Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

অনৈতিক

এক বিজেপি বিধায়ক ব্যতিরেকে সর্বসম্মতিক্রমে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধী প্রস্তাব পাশ হইল কেরল বিধানসভায়।

পিনাারাই বিজয়ন। —ফাইল চিত্র

পিনাারাই বিজয়ন। —ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০৪
Share: Save:

এক বিজেপি বিধায়ক ব্যতিরেকে সর্বসম্মতিক্রমে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধী প্রস্তাব পাশ হইল কেরল বিধানসভায়। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানাইয়াছেন, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ ক্ষুণ্ণ করিতেছে ধর্মভিত্তিক নাগরিকত্ব প্রদানের এই আইন। সংবিধানের আদর্শের সঙ্গে সিএএ-র সংঘাতের বিষয়ে একমত শাসক বাম জোট ও বিরোধী কংগ্রেস জোটের সকল বিধায়ক, অতএব নজিরবিহীন ঐকমত্যে সিএএ-র বিপক্ষে স্বর তুলিলেন কেরলের আইনসভার সদস্যরা। বিতর্কের সূচনা হইতেই এই দলগুলি স্পষ্টত সিএএ-র বিরুদ্ধে, সংসদের ভোটাভুটিতেও তাহা নথিভুক্ত, কিন্তু তবু বলিতেই হয়, সিএএ-বিরোধী দলের রাজনীতির গণিতটি এত সরল নহে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ আরও আটটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা সিএএ রুখিতে বদ্ধপরিকর বলিয়া ঘোষণা করিয়াছেন। তাঁহাদের কয়েক জনকে লইয়া বিতর্কের অবকাশ রহিল, কেননা সংসদে তাঁহাদের দলের সদস্যরা সিএএ পাশ করাইবার পক্ষে ভোট দিয়াছিলেন। এই তালিকায় সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য নাম বিহারের নীতীশ কুমার, ওড়িশার নবীন পট্টনায়ক ও অন্ধ্রপ্রদেশের জগন্মোহন রেড্ডি। অনুমান করা যায়, আইন পাশ করাইয়া রাজ্যে ফিরিবার পর বাস্তবের কঠিন জমিটি তাঁহারা চিনিতে পারিয়াছেন, এবং বাধ্যত বিপরীত সুরে বাজিতেছেন। সংসদে ভোটদানে বিরত থাকিয়া এবং পরে মহারাষ্ট্রে সিএএ ঠেকাইবার অঙ্গীকার করিয়া সমতুল পরস্পরবিরোধিতার নজির রাখিয়াছেন শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরেও। তাঁহার অবশ্য শরিক মন রাখিবার দায় আছে।

নীতীশ কুমার, নবীন পট্টনায়ক, জগন রেড্ডি বিষয়ে একটিই কথা বলিবার: তাঁহাদের কার্যক্রম অনৈতিক, ইহার ক্ষমা নাই। তাঁহারা জনতার প্রতিনিধি। তাঁহাদের মনে রাখিতে হইবে, জনতা সিএএ লইয়া রাজপথ দখল করিতে পারে, শির ফুলাইয়া প্রতিবাদ করিতে পারে, কিন্তু আইন পাশ হওয়া বা না হওয়ার পিছনে যে পদ্ধতি, তাহাতে সেই জনতা অংশ লইতে পারে না। সেই কারণেই আইনসভা চালাইবার জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে নিজেদের প্রতিনিধি করিয়া সংসদ ভবনে প্রেরণ করিয়াছে জনতা। প্রতিনিধিরা সংসদে কী ভূমিকা লইতেছেন, জনতা ধরিয়া লয়, তাহা নির্ভর করিবে জনতার অভিপ্রায়ের হিসাবেই— সাংসদের ব্যক্তিগত খেয়ালখুশিতে নহে। ইহাই গণতন্ত্রের মূল কথা। এমন পরিস্থিতিতে, আইনের পক্ষে ভোট দিয়া সেটিকে পাশ করাইবার পর তাহার বিরোধিতা করিবার অর্থ কী? অন্য অর্থ না মিলিলে বুঝিতে হইবে, ইহা দ্বিচারিতা ভিন্ন কিছু নহে। এবং, সমাজের প্রতি অগাধ বিশ্বাসে জনতা যে সমবেত প্রতিবাদে মিলিত হইতেছে, এই ক্ষেত্রে তাহা বিশ্বাসভঙ্গেরই শামিল। আইনসভাতেই সকল জনতার গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চিত হয়। সেইখানে বৃহৎ মিথ্যা-বেসাতি যাঁহারা চালান, তাঁহাদের নৈতিকতা লইয়া প্রশ্ন উঠে।

নাগরিকত্ব আইনের প্রয়োগ লইয়া এখনও চাপানউতোর চলিতেছে। বিভিন্ন রাজ্য প্রতিবাদমুখর হইয়া উঠিতেছে দেখিয়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানাইয়াছেন, সংসদে তৈয়ারি হওয়া আইন মানিয়া চলিতে রাজ্যগুলি বাধ্য। তবে মুখে যাহাই বলুন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিবর্গ যে নিশ্চিন্ত নহেন, তাহা বুঝা যায় নাগরিকত্ব দিবার পুরা প্রক্রিয়াটি অনলাইনে করিবার বিবেচনা হইতেই। বর্তমান আইন অনুসারে, নাগরিকত্বের জন্য জেলাশাসকের মাধ্যমে আবেদন করিতে হয়। সরকারের ইচ্ছা, বিষয়টি তদারকির জন্য নূতন কর্তৃপক্ষ তৈয়ারি হউক। সেই ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির আর হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকিবে না। এ-হেন রাজসূয় যজ্ঞ শেষাবধি হইবে কি না সেই উত্তর এখনও কালের গর্ভে। কিন্তু উহা বাস্তবায়িত হইলে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ভাবধারাটি ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। কেন্দ্রীয় আইন পাশ হইলেও, এত গুরুতর প্রশ্নে রাজ্য সরকারকে অপ্রাসঙ্গিক করিয়া দিবার চেষ্টা বাঞ্ছনীয় হইতে পারে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Kerala State Assembly CAA Resolution Pinarayi Vijayan CPM Congress BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy