ছবি: সংগৃহীত।
বিলম্বে হইলেও বোধোদয় ঘটিল কলিকাতা পুলিশের। প্রাথমিক ভাবে শহরের রাস্তায় সাইকেল লেন নির্মাণের প্রস্তাব খারিজ করিয়া দিবার পর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কথা জানাইয়াছে তাহারা। পুলিশ যথার্থ ভাবেই বলিয়াছে, কলিকাতার রাজপথের বর্তমান পরিস্থিতিতে সাইকেল লেন নির্মাণ দুরূহ হইলেও অসম্ভব নহে, যদি সকল পক্ষের ঐকমত্য তৈয়ার করা যায়। আপাতত সেই কাজটি সর্বাধিক জরুরি। যে কোনও আধুনিক শহরে সাইকেল লেন উপস্থিত, কিংবা তৈয়ার চলিতেছে। ভারতে চণ্ডীগড়ের ন্যায় পরিকল্পিত শহর তো বটেই, বেঙ্গালুরুর ন্যায় জনবহুল ও যানজটদীর্ণ শহরও সাইকেল লেন বানাইতেছে। বিশ্ব মানিয়াছে, পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত যানটিকে বাদ রাখিয়া শহরের ভবিষ্যৎ যান-পরিকল্পনা হইতে পারে না। অতএব, রাজপথে স্থানাভাব বলিয়া সাইকেল চলাচলের পৃথক পথ নির্মাণ বন্ধ করা চলিবে না। স্থানাভাবের কারণ খুঁজিয়া দেখিতে হইবে। পুলিশ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বদলে সেই প্রয়োজনীয় কাজটি সম্পন্ন হইবে বলিয়া আশা করা যায়।
সঙ্কটের মূলে পৌঁছাইলে আর একটি জরুরি প্রশ্ন আসিবে: কলিকাতার রাস্তায় যতখানি স্থানাভাবের কথা বলা হয়, তাহা কি সত্যই ততখানি? এই শহরের ফুটপাতে হকার পসরা সাজাইয়া বসিয়া থাকেন, পথচারী নামিয়া আসেন গাড়ির রাস্তায়। স্থানবিশেষে সেই রাস্তাতেও অস্থায়ী দোকান বসে, কিংবা স্থায়ী বেআইনি পার্কিং। অর্থাৎ, রাস্তা আছে, কিন্তু সেই রাস্তায় গাড়ির অধিকার নাই। এবং সেই ঘুঘুর বাসাগুলির উপর রাজনীতির আশীর্বাদও এমনই প্রবল যে, সেগুলিকে ভাঙিবার সাধ ও সাধ্য, কোনওটিই প্রশাসনের নাই বলিয়া সন্দেহ হয়। মূল সমস্যা এখানেই। নগর পরিকল্পনার প্রাথমিক যুক্তি বলিবে, সড়কপথ যান চলাচলের নিমিত্ত, ব্যবসা করিবার জন্য নহে। প্রয়োজনে হকারদের পুনর্বাসন দেওয়া হউক, কিন্তু রাস্তার দখল তুলিতেই হইবে। প্রশ্নটি কেবল সাইকেল লেন সংক্রান্ত নহে, সামগ্রিক ভাবে নগরোন্নয়নের। রাস্তা যদি অবাঞ্ছিত ভিড় হইতে মুক্তি পায়, যদি যথাযথ রূপে ব্যবহৃত হইতে পারে, সম্ভবত তাহা হইলে সাইকেল লেনের জন্যও আর স্থানাভাব হইবে না।
শেষাবধি প্রশ্নটি মানসিকতারও। আমাদের সমাজে সাইকেল এবং তাহার আরোহী এখনও যথেষ্ট জাতে উঠে নাই। কলিকাতার রাজপথে সাইকেল লইয়া বাহির হইলে পুলিশি হয়রানির শিকার হওয়া অস্বাভাবিক নহে। চাকার হাওয়া খুলিয়া দেওয়া অথবা আরোহীকে মারধর করা— ভীতি-প্রদর্শনের সমস্ত উপায়ই মজুত। যেহেতু এই শহরে সাইকেল মূলত দরিদ্র মানুষের বাহন, অতএব তাহাকে অবজ্ঞা করাই কি দস্তুর? শহরের পথ মোটরগাড়ির জন্য, সেখানে সাইকেলের ঠাঁই নাই— এই মানসিকতার প্রমাণ রাজারহাটের নবনির্মিত উপনগরীতেও সাইকেল লেনের অপ্রতুলতা। সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে অবশ্য সেই মানসিকতায় কিছু পরিবর্তনের চিত্র ধরা পড়িতেছে। নিউ টাউনে এই যানটিকে জনপ্রিয় করিবার উদ্দেশ্যে ‘সাইকেল শেয়ারিং’ ব্যবস্থা চালু হইতেছে। উপস্থিত উনত্রিশটি সাইকেল লেন ব্যবহারের জন্যও প্রচার চলিতেছে। রাজ্যের কর্তারা সত্যই কলিকাতার রাজপথে সাইকেল চলাচলের জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা করিবার রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখাইতে পারিলে মস্ত পরিবর্তন হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy