Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

আঁধারের পথযাত্রী

কুকর্মের শাস্তি নানা ভাবে হইতে পারে, যথা ক্যানসার অথবা দুর্ঘটনায় অকালমৃত্যু। মন্ত্রিমহাশয়ের বক্তব্য, বিজ্ঞানের সহিত তাঁহার কোনও বিরোধ নাই, ইহা তাঁহার দার্শনিক যুক্তি।

হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৫৩
Share: Save:

পাপ কী? নিষিদ্ধ অথবা অন্যায় কর্ম। পাপের ফল কী? প্রায়শ্চিত্ত। যাহা কিনা জন্ম হইতে জন্মান্তরে বাহিত হয়। এই নিদান জানাইয়া দিয়াছেন অসমের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। ফাঁকিবাজ শিক্ষকদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে তাঁহার বাণী: মানুষ কর্মফল ভোগ করে— আপন কর্মের, কিংবা পিতার কর্মের, কিংবা পূর্বজন্মের কর্মের। কুকর্মের শাস্তি নানা ভাবে হইতে পারে, যথা ক্যানসার অথবা দুর্ঘটনায় অকালমৃত্যু। মন্ত্রিমহাশয়ের বক্তব্য, বিজ্ঞানের সহিত তাঁহার কোনও বিরোধ নাই, ইহা তাঁহার দার্শনিক যুক্তি। মোক্ষম দর্শন বটে! তবে শর্মাজিকে কটাক্ষ করিবার পূর্বে স্বীকার করিতেই হয় যে, ইহা কেবল তাঁহার বা তাঁহার বর্তমান দলের ভাবধারা নহে, কর্মফলের তত্ত্বে এ দেশের বহু মানুষের আজও অগাধ বিশ্বাস। বিশ্বাস অতি বিষম বস্তু। যুক্তি এবং বিজ্ঞানের সমস্ত প্রশ্নকে সে ক্রমাগত এড়াইয়া চলে এবং বিশ্বাসবাদীর হৃদয়ে জগদ্দল পাথরের ন্যায় অধিষ্ঠিত থাকে।

বিশ্বাসবাদী বলিবেন, পাপের ফল ভুগিতে হয় না, এ কথাই বা কী করিয়া প্রমাণ করা যায়? সত্য, তাহা প্রমাণ করা যায় না। কিন্তু বিজ্ঞান তেমন প্রমাণের দাবিও করে না। বিজ্ঞান কেবল বলে— পাপের ফল বলিয়া কিছু হয় কি না, তাহা যাচাই-সাপেক্ষ। বস্তুত, পূর্বজন্ম বলিয়া কিছু আছে কি না, সেই বিষয়েও বিজ্ঞানের বক্তব্য একটিই: যদি থাকে, তাহার প্রমাণ চাই, এবং প্রমাণের জন্য পরীক্ষা প্রার্থনীয়। মুকুল এবং তাহার সোনার কেল্লাকে বাঙালি যতই ভালবাসিয়া থাকুক না কেন, জন্মান্তরবাদের উৎপত্তি মানুষের মস্তিষ্কে এবং তাহার নিবাসও সেখানেই। বিশ্বাস ব্যতীত আর কিছুর উপরেই তাহা নির্ভর করে না। ‘পাপের শাস্তি’ বিষয়ক দার্শনিক তত্ত্বও ষোলো আনা বিশ্বাসপ্রসূত, তাহাকে যাচাই করিবার কোনও উপায় নাই। এবং সেই কারণেই তাহা সম্পূর্ণ অ-বৈজ্ঞানিক।

প্রশ্ন হইল, এই অবৈজ্ঞানিক বিশ্বাসকে অপসারণের চেষ্টা করা হইবে না কি যত্নে লালন করা হইবে? শুধু লালন নয়, প্রচারও? যেমনটি করিয়াছেন হিমন্তবিশ্ব শর্মা। মন্ত্রী হয়তো বলিবেন, তিনি বিজ্ঞানের বিরোধী নহেন, কেবল কর্মফলের ভয় দেখাইয়া শিক্ষকদের তথা নাগরিক সমাজকে ফাঁকির অভ্যাস হইতে কাজের অভ্যাসে ফিরাইতে চাহিতেছেন। গাঁধীজির ভূমিকম্প-তত্ত্বের পিছনেও মূলত ইহাই ছিল যুক্তি। অতি বিপজ্জনক যুক্তি। উদ্দেশ্য যাহাই হউক, এমন তত্ত্বের প্রভাবে কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাসের প্রসার ঘটে। এবং তাহার ফলে আরও বেশি উৎসাহিত হয় নিয়তিবাদ। মানুষ ভাবেন, কর্মফলের তত্ত্বই যদি মানিতে হয়, তবে আর অসুখ সারাইতে ঔষধের প্রয়োজন কী? দুর্ঘটনা রোধ করিবার চেষ্টা করিয়াই বা লাভ কী? দেশের নেতারা যদি এই ধরনের কুসংস্কার প্রচার করিতে থাকেন, তাহা হইলে জাতির মস্তিষ্কের ভবিষ্যৎ ঘনতমসাবৃত। সেই মগজে তথ্য, প্রমাণ, বৈজ্ঞানিক যুক্তির কোনও দাগই ফুটিবে না। হিমন্তবিশ্বের মতো নেতাদের অনুসরণে দেশের মানুষ জ্যোতি হইতে তমসার দিকে মহাপ্রস্থান করিবেন। এই নেতারা কে কোন দলের বা মতের, তাহা বড় কথা নহে। তবে এই সত্য অস্বীকার করিবার উপায় নাই যে, সংঘ পরিবারের পরিচালনায় তমসার পথে যাত্রার পরিবেশ ও পরিকাঠামো চমৎকার প্রস্তুত, হাঁটিলেই হইল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy