প্রতীকী ছবি।
অবশেষে স্বাস্থ্য বিমার অধীনে আসিল মনোরোগ। ভারতের বিমা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়াছে, অবসাদ হইতে নেশাসক্তি, যে কোনও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসার খরচ পাইবেন। মানসিক স্বাস্থ্য আইন (২০১৭) বিমা-সহ চিকিৎসার সকল ক্ষেত্রে মনোরোগীকে পূর্ণ মর্যাদা দিবার নির্দেশ দিয়াছিল। এই বার তাহা কার্যকর হইল। আশা করা যায়, সমাজও মনোরোগীকে মর্যাদা দিতে শিখিবে। মনোরোগ অবহেলা করিয়া থাকেন উচ্চশিক্ষিত, উচ্চবিত্ত ব্যক্তিরাও। বিমার শর্ত হয়তো তাঁহাদের মনোরোগের চিকিৎসার প্রয়োজনের প্রতি সজাগ করিবে। সর্বোপরি, ইহার ফলে হাসপাতাল, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা মনোরোগীর অধিকার রক্ষায় সক্রিয় হইবেন, এমন আশা জাগিতেছে। তাঁহারা বিজ্ঞানের কারবারি, সমাজের ভ্রান্ত ধারণাগুলি তাঁহারাই দূর করিয়া মনোরোগীর প্রতি সকলকে সংবেদনশীল করিবেন, এমনই প্রত্যাশিত ছিল। আক্ষেপ, চিকিৎসার ক্ষেত্রেও মনোরোগীরা সমান ব্রাত্য রহিয়া গিয়াছেন। ব্লক ও জেলাস্তরের হাসপাতালগুলিতে তাঁহাদের চিকিৎসা হয় না বলিলেই চলে, মনোরোগীকে ভর্তি করিবার সম্ভাবনা তো দূরস্থান। মেডিক্যাল কলেজগুলি পাঠ্যক্রমের বিধি মানিয়া ‘সাইকিয়াট্রিক ওয়ার্ড’ বরাবরই রাখিয়াছে, কিন্তু ওয়ার্ডে মনোরোগীদের রাখিতে উৎসাহী হয় নাই। বিমার আশ্বাস হয়তো এই বার সকল স্তরের হাসপাতালে মনোরোগের চিকিৎসার প্রসার ঘটাইবে।
ভারতে জনসংখ্যার প্রায় আট শতাংশ কোনও না কোনও মনোরোগে কখনও আক্রান্ত হইয়াছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আগামী বৎসর, অর্থাৎ ২০২০ সালের মধ্যে জনসংখ্যার কুড়ি শতাংশের মানসিক সমস্যার অনুভব হইবে। অথচ ভারতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সংখ্যা অতি সামান্য, গড়ে তেত্রিশ লক্ষ মানুষের জন্য এক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যাও তথৈবচ। ফলে আক্রান্তদের সত্তর শতাংশেরও অধিক কোনও সহায়তাই না পাইয়া দিন কাটাইতেছেন। আন্দাজ করা যায়, তাঁহারা নিয়ত নির্যাতন বা অবহেলার শিকার, অনেকেই ন্যূনতম সুরক্ষা না পাইয়া অসহায় ভাবে জীবনযাপন করিতেছেন। তাঁহাদের কত জন বিমার সুবিধা লইতে পারিবেন, তাহা সহজেই অনুমেয়। অতএব চিকিৎসার প্রসার না হইলে রোগীর অধিকার লঙ্ঘিত হইতে বাধ্য। বিমার প্রসারের সুযোগ লইয়া যদি মনোরোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা প্রসারিত হয়, বিশেষত বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলি যদি তাহাতে উৎসাহিত হয়, তাহাতে কিঞ্চিৎ লাভ হইতে পারে।
তৎসহ, মনোরোগীদের অতি সামান্য অংশের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়। অধিকাংশ চিকিৎসা হইয়া থাকে বহির্বিভাগে, যাহা সাধারণত বিমার আওতাভুক্ত নহে। মনোরোগীকে যথাযথ সহায়তা দিতে হইলে যে কোনও হাসপাতালের বহির্বিভাগে মনোরোগের সুলভ চিকিৎসা প্রয়োজন। বিমার গুরুত্ব যথেষ্ট, কিন্তু তাহা স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষুদ্র অংশ। বিমার অন্তর্ভুক্তি চিকিৎসার খরচকে সহনীয় করিতে পারে, কিন্তু চিকিৎসা পাইবার নিশ্চয়তা বাড়াইতে স্বাস্থ্যবিমার ভূমিকা সীমিত। মনোরোগীর নিকট চিকিৎসা পৌঁছাইবার কর্তব্যের অতি সামান্যই সমাধা হইল। কাজ এখনও পড়িয়া আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy