Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ভয়ঙ্কর

অতি দুর্ভাগা সেই দেশ যাহার সমাজ সম্পর্কে বাহিরের দুনিয়া আতঙ্কিত আশঙ্কা প্রকাশ করে, আর সেই সমালোচনায় কান না দিয়া তাহাকে নির্লজ্জ ভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করিতে হয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৯ ০০:০৫
Share: Save:

ঝাড়খণ্ডের যুবক আনসারির খবর শুনিয়া কী বলিতেছেন রবীশ কুমার, এবং নরেন্দ্র মোদী? প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁহার ব্যস্ততার মধ্যেও নিশ্চয় এমন ভয়ঙ্কর খবরটি বিশদে পড়িবার সময় পাইয়াছেন, তাঁহার সরকারের মুখপাত্র রবীশ কুমারের কানেও নিশ্চয় পৌঁছাইয়াছে ঘটনার বিবরণ। সেই বিবরণে নিশ্চয় স্পষ্ট যে এই মুসলিম যুবকটিকে চোরের অপবাদে মুখে সমানে ‘জয় শ্রীরাম’ বলিতে বলিতে প্রাণত্যাগ করিতে হইয়াছে। বিবরণ ইহাও বলিতেছে যে টানা আঠারো ঘণ্টা জনতার নির্দয় পিটুনি খাইবার মধ্যে কোনও পুলিশ বা প্রত্যক্ষদর্শী তাঁহাকে বাঁচাইতে আসেন নাই। যখন পুলিশ আসিয়া তাঁহাকে জেল হেফাজতে পাঠাইয়াছে, তখন আর ছেলেটির বাঁচিবার ক্ষমতা নাই। সমাজকর্মীরা যে দাবি করিতেছেন, হাজতেই তাঁহার মৃত্যু হইয়াছিল, তাহার পরই হাসপাতালে লইয়া যাওয়া হয়— সেই দাবিটিও যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য, সুতরাং তদন্তের অপেক্ষায়। যে প্রশাসন এই ধরনের গণনির্যাতনে হত্যা থামাইতে পারে না, কী ভাবে তাহার কাছ হইতে সুষ্ঠু তদন্ত আশা করা যায়, সেই প্রশ্নও রহিয়া যায়। এমন ঘটনা যে এই প্রথম ঘটিল না, তাহাও সত্য। ২০১৬ সাল হইতে কেবল ওই ঝাড়খণ্ড রাজ্যেই তেরো জনকে পিটাইয়া মারা হইয়াছে। এই প্রেক্ষাপটে আর এক বার মনে করা দরকার যে, ভারতে সংখ্যালঘুদের প্রতি অসহনশীলতা উদ্বেগজনক ভাবে বাড়িতেছে, এই মর্মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট প্রকাশিত হইলে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সরকারের মুখপাত্র রবীশ কুমার সঙ্গে সঙ্গে চাঁচাছোলা উত্তর দিয়াছেন যে ভারতের ব্যাপারে কাহারও নাক গলাইবার প্রয়োজন নাই। ভারত যে তাহার বহুত্ববাদী (‘প্লুরালিস্টিক’) সমাজের প্রতি সহনশীলতা ও যোগাত্মক মনোভাব লইয়া চলে, সে কথা নাকি সকলেই অবহিত!

অতি দুর্ভাগা সেই দেশ যাহার সমাজ সম্পর্কে বাহিরের দুনিয়া আতঙ্কিত আশঙ্কা প্রকাশ করে, আর সেই সমালোচনায় কান না দিয়া তাহাকে নির্লজ্জ ভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করিতে হয়। অন্য কোনও দেশ ভারতের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করিতেছে না, কেবল আশঙ্কাই প্রকাশ করিতেছে। দুনিয়ার সকল দেশেরই অধিকার রহিয়াছে অন্যান্য দেশ বিষয়ে মন্তব্য করিবার। ভারতের বিষয়ে সেই মন্তব্য যাহাতে সুখকর হয়, তাহার জন্য ভারতকেই চেষ্টা করিতে হইবে। ভারতীয় সমাজ ও রাজনীতি সেই চেষ্টা যথেষ্ট পরিমাণে করিতেছে তো? এই একটি ঘটনাই বলিয়া দেয় যে, রক্ত শীতল করা হিংসার আগ্রাসন চলিতেছে নাগরিকের প্রতি। সেই নাগরিকদের বাঁচাইবার জন্য পর্যাপ্ত চেষ্টা করা হইতেছে তো? কেবল ভোটে জিতিয়া আসিলেই নিজেদের ‘ঠিক’ ও ‘ন্যায্য’ প্রমাণ করা যায় না। সরকারের সমর্থক-অসমর্থক নির্বিশেষে নাগরিকের সুরক্ষা সরকারের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালিত না হইলে দেশের ভিতরে বা বাহিরে সমালোচনার মুখ বন্ধ করা যাইবে না।

যাঁহারা তর্ক জুড়িবেন যে, ভারতে কি আর কখনও গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা ঘটে নাই, অন্য রাজ্যেও কি এমন অনাচার ঘটিতেছে না, ইত্যাদি, তাঁহাদের স্বীকার করিতে হইবে, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ অনভিপ্রেত হইলেও তাহার সহিত সংখ্যালঘু-নির্যাতনের তফাত বিরাট। ভাবিয়া দেখিতে হইবে যে, মুখে ‘জয় শ্রীরাম’ বুলি লইয়া মার খাইতে খাইতে মরিবার ঘটনা বিজেপি শাসনের আগে ঘটিয়াছে কি না। সংখ্যালঘুরা যদি কোনও শাসনে নিজেদের অসুরক্ষিত বলিয়া মনে করেন, সেই নিরাপত্তাহীনতার প্রতিকার সরকার ছাড়া আর কেহই করিতে পারে না। বিপুল জনাদেশ লইয়া যে দল সরকার গড়িতে ফিরিয়া আসিয়াছে, আগের দফাতেও সেই দলের সমর্থকদের বিরুদ্ধে এই একই অভিযোগ ছিল। দেশের ‘প্লুরালিস্টিক’ বা বহুত্ববাদী সমাজের যত্ন সেই সরকারি দল করিতে পারিতেছে না, ইহার কি আরও প্রমাণ চাই?

অন্য বিষয়গুলি:

Lynching India USA Narendra Modi Ravish Kumar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy