নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র
ধর্মপরিচয়ে মুসলমান হইলে নরেন্দ্র মোদীর ভারতে তাঁহাকে অন্য ধর্মাবলম্বী অপেক্ষা দুইশত দশ গুণ অধিক জরিমানা দিতে হইবে। ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হইবার পরেও যদি বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের কোনও নাগরিক এই দেশে থাকিয়া যান, তাহা হইলে সেই ব্যক্তিকে একশত টাকা জরিমানা দিতে হয়। আইনের শাসনের স্বাভাবিক নিয়মে এ-যাবৎ কাল সেই জরিমানার অঙ্কটি সকল নাগরিকের ক্ষেত্রেই একশত টাকা ছিল। কিন্তু এক বৎসর হইল জরিমানার অঙ্কে বৈষম্যের নীতি লইয়াছে সরকার। উক্ত নাগরিক হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, শিখ হইলে টাকার পরিমাণ একশতই রহিতেছে, কিন্তু মুসলমান হইলে একশতের পরিবর্তে একুশ সহস্র টাকা দিতে হইতেছে। বৈষম্য কেন তৈয়ারি করা হইল, সেই বিষয়ে সরকার স্পষ্ট কোনও কারণ জানায় নাই। ইহাকে অভ্যন্তরীণ বিষয় বলিয়া বৈদেশিক শোরগোল ঢাকিতে যথেষ্ট তৎপরতা দেখা যাইতেছে। উক্ত মডেলটির সহিত নূতন নাগরিকত্ব আইনের আশ্চর্য মিল দেখিয়া অনুমান করিতে হয়, ওই তিন দেশে কাহারা ধর্মীয় ভাবে সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু, তাহাই এই ক্ষেত্রে বিবেচ্য।
তাহাই যদি হয়, এই নীতি সম্পূর্ণত অসাংবিধানিক। বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তান তাহাদের আপন নাগরিককে কী রূপে বিবেচনা করিবে, ইহাতে ভারতের কিছু বলিবার থাকিতে পারে না। ভারতে ভিসা সংক্রান্ত জরিমানা লইবার ক্ষেত্রেও উহা বিবেচ্য হইতে পারে না। ভারত তাহার আইন অনুসারে সকল বিদেশি নাগরিককে সমান চোখে দেখিবে, ইহাই সঙ্গত। অন্যথায়, ইহাকে অপর দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনধিকার চর্চা বলিয়া অভিযুক্ত করিতে হয়। বস্তুত, ইহা হইল জঙ্গলের নীতি— জোর যাহার মুলুক তাহার। আপন দেশে যে ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষেরা সংখ্যালঘু, তাঁহাদের আশ্বাস দিবার পরিবর্তে আরও ভীতি সঞ্চারের প্রয়াসই করিতেছে বর্তমান শাসকেরা। সিএএ এবং নয়া ভিসা নীতির ক্ষেত্রেও সংখ্যাগুরুবাদের সেই বাহুবলী নীতি চলিতেছে।
ঠিক যে যে কারণে সিএএ মানিয়া লওয়া যায় না, সেই সকল কারণেই এই ভিসা নীতিও আপত্তিজনক। উক্ত বিলে যে বিভাজনের কথা বলা হইয়াছে, ভিসা নীতিতেও তাহারই প্রকাশ। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হইল, নূতন নাগরিকত্ব বিল সংসদে উত্থাপিত হওয়া ইস্তক যে বিতর্কের ঝড়ঝঞ্ঝার সাক্ষী হইয়াছে দেশ, বিতর্কিত ভিসা নীতির কপালে তাহার সিকিভাগও জুটে নাই। সিএএ লইয়া বিরোধী দলগুলি কিছু কথা তুলিয়াছে। অথচ, এক বৎসর পার হইলেও সমরূপ বৈষম্যমূলক ভিসা নীতি লইয়া তাহাদের অস্ফুট কোনও স্বরও কর্ণগোচর হয় নাই। মনে পড়িতে পারে, গত নভেম্বরে এই আইনের জাঁতাকলে আটকাইয়া পড়িয়াছিলেন স্বয়ং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক ইহাকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলিয়াছিল। তাহার পরেও ভারতে কেহ ইহা লইয়া মুখর হইয়াছিলেন বলিয়া জানা নাই। কোনও বিষয় লইয়া রাজনৈতিক দল কথা তুলিলে তবে তাহা সাধারণ জনতার নিকট পৌঁছাইয়া থাকে। প্রথম প্রক্রিয়াটি হয় নাই বলিয়া জনতাও এই বিষয়ে জ্ঞাত নহে। যে মৌন হিরণ্ময় নহে, তাহা লইয়া ভয় পাইতেই হয়। শাসকের একচেটিয়া আগ্রাসন যে ক্ষতি করিতেছে, বিরোধীদের এই নীরবতা ক্রমশ সেই ক্ষতির পরিপূরক হইয়া উঠিতেছে। এখনও না জাগিতে পারিলে আর ভরসা নাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy