Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

হংকং কাণ্ড

হংকং কর্তাদের দীর্ঘ কালের অভিযোগ, চিনের মূল ভূখণ্ডের দুষ্কৃতীদের আশ্রয়স্থল হইয়াছে স্বশাসিত নগরীটি। প্রত্যর্পণ বিল চালু করিলে সেই ছিদ্রপথ বুজাইয়া দেওয়া সম্ভব হইবে।

রাস্তায় নেমে নয়া প্রত্যর্পণ বিলের প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ। ছবি: রয়টার্স

রাস্তায় নেমে নয়া প্রত্যর্পণ বিলের প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ। ছবি: রয়টার্স

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৯ ০০:০৮
Share: Save:

গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রত্যর্পণ আইন সরলতর করিবার প্রস্তাব দিয়াছিল হংকং সরকার, অর্থাৎ কোনও অপরাধীকে প্রয়োজনে দেশের বাহিরে লইয়া যাওয়া চলিবে। কুড়িটি দেশের সহিত হংকংয়ের প্রত্যর্পণ চুক্তি বর্তমান, নূতন আইনের বলে সেই গণ্ডি বাড়িবে। ইহার আওতায় আসিবে চিনও, এবং তাহা লইয়াই সঙ্কট। ৯ জুন হইতে বারংবার যে লক্ষাধিক প্রতিবাদী হংকংয়ের রাজপথ স্তব্ধ করিতেছেন, তাঁহাদের বক্তব্য, নূতন আইন পাশ হইলে স্বায়ত্তশাসিত হংকংয়ে অধিক কর্তৃত্ব ফলাইতে সক্ষম হইবে চিন। চিনের একদলীয় শাসনব্যবস্থায় সমালোচনার স্থান নাই— চিন সরকার-অনুগত হংকংয়ের প্রশাসক ক্যারি লাম সেই বন্দোবস্ত হংকংয়েও কায়েম করিবার চেষ্টা করিতেছেন বলিয়া অভিযোগ। শেষাবধি জনতার সপ্তাহব্যাপী চাপের সম্মুখে বিল স্থগিত হইয়াছে, লাম ঘোষণা করিয়াছেন যে বিলটি লইয়া দ্বিতীয় বার ভাবিবার অবকাশ আছে। তবে হংকংবাসীর আপত্তির মূল কারণ যে হেতু চিন, অতএব লাম পদত্যাগ না করিলে তাঁহারা আশ্বস্ত হইবেন বলিয়া মনে হয় না।

হংকং কর্তাদের দীর্ঘ কালের অভিযোগ, চিনের মূল ভূখণ্ডের দুষ্কৃতীদের আশ্রয়স্থল হইয়াছে স্বশাসিত নগরীটি। প্রত্যর্পণ বিল চালু করিলে সেই ছিদ্রপথ বুজাইয়া দেওয়া সম্ভব হইবে। গত বৎসর তাইওয়ানে ছুটি কাটাইতে গিয়া খুন হইয়াছিলেন হংকংয়ের এক মহিলা, হংকংয়ে প্রত্যাবর্তন করিয়া ঘটনার স্বীকারোক্তি করেন তাঁহার বন্ধু, এবং আর্থিক তছরুপের অভিযোগে তাঁহাকে হাজতবাস করিতে হয়— এই ঘটনা দর্শাইয়া বিলের গুরুত্ব বুঝাইতেছে লামের প্রশাসন। যদিও তাইওয়ান বিরোধিতা করিয়া বলিয়াছে যে প্রত্যর্পণ শুরু হইলেও সন্দেহভাজনকে গ্রহণ করিবে না তাহারা। বস্তুত চিন, তাইওয়ান ও ম্যাকাও লইয়া হংকংয়ের আন্দোলনকারীদের যুক্তির সমরূপ বার্তাই দিয়াছে তাইওয়ান প্রশাসন— বিল পাশ হইলে তাহাদের নাগরিকেরা হংকংয়ের ‘ফাঁদ’-এ পড়িতে পারেন। স্মরণে রাখা ভাল, ১৯৯৭ সালে গৃহীত ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ মডেল অনুসারে বৃহত্তর স্বাধীনতার লক্ষ্যে হংকংয়ে পৃথক আইনি ব্যবস্থা বর্তমান। বিপ্রতীপে, আজও চিনের বিচারব্যবস্থা কমিউনিস্ট পার্টি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অতএব, হংকংয়ের নাগরিকদের চিনে মিলিত হইতে চাহিবার কোনও কারণ নাই।

এমতাবস্থায় লাম পদত্যাগ না করিলে হংকংকে শান্ত করিবার দ্বিতীয় উপায়টি হইল আরও গণতন্ত্র। ১৬ জুন উনিশ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নামিবার পর বলা যায়, ইহাই হংকংয়ের ইতিহাসে বৃহত্তম আন্দোলন। এমনকি, তিয়েনআনমেন স্কোয়্যারের বিক্ষোভও এই সংখ্যায় পৌঁছাইতে পারে নাই, উনিশশো ষাটের দশকের পর নগরবাসীর কোনও ক্ষোভ এত হিংসাত্মকও হয় নাই। সুতরাং ইহা চিনের নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থার স্পষ্ট বার্তা। তবে পূর্বের চিনবিরোধী প্রতিবাদগুলির হইতে চরিত্রে ইহা ভিন্ন। ২০০৩ সালে দেশদ্রোহ আইনের প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হইয়াছিল হংকং, আইন স্থগিত করিয়া প্রতিবাদ স্তব্ধ করা গিয়াছিল। ২০১৪ সালে হংকংয়ের প্রশাসক পদে অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবি করিয়া ‘আমব্রেলা মুভমেন্ট’ হইয়াছিল। ইহার পর শি চিনফিংয়ের চিন আরও কড়া বার্তা দিয়াছে— হংকংয়ের ‘সর্বজনীন ভোটাধিকার’-এর অর্থ পার্টির পছন্দের ব্যক্তিকে নির্বাচনের অধিকার। সুতরাং, আশাহত হংকংকে প্রকৃত গণতন্ত্র না দিলে দ্রোহ দমন করা সহজ হইবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Hong Kong Extradition Protest China
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy