সাংবাদিক সম্মেলন করে অনশন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করা হল। —নিজস্ব চিত্র।
আপাতত স্বস্তি ফিরল। কলকাতা প্রেস ক্লাবের সামনে স্কুল সার্ভিস কমিশন চাকরিপ্রার্থীদের যে অনশন চলছিল, ২৯ তম দিনে পৌঁছে তা প্রত্যাহার করা হল। নিঃসন্দেহে স্বস্তির খবর আমাদের সকলের জন্য। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস তথা অনুরোধের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই অনশন উঠে যাওয়া রাজ্য সরকারের পক্ষে স্বস্তির তো বটেই। দিনের পর দিন না খেয়ে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে তুলছিলেন যাঁরা, ২৯ দিন ধরে নিয়ত উদ্বেগের প্রহর কাটাতে থাকা তাঁদের পরিবারগুলোর জন্যও অপার স্বস্তি এনে দিল অনশন প্রত্যাহারের এই ঘোষণা।
যাঁরা অনশন করছিলেন, তাঁদের সবার চাকরি হবে— এমন কোনও ঘোষণা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেননি। গোটা দেশে যখন নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর হয়ে গিয়েছে, তখন এই রকম কোনও ঘোষণা করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু তিনি আশ্বাস দেন যে, আন্দোলনকারীদের দাবিদাওয়ার প্রতি সুবিচার করার চেষ্টাই তিনি করবেন। সেই আশ্বাসে কাজও হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ভরসা রেখে তথা তাঁর অনুরোধকে মর্যাদা দিয়ে জুন মাস পর্যন্ত স্থগিত করে দেওয়া হল অনশন— আন্দোলনকারীরা এই ঘোষণা করলেন।
অনশন অনন্তকাল চলুক, এমনটা কাম্য ছিল না। কিন্তু রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান অনশনস্থলে হাজির হয়ে আশ্বাস না দেওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি প্রত্যাহার না করার যে মানসিক দৃঢ়তা আন্দোলনকারীরা দেখালেন, তাও অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এই ঘটনায় একটা ইতিবাচক দিক রয়েছে। তা হল রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের আশ্বাসে এখনও ভরসা রাখেন নাগরিকরা। একটা নেতিবাচক দিকও রয়েছে। এক মাত্র মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া আর কারও পক্ষে জট খোলা সম্ভব হল না।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
এই প্রবণতাটা তৃণমূলের পক্ষে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। দল তথা সরকারে একগুচ্ছ বড় বড় নাম, একের পর এক হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীর সমাহার। কিন্তু কেউ কোনও কাজে লাগলেন না। কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে ফুটপাথের উপর টানা ২৯ দিন ধরে অনশন চালিয়ে গেলেন চাকরিপ্রার্থীরা, তা নিয়ে সরকার তথা শাসকদলকে নানা মহলের সমালোচনা এবং আক্রমণের মুখে পড়তে হল। কিন্তু হোমরাচোমরা নেতাদের কেউই সমস্যার সমাধান ঘটাতে পারলেন না। মুখেই জগত উদ্ধার করে দেওয়ার মতো নানা সংলাপ বছরভর শোনা যায় যাঁদের মুখে, সঙ্কট নিরসনে তাঁরা বিন্দুমাত্র কাজে এলেন না। যতক্ষণ না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে হস্তক্ষেপ করলেন, ততক্ষণ সঙ্কট বহাল রইল।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে নাগরিকরা এখনও ভরসা রাখতে পারেন, এটা ইতিবাচক লক্ষণ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া সরকারের আর কেউ কাজেই লাগলেন না এই গোটা পর্বে, এই ছবিটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। মন্ত্রিসভা বা সরকারটা তো আরও অনেক ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত। গোটা ব্যবস্থায় প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু কাউকে নাগরিকরা ভরসা করেন না, এক জনকে কেন্দ্র করেই সরকারটা চলে, এ খুব সুখের খবর নয়। এক জন ব্যক্তি একা গোটা একটা সরকার হয়ে উঠবেন কী ভাবে! এক জনেরই মূল্য রয়েছে নাগরিকের চোখে, অন্য কারও উপর ভরসা নেই, এটা খুব স্বস্তির কথা নয়। রাজনীতিক হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে এটা নিঃসন্দেহে সম্মানের বিষয় ব্যক্তিগত ভাবে। কোনও এক জন রাজনীতিকের কথায় নাগরিকদের এত খানি ভরসা থাকা সেই রাজনীতিকের পক্ষে অবশ্যই শ্লাঘার বিষয়। কিন্তু দোর্দণ্ডপ্রতাপ শাসক দলের আর কারও ক্ষমতাই নেই চাকরিপ্রার্থীদের একটা অনশন ভাঙানোর, এই ছবি তৃণমূলের অন্য নেতাদের পক্ষে মোটেই সম্মানের নয়।
কথার দাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিতে। এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের এই অনশনপর্ব তা আরও এক বার বুঝিয়ে দিল। বুঝিয়ে দিল আরও একটা কথা— আট বছর বাংলার শাসন ক্ষমতায় থাকার পরও তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম কথা, তিনিই শেষ কথা। বাকিদের আস্ফালন যেমনই হোক, সুবিশাল বটবৃক্ষের সুপ্রশস্ত ছায়ায় লালিত হওয়া তৃণ ছাড়া আর কিছুই যে হয়ে উঠতে পারেননি এই তৃণমূল নেতারা, অনশনপর্ব তা দেখিয়ে দিল। তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিরকালই বটবৃক্ষ এবং বাকিরা চিরকালই তৃণই ছিলেন। কিন্তু, ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ তথা জমাট তৃণক্ষেত্র হয়ে ওঠাও সম্ভব হল না এই নেতাদের পক্ষে। তাঁরা ক্রমশ তৃণাদপি তৃণবৎ হতে হতেই সময় কাটিয়ে দিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy