পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য পাখি শ্বেতকণ্ঠ মাছরাঙা। উটপাখি উপযুক্ত হইত। বেগতিক দেখিলেই চক্ষু মুদিতে সরকারের জুড়ি নাই। সরকারি হাসপাতালে নার্সের আকাল, তাই নার্সের কাজ আয়া সারিতেছে, ইহা কি নূতন তথ্য? হাসপাতালগুলিতে যত নার্স প্রয়োজন, তাহার জন্য যথেষ্ট নার্সিং কলেজ নাই। তবুও সরকার প্রতিকারের সহজ ব্যবস্থাটি করে নাই। সেই উপায়, রোগীর সাধারণ সহায়তা ও পরিচর্যার কাজগুলির জন্য প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ। যাহাতে নার্সেরা সেই কাজগুলিতে মনোনিবেশ করিতে পারেন, যেগুলির জন্য উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা প্রয়োজন। কিন্তু, কথাটি সরকারকে বুঝাইবার সাধ্য কাহার? স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা গোটা দুই নার্সের উপর সত্তর-আশি জন রোগীর ভার দিয়া নিশ্চিন্ত হইয়াছেন। জেলার হাসপাতালগুলিতে দাঁড়াইলে স্পষ্ট হইবে, এই ব্যবস্থা কতটা অমানবিক। সরকারি কর্তারাও তাহা বুঝিয়াছেন। তাই সরকারি নির্দেশে আয়াদের নিষিদ্ধ করিয়া, ‘রোগীর আত্মীয়’ পরিচয়ে তাঁহাদের জন্য হাসপাতালের দ্বার উন্মুক্ত করিয়াছেন। ‘আয়া’ নামধারী মহিলাদের রোগী পরিচর্যার প্রথাগত প্রশিক্ষণ নাই। রোগীর প্রতি দুর্ব্যবহার, অবহেলার অভিযোগ, এবং জোর করিয়া টাকা আদায় করিবার নালিশ নিত্যই তাঁহাদের বিরুদ্ধে উঠিতেছে। যথেষ্ট লোকবলের অভাবে নার্সরা গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবার দায়িত্ব চাপাইয়া দেন আয়াদের উপর। তাহাতে রোগীর ক্ষতিও হইয়াছে। নিরাপত্তার প্রশ্নটিও আছে। শিশুবদল, শিশুচুরির তদন্তে একাধিক বার আয়াদের সংযোগ মিলিয়াছে।
কোনও সভ্য দেশের হাসপাতালে অপ্রশিক্ষিত আয়া থাকিতে পারে না। সরকার সেই প্রথাকেই মান্যতা দিবার চেষ্টা করিয়াছে। বাম আমলে ‘অনুব্রতী’ পরিচয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে কিছু কর্মীকে নিয়োগ করা হইয়াছিল। ব্যবস্থাটি রাজনৈতিক সংগঠনের আকার লইয়াছিল। তৃণমূল ক্ষমতায় আসিবার পর এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনুব্রতীদের বাতিল করিয়া নির্দেশ জারি করিয়াছিল। রোগীর পরিজনকে রাত্রে থাকিবার অনুমতি দেওয়া হয়। কোনও এক রহস্যময় উপায়ে রাজ্য সরকার বুঝিয়াছিল, রোগীর সহিত চব্বিশ ঘণ্টা থাকিবার মতো অন্তত এক জন ব্যক্তি সব পরিবারেই আছেন, এবং তিনি রোগীর পরিচর্যায় সমর্থ ও দক্ষ। সরকারি আস্থার মর্যাদা রাখিতে ব্যর্থ রাজ্যবাসী। অসহায় রোগীর পরিচর্যার জন্য ফের আয়াদেরই দ্বারস্থ হইয়াছেন তাঁহারা।
সরকার নার্সিং কলেজ বাড়াইবার ঘোষণা করিয়াছে। কিন্তু তাহা যথেষ্ট হইবে না। প্রয়োজন প্যারামেডিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণ-তরুণীদের সরকারি হাসপাতালে নিয়োগ। যাহাতে রোগীর পরিচর্যার দায়িত্বের যথাযথ বণ্টন হয়। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের অন্তত দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যারামেডিক প্রশিক্ষণের পাঠ্যক্রম চলিতেছে। প্রয়োজনে আসন আরও বাড়াইতে হইবে। সরকার-নিয়োজিত একাধিক কমিটি সরকারি হাসপাতালে প্যারামেডিক নিয়োগের সুপারিশও করিয়াছে। কিন্তু তাহা উপেক্ষা করিয়াছে স্বাস্থ্য ভবন। সম্ভবত তাহার কারণ এই যে, আয়াদের পারিশ্রমিক দেয় রোগীর পরিবার। স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করিলে খরচ করিতে হইবে সরকারকে। এই কার্পণ্য বিস্ময়কর। বহুতল হাসপাতাল ভবন, অত্যাধুনিক আসবাব ও যন্ত্রপাতির বরাদ্দে কম পড়ে নাই, শুশ্রূষাকর্মীর নিয়োগেই ভাঁড়ারে টান পড়িবে কেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy