Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয়২

বোনাস দিয়াছেন?

পশ্চিমবঙ্গে অবিলম্বে গৃহপরিচারিকাদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে পরিচারিকাদের সংগঠন বারবার শ্রম দফতরে আবেদন করিয়াও কোনও সাড়া পায় নাই, ইহা অত্যন্ত আক্ষেপের কথা।

দাবি: অধিকার বুঝে নিতে রাজপথে পরিচারিকারা। শুক্রবার। ছবি: সুমন বল্লভ

দাবি: অধিকার বুঝে নিতে রাজপথে পরিচারিকারা। শুক্রবার। ছবি: সুমন বল্লভ

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৪৮
Share: Save:

শান্তি চৌধুরীকে ধন্যবাদ। তাঁহার প্রতিবাদ বহু দিনের একটি অন্যায়কে জনসমক্ষে আনিল। দক্ষিণ কলিকাতার কেয়াতলায় একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করিতেন শান্তিদেবী। পূজায় বোনাস দিবার সাধারণ নিয়ম পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন গৃহকর্তা। প্রতিশ্রুতি রাখেন নাই, বরং পরিচারিকাকে বরখাস্ত করিয়াছেন। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি এমন প্রতারণায় অতি স্বচ্ছন্দ। কিন্তু শান্তিদেবী লিখিত অভিযোগ দায়ের করিয়াছেন থানাতে। পুলিশ প্রথমে উপেক্ষা করিয়াছিল। যদিও পরিচারকের ছবি, পরিচয়পত্র-সহ বিশদ তথ্য থানায় জমা রাখিতে গৃহস্থকে উপদেশ দেয় পুলিশ। ঘরে ‘কাজের লোক’ রাখিলেই চুরির ঝুঁকি থাকিবে, এই ধারণা ছড়াইতে পুলিশ তৎপর। কিন্তু পরিচারকের টাকা গৃহস্থ চুরি করিলে, অর্থাৎ কাজ আদায় করিয়া বেতন না দিয়া তাড়াইয়া দিলে পুলিশ বড়ই অসহায় হইয়া পড়ে। তাহাদের যুক্তি, বেতন বা বোনাস পাইবার প্রতিশ্রুতি কেবল ‘মৌখিক চুক্তি’, ফৌজদারি আইনের অন্তর্গত নহে। বড়ই আশ্চর্য কথা যে, পরিচারকের বিরুদ্ধে গৃহস্থের অভিযোগ লইবার কালে অলিখিত চুক্তি বাধা হইয়া দাঁড়ায় না। দরিদ্রের প্রতারণায় পুলিশ নীরব। কত গৃহপরিচারিকা চুরি করিতেছেন, আর কত জন গৃহস্থ নিয়মিত গৃহকর্মীকে প্রতারণা করিতেছে, তাহার হিসাব লইবে কে? পরিচারিকাদের একটি সংগঠন শান্তিদেবীকে সমর্থন করিয়া পুলিশের বড় কর্তার নিকট অভিযোগ জানাইয়াছে। তাঁহার নির্দেশে রবীন্দ্র সরোবর থানার পুলিশ গৃহকর্তাকে তলব করিয়াছে। সংবাদে প্রকাশ, সেই ‘ভদ্রলোক’ পলাইয়া বেড়াইতেছেন।

শান্তিদেবী তাঁহার শ্রমের মূল্য আদায় করিতে পারিবেন কি না, বলা কঠিন। কিন্তু সমাজের নিকট তাঁহার অভিযোগ, এবং তাঁহার সমর্থনে পরিচারিকাদের সংগঠনের সম্মিলিত প্রতিবাদের মূল্য কম নহে। গৃহস্থালির অভ্যন্তরে কাজ করেন বলিয়া পরিচারিকাদের কাজ ‘অদৃশ্য’ থাকিয়া যায়। অথচ বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এ রাজ্যে কর্মরত মেয়েদের এক-চতুর্থাংশ গৃহ পরিচারিকার কাজ করিতেছেন। বাংলার যে মেয়েরা দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো শহরে জীবিকা অর্জনের জন্য পাড়ি দিতেছেন, তাঁহাদেরও একটি বড় অংশ গৃহপরিচারিকার কাজে নিযুক্ত। অথচ এই বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবীর কাজের এবং রোজগারের কোনও সুরক্ষা নাই। তাঁহাদের দিবসপ্রতি কিংবা ঘণ্টাপ্রতি ন্যূনতম পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট নাই, সাপ্তাহিক ছুটির দিন নির্দিষ্ট নাই, অসুস্থতা বা গর্ভাবস্থার জন্যও তাঁহাদের অবসর নাই। এমনকি পরিচারিকাকে শৌচাগার ব্যবহার করিতে দিতেও আপত্তি করে বহু ‘ভদ্র’ পরিবার। সর্বাঙ্গে দগ্ধ ক্ষত লইয়া শিশু পরিচারিকা উদ্ধারের সংবাদগুলি ইঙ্গিত দেয় গৃহস্থ কত নির্মম হইতে পারে। কত মহিলা যৌন হয়রানি সহ্য করিয়া কাজ করিতেছেন, তাহারও হিসাব নাই।

পশ্চিমবঙ্গে অবিলম্বে গৃহপরিচারিকাদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে পরিচারিকাদের সংগঠন বারবার শ্রম দফতরে আবেদন করিয়াও কোনও সাড়া পায় নাই, ইহা অত্যন্ত আক্ষেপের কথা। তেলঙ্গানা, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ কাজের প্রকৃতি অনুসারে ন্যূনতম বেতন এবং অন্যান্য সুবিধা নির্দিষ্ট করিয়াছে। এ রাজ্যে শ্রমজীবী মেয়েরা সেই সুরক্ষা পাইবেন না কেন? বৃহৎ শ্রমিক সংগঠনগুলিই বা এই বিষয়ে নীরব কেন?

অন্য বিষয়গুলি:

Maid Durga Puja Puja Bonus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE