Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

বনপথে ট্রেনের গতিবৃদ্ধি হাতিদের জন্য নিরাপদ কি?

কবে বন্ধ হবে হাতিদের অকালমৃত্যু? কেনই-বা জঙ্গল চিরে যাওয়া রেললাইন হয়ে উঠবে হাতিদের মরণফাঁদ? লিখছেন অরিন্দম সাহাআলিপুরদুয়ার জংশন থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকার জঙ্গল চিরে গিয়েছে রেল লাইন।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৯ ০৫:৫২
Share: Save:

আবারও রক্ত ঝরল। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল আরও একটি তরতাজা বন্যপ্রাণ। ৩০ জুন রবিবার রাতের ঘটনা। ডুয়ার্সের বিন্নাগুড়ি ও বানারহাট স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর কথা অনেকের স্মৃতিতেই বেশ টাটকা। ঘটনার পরে দায় নিয়ে চাপানউতোরের কথাও অনেকের জানা। একদিকে রেলের তরফে দাবি করা হয়, লাইনের কাছে হাতির আনাগোনা নিয়ে কোনও খবর জানায়নি বন দফতর। অন্যদিকে বন দফতরের তরফে দাবি করা হয়, অন্য দিন যেমন হয়, তেমনই লাইনের কাছে হাতি থাকার খবর দেওয়া হয় রেলে। এমনটা অবশ্য নতুন নয়। আগেও যতবার ট্রেনের ধাক্কায় হাতিমৃত্যুর ঘটনা হয়েছে, তারপর দায় নিয়ে এমন তরজা, চাপানউতোর বাসিন্দারা দেখেছেন।

এ বারও ঠিক যেমনটা হয়েছে।

আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকার জঙ্গল চিরে গিয়েছে রেল লাইন। দূরত্ব প্রায় ১৬৮ কিলোমিটার। ওই পথেই রয়েছে জলদাপাড়া, বক্সা, মহানন্দা, গরুমারা, চাপরামারির মতো পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চল এলাকা। তার মধ্যে অন্তত ২২ কিলোমিটার এলাকা হাতির করিডোর হিসেবে চিহ্নিত। ২০০৪ সাল থেকে ওই লাইনটি ব্রডগেজে রুপান্তরিত হওয়ার পর থেকে বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর প্রবণতা বেড়েছে। প্রায় দেড় দশক ধরে প্রায় ফি বছর ওই রুটে ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মৃত্যুর ঘটনা রুটিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মে থেকে নভেম্বর মাসে ধান, ভুট্টা, কাঁঠালের মরসুমে পরিবেশপ্রেমীদের একাংশের অভিযোগ, ওই সময়ে অন্তত ৬০টির বেশি হাতির মৃত্যু হয়েছে। সামগ্রিক ভাবেও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আওতাধীন এলাকায় গত চার বছরে ৩৭টি হাতির মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করেন অনেকে। পরপর উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার জংশন- শিলিগুড়ি রুটে ট্রেনের ধাক্কায় হাতিমৃত্যুর ঘটনার উদাহরণও কম নেই।

জুনের শেষ রবিবার রাতের দুর্ঘটনা তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন। বরাবরই ওই জঙ্গল রুট চিন্তার কারণ হয়ে রয়েছে। দেশের রেলের অন্য ডিভিশন এলাকাতেও অবশ্য এমন উদাহরণ রয়েছে। সব মিলিয়ে হাতিমৃত্যুর সংখ্যাও ওই সময়কালে শতাধিক। অথচ ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু ঠেকাতে কত বৈঠক, সিদ্ধান্ত কতবারই না হয়েছে। নেওয়া হয় লাইনের বাঁকে হর্ন বাজানো, শক্তিশালী সার্চলাইট ব্যবহার, মৌমাছির শব্দের রেকর্ডিং ব্যবহার, বন-রেলের সমন্বয় বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ করা হয়। ফেন্সিং থেকে আন্ডারপাস তৈরি তো বটে, উড়ালপুল তৈরির আলোচনা চলেছে। ডুয়ার্সের জঙ্গলপথে ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারেও আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও হাতিমৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। বরং নানা দুর্ঘটনার নেপথ্যে কিন্তু ট্রেনের গতিবেগ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

রাতের অন্ধকারে বা শীতে কুয়াশার মরসুমে শুধু নয়, দিনের আলোতেও ট্রেনের ধাক্কায় হাতিমৃত্যুর উদাহরণ আছে।

কিন্তু এ ভাবে আর কতদিন বুনোরা ছিন্নভিন্ন হয়ে লুটিয়ে পড়বে মৃত্যুর কোলে? কবে বন্ধ হবে হাতিদের এমন অকালমৃত্যুর মিছিল? কেনই-বা আধুনিক সভ্যতার যুগেও জঙ্গল চিরে যাওয়া রেললাইন হয়ে উঠবে হাতিদের মরণফাঁদ? প্রাসঙ্গিক ভাবে প্রশ্ন কিন্তু থাকছেই। হয়তো-বা অনেকের কাছে অপ্রিয়, তবে বাস্তবের জিজ্ঞাসা এমনই। সদুত্তর মিলবে কি? কে বা কারা দেবেন এমন অকালমৃত্যু বন্ধের নিশ্চয়তা? যাঁদের সেই উত্তর দেওয়ার কথা, তাঁরা কেন শুধুই দায় এড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন? ঘটনার কিছুদিন পরে যা হয়ে যায় স্রেফ 'ক্লোজড চ্যাপ্টার’। তাই খামতিগুলি আন্তরিক ভাবে দেখা দরকার। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে নতুন করে সমীক্ষা করে একটা রূপরেখা তৈরি করাও জরুরি, যাতে অনেক বেশি নিশ্চিত করা যায় হাতিসুরক্ষা। চাপানউতোর, দায় এড়ানোর চেয়ে বেশি জরুরি বন্যপ্রাণ রক্ষা। ডুয়ার্সের বন পথে রেলের গতি বাড়ানোর ভাবনা ওই উদ্যোগে, শঙ্কার বড় কাঁটা।

মতামত লেখকের ব্যক্তিগত

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant Environment Indian Railways
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy