Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
অগস্ট ২০২০
Kamala Harris

ও দেশে এ বার ডেমোক্র্যাট ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা

অর্ধেক ভারতীয়, অর্ধেক আফ্রিকান, আর পুরো মার্কিন। সত্যিই কি তিনি নিপীড়িত মানুষের মসিহা? ও দেশে এ বার ডেমোক্র্যাট ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসচার বছর পরে আবার এক নভেম্বরের ভোটের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কমলা হ্যারিস।

ডেমোক্র্যাট ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস।

ডেমোক্র্যাট ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস।

শিশির রায়
শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২০ ০০:৩০
Share: Save:

আত্মকথা বা আংশিক আত্মজীবনী যা-ই বলি, কমলা হ্যারিসের বই দ্য ট্রুথস উই হোল্ড-এর শুরুটা চমৎকার। এবং নাটকীয়ও। তিনি লিখছেন আমেরিকার ইতিহাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ দিনের কথা, ৮ নভেম্বর ২০১৬, যে দিন ভোটের ফল বেরোচ্ছে। তাঁর ন’বছর বয়সি বন্ধুপুত্র আলেকজ়ান্ডার জলভরা চোখে তাঁর কাছে এসে বলছে, “কমলা আন্টি, ওই লোকটা জিততে পারে না। ও জিতবে না, বলো তুমি?” সে দিন কমলা হ্যারিস ভোটে জিতে সেনেটর-ইলেক্ট হয়েছিলেন, আর প্রেসিডেন্ট পদে জিতেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সব জয়ই জয়, আবার তা নয়ও।

চার বছর পরে আবার এক নভেম্বরের ভোটের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কমলা হ্যারিস। এ শুধু সময় নয়, ইতিহাসের সামনে দাঁড়ানো। জীবনে ‘প্রথম’ শিরোপা কম নয় তাঁর। সান ফ্রান্সিসকোর প্রথম মহিলা ও প্রথম অশ্বেতাঙ্গ ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি। ক্যালিফর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল পদে যোগ দেওয়ার পরেও রেকর্ড-বইয়ে সঙ্গী সেই ‘প্রথম’-এর তকমা। প্রথম দক্ষিণ এশীয় আমেরিকান সেনেটরও তিনি। কিন্তু আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনীত প্রার্থী, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেনের বাছাই, এ অন্য ব্যাপার। এই মাঠটা অনেক বড়, খেলাটা— লড়াইটাও।

এবং বিরোধিতাও। খোদ প্রেসিডেন্ট কমলা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলছেন ‘ন্যাস্টি’, ‘ম্যাড উওম্যান’। তা অপছন্দের যে কোনও মানুষ সম্পর্কেই তো ট্রাম্পের মুখ বেলাগাম। কিন্তু দেশের মানুষ? অর্ধেক এশীয়, অর্ধেক কালো এই প্রশাসক সম্পর্কে তাঁদের মনোভাবটা কী? তিন মাস পেরিয়েছে বর্ণবাদবিরোধী ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন, জর্জ ফ্লয়েড থেকে জেকব ব্লেক পেরিয়ে খুন-ধরপাকড়-হেনস্থা আর বিক্ষোভ-বিদ্বেষ, সবই উদগ্র এখনও। মার্টিন লুথার কিং-এর মানবাধিকার আন্দোলনের পর আমেরিকায় সবচেয়ে বড় সামাজিক আন্দোলনের আবহে আসন্ন নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে কমলার মনোনয়ন প্রত্যাশিতই ছিল। সেই কমলা, যাঁকে ক্যালিফর্নিয়া চেনে ‘টপ কপ’ ডাকনামে। অপরাধজগৎ, আইন, পুলিশ, সব যাঁর গুলে খাওয়া। নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনায় ক্ষমাহীন। জীবনের অনেকটা অংশ শক্ত মুঠিতে সামলেছেন ‘সেক্স ক্রাইম’।

তা হলে কি এসে গেল ডেমোক্র্যাটদের আচরিত ও আকাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক উদারপন্থী আদর্শের অবতার, কালো বাদামি নিপীড়িত মানুষের মসিহা? তাঁর দলের সদস্যরাই তত নিশ্চিত নন। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যেও একটু ‘বেশি বামে’ ঝুঁকে যাঁরা, তাঁরা আঙুল তুলছেন আইন-প্রশাসক হিসেবে ওঁর অতি-আগ্রাসী অতীতের দিকে। অনেক সাদা আমেরিকান আবার তাঁর ওপরে খুশি, ওঁর আমলেই বড় সংখ্যায় ‘কালো বদমাশগুলো’ জেলে গিয়েছে! স্মার্ট অন ক্রাইম নামে আগেই একটা বই লিখেছে, এ মেয়ে সত্যিই স্মার্ট। মার্কিন মোট ভোটার-সংখ্যার নিরিখে এশীয় আমেরিকানরা মাত্র ৫%, আফ্রিকান-আমেরিকানরা ১৩%। কালো মানুষরা চিরকাল ডেমোক্র্যাটদের আশাভরসা, কিন্তু ‘টপ কপ’-এর তথ্য-পরিসংখ্যান দেখে তাঁদের অনেকেই সন্দিহান: যতই বলুক ভোটে জিতে এলে আমূল পুলিশি সংস্কার করবে, এ কি ‘আমাদের লোক’?

উল্টো দিকে, রিপাবলিকানদের বক্তব্য, উদারপন্থী? ফুঃ! ও তো আসলে ‘সেনট্রিস্ট’, কেন্দ্রবাদী, যেমন যা চলছে সেই স্থিতাবস্থাই বজায় রাখতে চায়। ওই ভাবখানা একটু প্রোগ্রেসিভ-প্রোগ্রেসিভ, এই যা।

দুই রং, দুই বর্ণ, দুই জাতি উত্তরাধিকার হিসেবে পেয়েছেন কমলা। মা শ্যামলা গোপালন তামিল ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার্কলেতে পড়তে গিয়েছিলেন নিউট্রিশন অ্যান্ড এন্ডোক্রিনোলজি। সেখানেই আলাপ, ক্রমে প্রেম— অর্থনীতির ছাত্র, জামাইকান ডোনাল্ড হ্যারিসের সঙ্গে। বিজ্ঞান ও অর্থনীতির জগতের দুই বাসিন্দার পরে ছাড়াছাড়ি, কমলা আর তাঁর বোন মায়া বড় হয়েছেন মায়ের কাছেই, এবং সবচেয়ে বড় কথা— কালো মানুষদের মধ্যে, সেই পরিবেশ ও সংস্কৃতিতে। পড়েছেন হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটিতে, পরম্পরাগত ভাবে আমেরিকার ‘ব্ল্যাক ইউনিভার্সিটি’গুলোর অন্যতম, যেখানে পড়েছেন টোনি মরিসনের মতো সাহিত্যিকও। আলোকবৃত্তে থাকা মানুষের শেকড়বাকড় নিয়েও টান পড়ে। তাই কমলা কতটা ভারতীয়, কিংবা তিনি নিজের জামাইকান ঐতিহ্যে তত জোর দিচ্ছেন না কেন, সেই নিয়ে চর্চা চলছে। এশীয় আমেরিকানরা আশায় বুক বাঁধছেন, এ বার কি তঁাদের দিন?

মার্কিন গণমাধ্যম তাঁকে বলছে ‘নারী ওবামা’। ‘কালো’, ‘প্রথম’ বিশেষণগুলো ফিরে আসছে বার বার। কমলা হ্যারিস অবশ্য স্বভাবসিদ্ধ হাসির আত্মবিশ্বাসী ফুঁয়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন সব জাতি ও সম্প্রদায়গত ছাঁচ। ওবামার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই জানিয়েছেন, ‘‘আই হ্যাভ মাই ওন লেগ্যাসি।’’ অ্যান আমেরিকান জার্নি— তাঁর আত্মকথার উপশিরোনাম সার্থক করেই, সমস্ত অভিধার ও-পারে তাঁর পাখির চোখ এখন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ। করোনাপীড়িত আমেরিকার মানুষের স্বাস্থ্য, কালো-ধলো-হলদে-বাদামি মানুষের বেঁচে থাকা, চাকরি, শিক্ষা-সহ যে ইচ্ছেগুলো তাঁর মুঠো করা ডান হাতে ধরা, সেগুলো পূরণের গল্প সময়ই বলবে!

অন্য বিষয়গুলি:

Kamala Harris US Poll
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy