আপনাকে সবিনয়ে একটা প্রশ্ন করি। আপনি লাদাখ গেলেন, সেনা ছাউনিতে নিজে হাতে করে বীর জওয়ানদের মুখে লাড্ডু তুলে দিলেন, চিনের দিকে মাথা উঁচু করে তাকালেন , বললেন ‘সম্প্রসারণবাদ’ বরদাস্ত করবেন না। এ পর্যন্ত আপনি একশোতে একশো। মাথায় ক্যাপ পরে, জ্যাকেট পরে খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল আপনাকে। সিন্ধু নদের তীরে আপনার জমজমাট উপস্থিতি, সেখানেও আপনি একাই একশো। রাজনাথ সিংহের যাওয়ার কথা ছিল, কেউ জানত না আপনি যাবেন, হোয়াট আ সারপ্রাইজ, আপনি চমকে দিতে ভালবাসেন আগেও দেখেছি। কিন্তু আমার প্রশ্নটা হল এই যে, আপনি সব করলেন, আসল কথাটাই বললেন না— চিন লাদাখের জমি দখল করে আছে।
সেটা লাদাখের মানুষ বলছে, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, সামাজিক মাধ্যমে ভিডিয়ো ঘুরছে। আপনি এক বারও চিনের নাম মুখে নিলেন না? চিনকে যদি চিন বলতে না পারেন তা হলে কোদালকে কোদাল বলতেও পারবেন না।
চিনা অ্যাপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। ছবি: এপি।
ভারত তার নিজের ভূখণ্ডে রাস্তা বানাবে চিন সেটা চায় না। ইয়ার্কি নাকি। আমরা কোথায় রাস্তা বানাব সেটা আমাদের দস্তুর, চিন ঠিক করে দিতে পারে না। টিকটক-সহ আমরা ৫৯ খানা অ্যাপ ব্যান করেছি। তাতে ধোয়া তুলসীতলা হয়ে যায়নি আমাদের মন। যখন বীর জওয়ানদের লাশ কফিনে চড়ে গ্রামের উঠোনে এসে নামে, তখন সারা গ্রামের মানুষ হাতে রাইফেল তুলে নিতে চায়। সেই অদৃশ্য রাইফেলগুলো আপনি দেখতে পেলেন না? দেখতে পেলেন না, গ্রামের মানুষগুলোর ব্যথা ও বহ্নি ?
আরও পড়ুন: দুর্বলেরা কখনও শান্তি স্থাপন করতে পারে না, সাহসীরা পারে: মোদী
আপনি এক এক করে সমস্ত বীর জওয়ানদের মুখে লাড্ডু তুলে দিচ্ছেন, তাঁরা মনোবল ফিরে পাচ্ছেন, মনের জোর ফিরে পাচ্ছেন, কিন্তু একটা করে লাড্ডু তুলে দিচ্ছেন আর একটা করে মা ভাবছেন এ বার কি তাঁর ছেলে? এ বার কি তাঁর ছেলে ফিরে আসবে রাজকীয় মর্যাদায়?
হিন্দু ধর্মে ক্ষাত্রতেজ বলে একটা কথা আছে। সেটা দলিত পেটানোর সময় দেখতে পাই। সাংবাদিককে গুলি করার সময় দেখতে পাই। লেখকদের হত্যা করার সময় দেখতে পাই । গেলেন সিন্ধু নদ পর্যন্ত, আমরা সবাই সাহস পেলাম, চমকে উঠলাম আপনার বীরত্ব দেখে। কিন্তু চিনকে চিন বলতে পারলেন না। কিসের এত ধরি মাছ না ছুঁই পানি? বলতে পারলেন না, চিন তুমি লাদাখের জমি থেকে সরে যাও। ভেতরে ভেতরে অন্য গল্প নেই তো? বুঝলে উপেন এ জমি লইব কিনে?
চোখের জলে শেষ বিদায়। ছবি: রয়টার্স।
চিন আজ পর্যন্ত ভারতের কোনও কাজে আসেনি। ভারত কোনও দিন কোনও চেয়ারম্যান চায়নি। তবু কারা যেন চিনের চেয়ারম্যানকে নিয়ে এসে দাঁড় করিয়েছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ছাত্র গণহত্যার সাক্ষী তিয়েন আনমেন স্কোয়্যার। তবু আমরা আমাদের কলেজ স্কোয়্যারে চিনের প্রশংসা করে এলাম। হাক্কা চাউমিন এসে চেয়ারম্যানকে ভুলিয়ে দিয়েছে। চিনের চাইতে কিউবা অনেক মানবিক। ইটালিতে তারা ডাক্তার পাঠিয়ে করোনা সারায়, যে করোনা চিন আমাদের গিফট পাঠিয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারত তার ভূমিকা স্থির করে নিয়েছে, বিশ্বকে সেটাই বোঝালেন মোদী
চলুক। ও পথেই সমাধান আসবে। যুদ্ধ হওয়ার কোনও চান্স নেই। এক দিন সকালে উঠে দেখলাম অরুণাচল চিনে ঢুকে গিয়েছে আর লাদাখ ঘিরে চিনের প্রাচীর উঠছে। এ কোনও দিন হবে না। যেটা হবে সেটা ভোট। দেশপ্রেম এখন বর্ডারে তৈরি হয়, দিল্লিতে তার ডিস্ট্রিবিউটর থাকে। ভোটের আগে তার ক্যাপসুল পাওয়া যায় পাড়ায় পাড়ায়। বার্নার্ড শ একটা কথা বলেছিলেন ইওরোপের যুদ্ধ নিয়ে— ‘সোলজারিং ইজ আ ট্রেড লাইক এনি আদার ট্রেড’। যুদ্ধ একটা ব্যবসা।
মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ। —নিজস্ব চিত্র।
আপনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী, আপনি লাদাখে দাঁড়িয়ে বললেন, কৃষ্ণের বাঁশি এবং সুদর্শনচক্র আমাদের দুই আছে।
আশা করি, আপনি বাঁশি বাজাতে সিন্ধু নদের তীরে যাননি। সুদর্শন চক্র ছুড়তেও যাননি।
আমরা চাই, লাদাখ চায়, তার জমি ফেরত দিক চিন।
আপনি সেটা বলুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy