Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

ছুটি উপহার

মুখ্যমন্ত্রী আগামী বৎসর সরকারি কর্মীদের যে ছুটির তালিকা দিয়াছেন, তাহাতে এক ‘ক্যালেন্ডার ইয়ার’-এ মোট ছুটি মিলিবে ৪৩ দিন। কিন্তু ইহাই শেষ নহে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

ছুটি কি কম পড়িয়াছে? পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে, কদাপি নহে। এই রাজ্যে ডিএ লইয়া অসন্তোষ থাকিতে পারে, বকেয়া বেতন লইয়া ক্ষোভ থাকিতে পারে, কিন্তু সেই সবের উপর প্রলেপ দিবার মোক্ষম ঔষধ সরকারের হস্তে সর্বদাই মজুত। ছুটি। বস্তুত এই একটি ক্ষেত্রে তিলেক কার্পণ্য করিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কখনও দেখা যায় নাই। তিনি প্রায়শই বলিয়া থাকেন— মস্তিষ্কের বিশ্রামের জন্য ছুটি প্রয়োজন। খাঁটি কথা। বাস্তবিকই অধিক পরিশ্রমে মস্তিষ্ক শ্রান্ত হয়, সে তখন ছুটি চাহে। একটানা কর্মদিবসের মাঝে বিরতি পাইলে তরতাজা মন কাজের গুণমান বৃদ্ধি করে। কিন্তু এই বিজ্ঞানসম্মত কার্যকারণ সম্পর্ক শ্রমদিবস ও ছুটির সাধারণ অনুপাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অনুপাত যেখানে অ-সাধারণ, অর্থাৎ মোট কর্মদিবসের তুলনায় নির্ধারিত ছুটির সংখ্যা যেখানে বেশি, সেই ক্ষেত্রে কী হইবে? বৎসরের অধিকাংশ সময় মস্তিষ্ক ছুটিতেই থাকিলে সে ভুলিয়া যাইবে না তো যে তাহাকে কাজও করিতে হয়? প্রশ্নটি উড়াইয়া দিবার উপায় নাই। বিশেষত হাতে যদি আগামী বৎসরের সরকারি ছুটির তালিকা মজুত থাকে।

মুখ্যমন্ত্রী আগামী বৎসর সরকারি কর্মীদের যে ছুটির তালিকা দিয়াছেন, তাহাতে এক ‘ক্যালেন্ডার ইয়ার’-এ মোট ছুটি মিলিবে ৪৩ দিন। কিন্তু ইহাই শেষ নহে। সপ্তাহান্তের ছুটিগুলিও ইহার সঙ্গে জুড়িতে হইবে। এবং জুড়িতে হইবে এক জন সরকারি কর্মীর বৎসরে প্রাপ্য মোট ছুটির সংখ্যা। ছুটির এ-হেন বিস্তারিত তালিকায় ত্রৈরাশিক, ভগ্নাংশের হিসাব গুলাইয়া যাইবার সম্ভাবনা প্রবল। তবে শুনা যাইতেছে, আগামী বৎসরে কেহ চাহিলে তিনশত ছেষট্টি দিনের মধ্যে দুইশত দিনেরও অধিক ছুটি লইতে পারেন। এবং তাহাও স-বেতন। ছুটির এই প্রাবল্য শুধুমাত্র আগামী বৎসরের জন্য নহে। পশ্চিমবঙ্গে গত কয়েক বৎসরের ছুটির খাতা উল্টাইয়া দেখিলে বুঝা যাইবে প্রতি বৎসরেই সরকারি কর্মচারীরা নানাবিধ ছুটির পারিতোষিক পাইয়া থাকেন। নির্ধারিত ছুটি সপ্তাহান্তে পড়িলে সপ্তাহ শুরুর কর্মদিবসটিকে টানিয়া ছুটির খাতায় ঢুকাইয়া দিবার রেওয়াজও আছে। বন‌্ধের দিনে উপস্থিত থাকিবার ইনাম বাবদ এক দিন ছুটি মিলে। এমনকি রসিকতা চলিতেছে, এই বৎসর নাকি ছটের ছুটির দিনসংখ্যায় পশ্চিমবঙ্গ বিহারকেও টেক্কা দিয়াছে।

সুতরাং, পশ্চিমবঙ্গের সরকারি চাকুরিক্ষেত্রে সত্যই ‘আসি যাই মাহিনা পাই’-এর দিন শেষ। তৃণমূল-শাসিত নব্যবঙ্গে মাহিনার জন্য কর্মস্থলে না আসিলেও চলে। এ-ক্ষণে দুইশত দিনের ছুটিশেষে অবশিষ্ট যে কয়টি দিন পড়িয়া থাকে, সরকারি তরফ হইতে মস্তিষ্কের বিশ্রামের ব্যবস্থা সেই দিনগুলিতেও করিবার কথা ভাবা যায়। স্প্যানিশ সিয়েস্তার আদলে প্রতি দিন ঘণ্টাখানেক সময় দ্বিপ্রাহরিক ঘুমের জন্য বরাদ্দ করা যায়। সাপ্তাহিক কর্মদিবস চার দিনে বাঁধিয়া দেওয়া যায়। মাইক্রোসফট জাপান নাকি এই পদ্ধতি প্রয়োগ করিয়া ৪০ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধির সুফল ভোগ করিয়াছে। বেসরকারি সংস্থাগুলির ধাঁচে কর্মচারীদের নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠাইবারও বন্দোবস্ত করা যায়। ধুঁকিতে থাকা বঙ্গীয় অর্থনীতিতে কর্মচারীদের ছুটি বৃদ্ধি করিলে অন্তত বিদ্যুৎটুকুর সাশ্রয় হয়। এবং মস্তিষ্ক লম্বা ছুটিতে থাকিলে সরকারও বাঁচে অস্বস্তিকর প্রশ্ন হইতে।

অন্য বিষয়গুলি:

Holiday West Bengal Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy