Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

আত্ম-প্রবঞ্চনা

সঙ্কটের গোড়ায় আছে রাজনীতি।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০০:৫৩
Share: Save:

আগামী ৩১ জুলাই হইতে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ‘চেয়ার প্রফেসর’ পদই শূন্য হইয়া যাইবে। মাসের শেষ দিন অবসর গ্রহণ করিবেন অধ্যাপক স্বপন চক্রবর্তী। ২০১২ সালে প্রেসিডেন্সিকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করিয়া প্রেসিডেন্সি কলেজের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করিবার উদ্দেশ্যে এই পাঁচটি সম্মাননীয় পদ তৈয়ারি করিয়াছিল রাজ্য সরকার। তবে কিনা, জনৈক অধ্যাপক যেমন বলিয়াছেন, ‘ডিস্টিঙ্গুইশড’ পদ থাকিলেই তো ‘ডিস্টিঙ্গুইশড’ অধ্যাপকরা আসিবেন না! তেমন আত্মপ্রবঞ্চনা হইতে মুক্তির জন্য প্রয়োজন একটি সুস্থ সজীব উচ্চ শিক্ষা-পরিবেশ। সেই পরিবেশ যে নাই, পুনঃপুনঃ তাহা প্রমাণিত। ২০১৪-র সেপ্টেম্বর মাসে ন্যাচরাল সায়েন্সের চেয়ার প্রফেসর পদে যোগ দিয়াছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী সব্যসাচী ভট্টাচার্য। দশ মাসের ভিতর পদ ছাড়িয়া যাইবার কালে তিনি বলিয়াছিলেন, বিদ্যায়তনে বিদ্যাচর্চার স্বাধীনতা যথাযথ নহে বলিয়াই তিনি চলিলেন। আবার, ইতিহাসের চেয়ার প্রফেসর সজল নাগ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিত বেতন-বৈষম্যের কারণে পদ ছাড়েন। অবশিষ্ট দুই পদে আজ পর্যন্ত কাহাকেও নিয়োগই করিতে পারে নাই বিশ্বমানের উৎকর্ষ-আকাঙ্ক্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয়।

সঙ্কটের গোড়ায় আছে রাজনীতি। যে বিষয়টির সহিত বিশ্ববিদ্যার ক্ষীণতম যোগাযোগও থাকিবার কথা নহে, বিগত বৎসরগুলিতে উহাই বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল বিতর্ক হইয়া উঠিয়াছে। সর্বাপেক্ষা কলঙ্কিত অধ্যায় সম্ভবত ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল, যখন রাজ্যের শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের কিছু সদস্য প্রেসিডেন্সিতে ঢুকিয়া ঐতিহ্যবাহী বেকার ল্যাবে হামলা করিয়াছিল। ২০১৫ সালের অগস্ট মাসে আর এক বার ক্লেদাক্ত রাজনীতির অঙ্গন হিসাবে প্রেসিডেন্সি শিরোনামে উঠিয়া আসে। একটি অনুষ্ঠান উপলক্ষে ক্যাম্পাসে আমন্ত্রিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাইতে চাহে নাই বিরোধী দুই ছাত্র সংগঠন, উহাকে কেন্দ্র করিয়া কদর্য বচসা বাধে। এই ভাবে শিক্ষাঙ্গন বারংবার উত্তপ্ত হইয়া উঠিবার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ মানের শিক্ষকদের না পাইলে বুঝিয়া লইতে হয় যে দুইয়ের মধ্যে সম্পর্কটি ঘনিষ্ঠ। শিক্ষাহীনতার পরিবেশের দাপটেই শিক্ষার পরিবেশটি অস্ত গিয়াছে।

লক্ষণীয়, বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে রাজনীতির যে অন্যায় দাপট প্রেসিডেন্সিকে তাহার উচ্চাসন হইতে ঠেলিয়া নীচে মুখ থুবড়াইয়া পড়িতে বাধ্য করিয়াছিল, সেই একই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সযত্নে ফুলে-ফলে পল্লবিত হইয়াছে তৃণমূল সরকারের আমলে। কেবল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় নহে, সমগ্র রাজ্যেই একই চিত্র। সঙ্গত ভাবেই পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রী নিজেদের বোধ-উন্মেষমাত্র শিক্ষালাভের জন্য রাজ্যের বাহিরে পা রাখিবার কথা ভাবিতে শুরু করে। যাহারা রহিয়া যায়, তাহাদের আফশোস দেখিয়া অনুজ-অনুজারা সিদ্ধান্ত লয়— না, এই ভুল আর নহে। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য এই বাস্তব মানেনই না, ফলে তাঁহার বা তাঁহাদের করণীয়ও কিছু থাকে না। সরকারের সহিত প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষকেও এই দায় গ্রহণ করিতে হইবে। ‘প্রেসিডেন্সি আমাদের গর্ব’ বলিয়া দ্বিশতবর্ষ উদ্‌যাপন করিলেই প্রেসিডেন্সি-গর্ব ফিরাইয়া আনা যায় না। আত্মপ্রবঞ্চনা দিয়া আর যাহাই হউক, উচ্চ শিক্ষায় উৎকর্ষ লাভ করা অসম্ভব।

অন্য বিষয়গুলি:

Chair Professor Presidency University Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy