Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

লজ্জা

সরকারি অনুদ্যমও কম লজ্জার নহে। দিল্লি সরকারের দূষণ রোধে সার্বিক পরিকল্পনা তৈয়ারি করিয়া যুদ্ধকালীন উদ্যোগে ঝাঁপাইয়া পড়িবার কথা। তাহারা যে সেই কর্তব্য সম্পাদন করিবে, এমন ভরসা নাই।

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৩৮
Share: Save:

দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত-শ্রীলঙ্কা অমীমাংসিত টেস্ট ম্যাচে বিরাট কোহালির দ্বিশতরানকেও ছাপাইয়া প্রধান বিষয় হইয়া দাঁড়াইল দূষণ। শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়রা মুখোশ পরিয়া খেলিলেন। ক্রিকেট উদ্যোক্তারা হয়তো গোসা করিলেন। এমন কথাও বাতাসে ভাসিল যে, দূষণ তেমন কিছু অধিক মাত্রায় ছিল না, যাহাতে মুখোশ পরিয়া খেলিতে হয়, আর ভারতীয় খেলোয়াড়রা তো একই পরিবেশে খেলিলেন, তাঁহাদের তো কোনও অসুবিধা হইল না! যুক্তি বটে! ভারতীয় খেলোয়াড়রা দূষণে অভ্যস্ত হইয়া উঠিয়াছেন বলিয়া শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়দেরও দূষণ সহনে পারদর্শী হইয়া উঠিতে হইবে? শ্রীলঙ্কায় দূষণের পরিমাণ তুলনায় কম, সুতরাং হইতেই পারে যে, তাঁহারা প্রতি নিশ্বাসে বিষপান করিয়া বাঁচিতে শিখেন নাই। বস্তুত, এই রূপ পরিবেশ পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ মাঠে নামিত কি না সন্দেহ! সত্য ইহাই যে, দিল্লি টেস্টে যাহা ঘটিয়াছে, তাহা লজ্জার। কলঙ্কের। এই ঘটনায় লজ্জায় মাথা হেঁট করা ব্যতীত ভারত এবং ভারতবাসীর অন্য কোনও উপায় নাই।

অথচ উপায় ছিল। সেই উপায় কার্যকর করিবার যথেষ্ট যুক্তিও ছিল। মাত্র এক মাস পূর্বেই দিল্লির দূষণ পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ লইয়াছিল। সেই পরিস্থিতি বিবেচনা করিয়া আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসাবে খেলার স্থান বদল করা যাইত। বিশেষ কারণে এমন ঠাঁইবদল যে পূর্বে কদাপি হয় নাই, তাহা বলা যাইবে না। বস্তুত, গত কয়েক বৎসর যাবৎ বছরের এই নির্দিষ্ট সময়ে দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকার পরিবেশ পরিস্থিতি ভয়ংকর হইয়া উঠিতেছে। সুতরাং, এই সময় দিল্লির মাঠে খেলা নিধার্রণ করাটা কেবল অসংবেদনশীল মনোভাবের পরিচয় নহে, কাণ্ডজ্ঞানহীনতার প্রমাণও বটে। স্বাভাবিক বোধ থাকিলেই এই সমস্যা নিবারণের বুদ্ধি জাগ্রত হয়। সেই বোধের কথাই শোনা গিয়াছে জাতীয় পরিবেশ আদালতের বয়ানে। তাঁহারা এই অবস্থায় দিল্লিতে টেস্ট ম্যাচ আয়োজন করিবার জন্য দিল্লি সরকার এবং উদ্যোক্তা সংস্থার সমালোচনায় সরব হইয়াছেন। ক্রিকেট পরিচালকদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ইঙ্গিত দেয়, তাঁহারা, অন্তত চাপে পড়িয়া, ভবিষ্যতে সতর্ক হইবেন।

সরকারি অনুদ্যমও কম লজ্জার নহে। দিল্লি সরকারের দূষণ রোধে সার্বিক পরিকল্পনা তৈয়ারি করিয়া যুদ্ধকালীন উদ্যোগে ঝাঁপাইয়া পড়িবার কথা। তাহারা যে সেই কর্তব্য সম্পাদন করিবে, এমন ভরসা নাই। সরকারি নিয়মে গাত্রোত্থান করিতেও সচরাচর আঠারো মাস লাগে। হয়তো তাহাই এ দেশে স্বাভাবিকও বটে। এই অনুদ্যমই ভারতীয় চরিত্রের অঙ্গ। ভারতের সমাজ, বিশেষত রাষ্ট্রচালকরা আপন শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করিয়াই ক্ষান্ত। কেন সেই দাবি অপরে মানিবে, সেই বিষয়ে তাঁহাদের দায়বোধ নাই। তাঁহারা সমালোচনায় স্পর্শকাতর, বিরূপ মতের প্রতি অসহিষ্ণু। এই মানসিকতা কায়েম হয়, যখন কেহ নিজ ত্রুটিবিচ্যুতিকে গুরুত্ব না দিয়া, নিজ মতকেই একমাত্র গ্রাহ্য বলিয়া মনে করে। অন্যান্য যাহা কিছু সেই মতের বিপরীত, তাহাকে অস্বীকার করাই সেই মনোভঙ্গির অভিজ্ঞান হইয়া ওঠে। অস্বীকৃতির মধ্যেই সেই মন আত্মশ্লাঘা খুঁজিয়া পায়। সেই শ্লাঘাবোধ সম্পূর্ণ আত্মঘাতী, কারণ আপন ত্রুটি স্বীকার না করিলে সেই ত্রুটি দূর করিবার কোনও উদ্যোগও জন্মায় না। তখন মুখোশই ভরসা।

অন্য বিষয়গুলি:

error Pollution Delhi Sri Lanka
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy