ছবি: এএফপি।
অতঃপর দিগদিগন্তে ছড়াইয়া পড়িল হংকং-এর আন্দোলন। গত মাসের শেষ রবিবার নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, প্যারিস, সিডনি-সহ ১২টি দেশের ২৯টি শহরে হংকং-এর স্বাধীনতার দাবি উঠিল। লক্ষণীয়, কেবল সংহতি আন্দোলন হইয়াও এর দাবি কতখানি ব্যাপ্ত— ন্যায়বিচার নহে, স্বায়ত্তশাসন নহে, একেবারে স্বাধীনতা! আসলে, সামান্য দাবিই বদলাইতে বদলাইতে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাইয়াছে, কেননা শাসকের অত্যাচারের মাত্রাও সীমা অতিক্রম করিয়াছে। মাসকয়েক পিছাইয়া গেলে দেখিব, হংকংয়ের দাবি আদৌ স্বাধীনতা আদায় করিবার ন্যায় সুদূর ছিল না, আন্দোলনও এমন জঙ্গি হইয়া উঠে নাই। কিন্তু বন্দি প্রত্যর্পণের আইন সরলতর না করিবার যৎসামান্য অনুরোধও মানিতে রাজি হন নাই হংকং-এর প্রশাসক ক্যারি লাম। কোনও অপরাধীকে প্রয়োজনে প্রতিবেশী চিনে লইয়া যাওয়া চলিবে না— এই আপাত নিরীহ চাহিদার কথাও নৃশংস উপায়ে দমন করিয়াছিল প্রশাসন। উহার ফলেই এক নির্বিষ ফোঁড়া পাকিয়া উঠিয়াছে। হংকং-এর গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের আন্দোলন স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা হইয়াছে।
হংকংয়ের রাজনীতি বিষয়ে ওয়াকিবহাল মাত্রেই বুঝেন, প্রশাসক লাম নিমিত্তমাত্র, পর্দার আড়ালে ক্রীড়া পরিচালনা করিতেছে বেজিং। সিদ্ধান্ত লওয়া এবং সম্পাদনের মূল কর্তা শি চিনফিং-এর দেশ। এবং প্রশাসন ও নাগরিকের সমঝোতা বস্তুটি একেবারে অসেতুসম্ভব হইয়া পড়ার কারণও তাহারাই। সেই দেশে একদলীয় শাসন কায়েম, অতএব শাসকের বিরুদ্ধে স্বর তুলিবার রেওয়াজ নাই। হংকংয়ের সেই প্রথা ভাঙিয়াছে, স্পর্ধা হজম করিতে পারিতেছে না তাহারা। বিপরীতে, আন্দোলনকারীদের মূল সুরও চিনের বিরুদ্ধেই। অপরাপর দেশগুলিতে যে সকল গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ হংকংয়ের সংহতিতে পথে নামিয়াছেন, তাঁহাদের বক্তব্যেও সেই সুর ধরা পড়িতেছে। জনৈক সিডনিবাসী বলিয়াছেন, শাসকের লাগাতার চাপে হংকং দুর্দশাগ্রস্ত, তাই পথে না নামিয়া আর থাকিতে পারেন নাই। তাইওয়ানে ‘হংকং মার্চ’-এ শামিল এক প্রতিবাদীরও বক্তব্য, হংকং-এর আন্দোলনে না মিলিয়া তাঁহার দেশের নাগরিকদের আর কোনও উপায় ছিল না।
গণতন্ত্রের পক্ষে এই আন্দোলন দেখিয়া আশা জাগে। এই ঘটনাগুলি বুঝাইয়া দেয় যে আজও সমাজের বহুলাংশের মানুষ স্বাধীন চিন্তার পক্ষে। প্রতীক এবং বাস্তব দুই দিক হইতেই এই সংহতি আন্দোলনের জোরও সেইটি— গণতন্ত্রী হংকংয়ের মুক্ত ভাবনাকে যে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হত্যা করিতে চাহে, তাহাকে রুখিতে হইবে। এতগুলি দেশকে উদ্বেল হইয়াছে দেখিলে চাহিদার মাত্রাটিও বোঝা যায়। জানা গিয়াছে, যে সকল দেশ হংকংয়ের সপক্ষে রাস্তায় নামে নাই, তাহারাও সঙ্গে আছে। কী পরিহাস, গত ১ অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের ৭০তম প্রতিষ্ঠা দিবসে প্রতিবাদ করিতে হইয়াছে গণতন্ত্রের জন্যই! প্রতিবাদের রূপ ধরা পড়িয়াছে ‘চি-নাৎসি’ পতাকায়— চিনের লাল পতাকায় সমাজতন্ত্রী তারার স্থলে আঁকা হইয়াছিল নাৎসি জার্মানির স্বস্তিকা। চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সমঝদার বলিয়া বদনাম নাই, কিন্তু বুঝিয়া রাখা ভাল যে আন্দোলন বিশ্ব জুড়ে ছড়াইলে তাহার তুলনাও বিশ্বজনীনই হইয়া উঠিবে। সর্বগ্রাসী শাসন কখনও উদ্যাপিত হয় না, উহা ‘শোক দিবস’ হইয়াই জনতার নিকট আসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy