Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Cornavirus

ঘরবন্দি

 প্রতিদিন কাজে না গেলে অনেকেরই চাল কিনিবার টাকা টুকু থাকে না।তাঁহাদের কী হইবে?

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ০১:১২
Share: Save:

যদি বাঁচিতে হয়, ঘরে থাকা ভিন্ন গত্যন্তর নাই।তিন সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করিবার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই কথাটি বহুবার বুঝাইয়া বলিলেন। এখন দীর্ঘ লকডাউন ব্যতীত বাঁচার যে ভিন্ন কোনও পথ নাই, দুনিয়াব্যাপী অভিজ্ঞতায় তাহা স্পষ্ট। কাজেই, ভারতেও লকডাউন করিবার সিদ্ধান্তটি যথার্থ এবং জরুরি।প্রধানমন্ত্রী এই দফায় থালা বাজাইতে বলেন নাই। অনুমান করা চলে, তিনিও পরিস্থিতির গুরুত্ব এবং ভারতীয়দের চরিত্র বুঝিয়াছেন। এই দেশের অধিকাংশ মানুষ বিপদের গুরুত্ব বুঝেন না। প্রসঙ্গত, অত্যুৎসাহী পুলিশবাহিনী লাঠি হাতে মানুষকে গুরুত্ব বুঝাইতে পথে নামিয়াছে।তাহাদের কাজ যে আইনরক্ষা করা, আইন হাতে তুলিয়া লওয়া নহে, ভারতে পুলিশ এই কথাটি ভুলিতেই অভ্যস্ত।এই বিপর্যস্ত সময়ে আরও বেশি ভুলিতেছে। স্মরণে রাখা জরুরি যে, আমোদ দেখিতে নহে, বিপদের সম্পূর্ণ গুরুত্ব না বুঝিয়াই বহু মানুষ রাস্তায় বাহির হইয়া পড়েন। কেবল দূরদর্শন-বাহিত ঘোষণায় এমন অদৃষ্টপূর্ব বিপদ তাঁহারা বুঝিবেন, এই আশা করাই অন্যায়। অনেকে নেহাত বাধ্য হইয়াও বাজারে ভিড় করেন। কয়জনের ঘরেই বা একুশদিনের খাবার মজুত থাকে? কে কখন দোকানে যাইবেন, তাহা নির্দিষ্ট করিবার কোনও পন্থা যদি থাকিত, এই ভিড় হয়তো এড়ানো সম্ভব হইত।

তাহার পরও অনেকের ঘরেই খাদ্য থাকিত না।কারণ, প্রতিদিন কাজে না গেলে অনেকেরই চাল কিনিবার টাকা টুকু থাকে না।তাঁহাদের কী হইবে? পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকার সেই দায়িত্ব লইয়াছে। তাহার পরও সংশয় থাকিয়া যায়।ঝাড়খণ্ডের উদাহরণটিই ভাবা যাইতে পারে।গতকয়েক বৎসরে, নিতান্ত স্বাভাবিকপরিস্থিতিতেই, এই রাজ্যে একাধিক অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটিয়াছে বলিয়া অভিযোগ।প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা গিয়াছে, প্রশাসন অথবা স্থানীয় রেশন দোকানের চূড়ান্ত অমানবিকতা আছে সেই মৃত্যুগুলির পিছনে। করোনাভাইরাস সম্ভবত সেই আধিকারিকদের মন পাল্টাইয়া দিতে পারে নাই। শুধু ঝাড়খণ্ড নহে, দেশ জুড়িয়াই এখন বহু অসহায় মানুষের বাঁচা-মরা তাঁহাদের হাতে। শীর্ষ নেতৃত্ব কঠোর না হইলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হইতে পারে।তাহার উপর আছে দুর্গমতার প্রশ্ন।এই বিপন্ন সময়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা মানুষের নিকট যথাসময়ে সাহায্য পৌঁছাইয়া দিতে পারাও বড় চ্যালেঞ্জ। প্রশাসন এই পরীক্ষায় পাশ না করিলে তাহার পরিণতি ভাবিলেও শিহরিয়া উঠিতে হয়।

একুশদিনের লকডাউন কি অপরিহার্য ছিল? এই মুহূর্তে করোনাভাইরাস –পরিস্থিতি বলিবে, অন্য কোনও উপায় নাই। কিন্তু, লড়াইতো মঙ্গলবার শুরু করিবার কথাছিল না। বস্তুত, রাহুল গাঁধী যবে হইতে কোভিড-১৯’ এর বিপদের কথা বলিতেছেন, তখনও প্রস্তুতি শুরু করিলে বিপদ অনেক দূর এড়ানো সম্ভব হইত।আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ করিয়া দেওয়া, অহেতুক জমায়েতের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করার মতো সিদ্ধান্ত অনেক পূর্বেই করা যাইত। সেই কাজগুলি করিলে আজ হয়তো এত কঠোর নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন পড়িত না।এমনকি, এখনও টানা একুশদিনের লকডাউন ঘোষণা করিয়া দেওয়ার মধ্যে অবিবেচনা আছে। একুশদিনের বিচ্ছিন্নতা প্রয়োজন, কিন্তু একবারে সেই ঘোষণা করিয়া দিলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়াও স্বাভাবিক। মহামারি ঠেকাইবার কাজে সেই আতঙ্ক বড় বাধা।প্রথমে সাতদিনের লকডাউন ঘোষণা করিলে, এবং তাহার পর প্রয়োজন অনুসারে সেই মেয়াদ বাড়াইয়া লইলেও সুফল একই মিলিত, শুধু এতখানি বিশৃঙ্খলা হইত না।এতখানি বিবেচনার অভাব মস্ত উদ্বেগের কারণ। ‘বিনাশকালে’ শেষ অবধি বুদ্ধি গজাইলেও কার্যসিদ্ধি হইবে কি?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy