Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

দোষ কাহার

In an accident not only some unlucky people die, but also the belief on the rule of law weakensকেন ব্যর্থ পুলিশ? যদি আরসালান পারভেজ আইন ভাঙিয়া থাকেন, তাঁহাকে সংযত করিতে পুলিশের বাধা কী ছিল? গতিসীমা লঙ্ঘনের কতগুলি ঘটনা ঘটিলে পুলিশ চালকের লাইসেন্স বাতিল করিত?

ধৃত আরসালান পারভেজ। ছবি: ফেসবুক।

ধৃত আরসালান পারভেজ। ছবি: ফেসবুক।

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৯ ০০:৪৮
Share: Save:

চলন্ত গাড়ির আঘাতে কেহ আহত বা নিহত হইলে তাহাকে ‘দুর্ঘটনা’ বলা হইয়া থাকে বটে। কিন্তু কলিকাতার বুকে যে ভয়ানক কাণ্ডে দুই বাংলাদেশি প্রাণ হারাইলেন, দুই নগরবাসী আহত হইলেন, তাহাকে নিছক দুর্ঘটনা বলিতে দ্বিধা হয়। পুলিশের মতে, ঘাতক গাড়িটি প্রচণ্ড গতিতে ছুটিতেছিল, এবং দুর্ঘটনার অব্যবহিত পূর্বে তাহা লালবাতির নিষেধাজ্ঞাও মানে নাই। তদন্তে প্রকাশিত যে, ওই গাড়িটি গত নয় মাসে মোট আটচল্লিশ বার ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করিয়াছে। তাহার মধ্যে চল্লিশ বারেরও অধিক গাড়িটি গতিসীমা অতিক্রম করিয়াছিল। প্রতি বার একই চালক গাড়িটি চালাইয়াছেন কি না, তাহা অবশ্য জানা যায় নাই। কিন্তু যিনি শনিবারের ঘটনায় অভিযুক্ত, সেই আরসালান পারভেজই যদি ক্রমান্বয়ে এত বার অপরাধ করিয়া থাকেন, তাহা অত্যন্ত উদ্বেগের কথা। বারবার আইন ভাঙিয়া যদি কোনও গাড়িচালক পার পাইয়া থাকেন, তবে তাঁহার ঝুঁকি লইবার ইচ্ছা কমিবার কথা নহে। গভীর রাত্রিতে প্রায়ই কলিকাতার প্রধান রাজপথগুলিতে প্রচণ্ড গতিতে গাড়ি এবং মোটরবাইক ছুটিতে দেখা যায়। কখনও নিয়ন্ত্রণ হারাইয়া, কখনও অপর গাড়ি কিংবা পথচারীকে আহত করিয়া তাহারা ‘দুর্ঘটনা’ বাধাইয়া বসে। কলিকাতার ট্রাফিক পুলিশ এখন নাকি পূর্বের চাইতে তৎপর হইয়াছে, নিয়মিত নজরদারি এবং গাড়ির চালকদের জরিমানা করিতেছে। সরকারের দাবি, তাহাতে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু কমিয়াছে। অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু দুর্দান্ত গতিতে গাড়ি ছুটাইবার অপরাধ পুলিশ দমন করিতে পারে নাই। শনিবারের ঘটনা ব্যতিক্রম নহে।

কেন ব্যর্থ পুলিশ? যদি আরসালান পারভেজ আইন ভাঙিয়া থাকেন, তাঁহাকে সংযত করিতে পুলিশের বাধা কী ছিল? গতিসীমা লঙ্ঘনের কতগুলি ঘটনা ঘটিলে পুলিশ চালকের লাইসেন্স বাতিল করিত? নাগরিকের অনুভব, এ বিষয়ে পুলিশ ‘লোক বুঝিয়া’ আইনের প্রয়োগ করে। নিরীহ মানুষ সর্বদা পুলিশের রক্তচক্ষু দেখিতেছেন, যৎসামান্য অপরাধেও তাঁহাদের জরিমানা না গুনিয়া নিষ্কৃতি নাই। কিন্তু প্রভাবশালী, বিত্তবান ব্যক্তিদের জেল-জরিমানা করিবার ঝুঁকি এড়াইয়া যায় পুলিশ। থানায় ঢুকিয়া পুলিশকে প্রহার করিবার মতো গুরুতর অপরাধের প্রতিও যে পুলিশ সহিষ্ণু ও উদাসীন হইতে পারে, তাহা নগরবাসী কিছু দিন পূর্বেই দেখিয়াছেন। যে দুর্ঘটনাগুলি বারবার সংবাদে উঠিয়া আসে, তাহাদের মধ্যে একটি সাদৃশ্য এই যে, চালকেরা প্রায়ই প্রভাবশালী বা বিত্তশালী পরিবারের সদস্য। এমন কেবল এ রাজ্যেই ঘটিতেছে এমন নহে। দিল্লিতে ১৯৯৯ সালে এক প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান সঞ্জীব নন্দা গভীর রাতে তীব্র গতিতে গাড়ি চালাইয়া তিন পুলিশকর্মী-সহ ছয় জনকে হত্যা করেন। তাঁহাকে দোষী সব্যস্ত করিতেও বিস্তর কাঠখড় পোড়াইতে হইয়াছিল। দৃষ্টান্ত কম নাই।

অতএব এমন ‘দুর্ঘটনা’ ঘটিলে যে কেবল কিছু হতভাগ্য নিরপরাধ মানুষের প্রাণ যায় না, আইনের শাসনের উপর মানুষের প্রত্যয় এবং বিশ্বাসও দুর্বল হইয়া যায়। যে যুবক অভিযুক্ত, অপরাধ প্রমাণিত হইলে তিনি শাস্তি পাইবেন। কিন্তু পূর্বেই পুলিশ তাঁহাকে লঘু শাস্তি দিলে হয়তো আজ তাঁহাকে গুরুদণ্ড পাইতে হইত না। ভারতের দুই অতিথি যে এমন মর্মান্তিক ভাবে প্রাণ হারাইলেন, ট্রাফিক প্রশাসনের অবহেলায়, ইহা কি লজ্জার যথেষ্ট কারণ নহে?

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Accident Death Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy