প্রতীকী ছবি।
এ বারও কলকাতা পারল না। আলোর রাত আলোর রইল না। দখল নিল ফের সেই শব্দদানব। অনিয়ন্ত্রিত, অপরিমিত, অঢেল শব্দবাজির দাপট দেখল কলকাতা এবং শহরতলি। শব্দদানবকে বিন্দুমাত্র নিয়ন্ত্রণে রাখা গেল না। পরিস্থিতি যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠল অনেকের পক্ষেই সংশয় নেই। তবে অন্য কিছু কি সম্ভব ছিল কলকাতায়? দিল্লিতে বাজি পোড়ানো রুখতে এ বার সক্রিয় হয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। দীপাবলির বেশ কিছু দিন আগেই বাজি বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে। কিন্তু দীপাবলির রাত একটু গাঢ় হতেই সেই দিল্লিও বুঝিয়ে দিল, বুড়ো আঙুল দেখানো হয়েছে যাবতীয় নিষেধাজ্ঞাকে। সেখানে কলকাতা কোনও নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই সুস্থ ভাবে দীপাবলি পালন করবে, এমনটা আমরা আশা করবই বা কী ভাবে?
দীপাবলির সন্ধ্যা থেকেই শ্রবণেন্দ্রিয়ের উপর চাপ অনুভূত হচ্ছিল। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে গেল সেই উৎকট উল্লাস। গোটা শহর জুড়ে শব্দবাজির তুমুল হুঙ্কার অবাধে চলল। আতসবাজির রাশি রাশি ধোঁয়া, পোড়া বারুদের গন্ধ হাওয়া ভারী করে তুলল দ্রুত।
দিল্লি ফি বছর দীপাবলির দিনকয়েক আগে থেকেই এই পরিস্থিতির দিকে এগোতে শুরু করে। এ বছর প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছিল, সেই অবস্থা বুঝি হবে না, বাজির দাপট বোধ হয় কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা রাত ৯টা ছুঁতেই গোটা দিল্লি অন্য চেহারা নিল, শব্দদানবের যেন ঘুম ভাঙল, আড়ষ্টতা কাটিয়ে সে এ বারও বিপুল ত্রাসের সঞ্চার করল সমগ্র শহর জুড়ে।
আরও পড়ুন:সন্ধ্যা নামতেই স্বমহিমায় শব্দদানব, চলল ধরপাকড়ও
শিক্ষা আমাদের কীসে হবে, এ এক খুব বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াল। বাজির দূষণ কতটা, জানি সকলেই। প্রতি বছর আমাদের কত সহ-নাগরিক উৎসবের রাতটা ত্রাসে-আতঙ্কে কাটাতে বাধ্য হন, সেও জানি। উৎসবের রাত পোহালে সকালটা যে নির্মল হয় না, বাতাস যে ভারী হয়ে থাকে প্রবল দূষণে, সে আমরা অনুভব করেছি আগেও। অনেককেই গুরুতর অসুস্থ হতে দেখেছি, হাঁসফাঁস করতে দেখেছি, হাসপাতালে ছুটতে দেখেছি। তাও শিক্ষা নিতে পারিনি বছরের পর বছর ধরে। এ বছরও সেই ছবিতে কোনও ব্যতিক্রম হল না। পরের বছরও নিশ্চয়ই একই অবস্থা দেখব।
এই ভাবেই চলবে তা হলে? কিছুতেই বদলাবে না এই ‘পরম্পরা’? দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাজি বিক্রি বন্ধ রাখতে বলার পরেও যে রূপায়ণ হয় না সে নিষেধাজ্ঞার, দিল্লি তা দেখিয়ে দিল। আর আদালত যেখানে এ বিষয়ে এখনও নাক গলায়নি, সেখানে প্রশাসন যে স্বেচ্ছায় কোনও পদক্ষেপই করবে না, বাজি পোড়ানোয় নিয়ন্ত্রণ আরোপের কথা যে প্রশাসনের ভাবনাতেই আসবে না, বরং দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ যে প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় দেবেন বাজির দাপটকে, তা কলকাতা দেখিয়ে দিল। প্রশাসন এত অকর্মণ্য এবং এত দায়িত্বজ্ঞানহীন যে দেশে, সে দেশে আলোর উৎসব হাজার হাজার নাগরিকের জীবনে অন্ধকারই নামাবে। অন্যথা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy