Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
USA

হারাধনের একটি

জর্জিয়ার ফলাফল কোনও রাজনৈতিক বিপ্লব ঘটায় নাই, সমাজে একটি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করিয়াছে মাত্র।

ছবি রয়টার্স।

ছবি রয়টার্স।

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২১ ০০:০১
Share: Save:

সদ্যসমাপ্ত জর্জিয়ার নির্বাচনে দুইটি সেনেট আসনের ভাগ্য নির্ধারিত হইল। আমেরিকার রাজনৈতিক অঙ্কে ইহা অতীব জরুরি ছিল, কেননা আইনসভার উচ্চকক্ষ বা সেনেটের নিয়ন্ত্রণ কোন দলের হাতে থাকিবে, তাহা ঠিক করিয়া দেশের রাজনৈতিক পাল্লাটি বেশ খানিকটা পাল্টাইয়া দিল এই ফলাফল। সুতরাং, এই জয়ের রাজনৈতিক তাৎপর্য বোঝা সহজ। তবে ডেমোক্র্যাট রাফায়েল ওয়ার্নক-এর জয়ের ক্ষেত্রে সামাজিক তাৎপর্যটি বোধ হয় অধিক গুরুত্বপূর্ণ। জর্জিয়া হইতে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ সেনেটর হইবেন ওয়ার্নক। এই প্রদেশে ৩০ শতাংশেরও অধিক কৃষ্ণাঙ্গ বাস করিলেও রাজনীতির ঐতিহ্যে জর্জিয়া ‘শ্বেতাঙ্গ প্রদেশ’ বলিয়া পরিচিত। প্রদেশের যাবতীয় রাজনৈতিক ক্ষমতা এযাবৎ কাল শ্বেতাঙ্গদের কুক্ষিগত ছিল। বস্তুত আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলে কোনও কৃষ্ণাঙ্গের পক্ষে সামাজিক বা রাজনৈতিক ভাবে উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করাই সহজ নহে। গত শতকে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সময় বারংবার শুনা যাইত, এক জন কৃষ্ণাঙ্গ ক্ষমতার কতখানি ঘনিষ্ঠ হইতেছে তাহা লইয়া দক্ষিণের মাথাব্যথা নাই, কেবল সে অধিক উচ্চে আরোহণ না করিলেই হইল। অতএব এই জয় ঐতিহাসিক।

বিশ্বের নানা দেশ সাক্ষী, গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারা ক্রমশই সংখ্যাগুরুবাদী হইতেছে। জর্জিয়ায় বহু সংখ্যক সংখ্যালঘু কৃষ্ণাঙ্গ বাস করা সত্ত্বেও রাজনীতিতে তাহাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল না। আর উত্তরপ্রদেশে— ভারতীয় মুসলমানদের বৃহদংশ সেই রাজ্যে বসবাসী হইলেও, ভারতের সর্বাধিক জনবহুল রাজ্যটির প্রায় ২০ শতাংশ মুসলমান হইলেও সে রাজ্যের রাজনীতিতে মুসলিম প্রতিনিধিত্ব, এমনকি উপস্থিতি, দূরবিন দিয়া খুঁজিলেও মিলিবে না। রাজ্যের মন্ত্রিসভায় মুসলিম প্রতিনিধির সংখ্যা— মাত্র এক! হারাধনের এই একটি ‘ছেলে’ সংখ্যালঘু উন্নয়ন, মুসলিম ওয়াকফ ও হজ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত। মুসলমান বিধায়ক ও সাংসদও কম। সুতরাং জর্জিয়া ও উত্তরপ্রদেশের দূরত্ব এত দিন ছিল শূন্য— বলাই যায়। এই বার সেই দূরত্বটি রচিত হইল। ট্রাম্প ও মোদীর ‘নৈকট্য’ লইয়া যে আলাপ-আলোচনা কিংবা রঙ্গরসিকতা চলে, অতঃপর সেই পরিসরে এই নূতন তথ্য প্রাসঙ্গিক হওয়া উচিত।

বাস্তব হইল, জর্জিয়ার ফলাফল কোনও রাজনৈতিক বিপ্লব ঘটায় নাই, সমাজে একটি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করিয়াছে মাত্র। তবে কিনা, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক দল আমেরিকার পার্লামেন্ট-অধিষ্ঠান ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে যে কাণ্ড ঘটাইয়াছেন, তাহাতে জর্জিয়ার এই ভারসাম্য প্রচেষ্টা কত দূর অর্থবহ হইবে, সেই জবাবও ভবিষ্যতের গর্ভে। সংখ্যার দিক দিয়া ডেমোক্র্যাটরা ৫০-৫০ হইলেই আমেরিকার বাস্তব পাল্টাইবে, এমনটাও বলা যাইতেছে না। বরং নীতিমালার প্রশ্নে চোখ রাখিলে দেখা যাইবে, বহু দিন যাবৎ রিপাবলিকানদের সহিত তাঁহাদের তফাত কমিয়া আসিতেছে, অধিক গুরুতর হইতেছে পার্টি-নিরপেক্ষ ভাবে রক্ষণশীলতার প্রসার ও প্রচার। কেবল এইটুকুই তাই বলা যায় যে, আমেরিকার প্রতিনিধিসভায় কমলা হ্যারিস বা ওয়ার্নকের ন্যায় ‘অপর’ জাতি-ধর্ম-বর্ণের মানুষের সমাবেশ ঘটিবার সুযোগ হইলে, গণতান্ত্রিক নীতি-নির্ধারণেও তাহার ছাপ পড়িবার আশা। আর, বর্তমানের স্থান-কাল-পাত্র বিচারে, আশা ব্যতীত হাতে আর কী-ই বা থাকিতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

USA Presidential Election Georgia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy