এলাকাকে জীবাণুমুক্ত করার চেষ্টা বৃদ্ধি পেয়েছে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে। সকলেই নিজের মতো করে উদ্যোগ করছেন। কোথাও ব্লিচিং পাউডার, ফিনাইল, আবার কোথাও বা সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইডের মতো জীবাণুনাশক। কোথাও রাস্তাঘাটে স্প্রে করা হচ্ছে, আবার কোথাও দমকলের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। এ ভাবেই নানা শহরের জনবহুল এলাকাগুলিতে স্যানিটাইজ় করার পদ্ধতি চলছে।
সাম্প্রতিক কালের করোনা সংক্রমণের জেরে গত মার্চ মাস থেকেই শুরু হয়েছে লকডাউন। পাশাপাশি, বিভিন্ন জায়গাকে জীবাণুমুক্ত করার দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন পুর এলাকায় নিয়মিত ভাবে জীবাণুনাশক দিয়ে স্যানিটাইজ়েশনের কাজ চলছে। এর জন্য মূলত অল্প পরিমাণে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড ব্যবহার করছেন বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তারা।
লকডাউন চলার সময়ে অনেক কিছুই বন্ধ রয়েছে। তবে চালু রয়েছে জরুরি পরিষেবাগুলি। সচল রয়েছে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতো স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান। খোলা আছে ব্যাঙ্ক, বিভিন্ন বাজার। এই সব জায়গায় মানুষের নিয়ন্ত্রিত যাতায়াতও হচ্ছে। অনেক জায়গায় মানুষের লাইন দিচ্ছে। কাজেই এই জায়গাগুলি নিয়ে সাবধানতা নিতেই হচ্ছে। এই সব জায়গায় নিয়মিত ভাবে স্যানিটাইজ়েশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে ভাইরাস থেকে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে। বিভিন্ন পুরসভা তাদের নিজস্ব পরিকাঠামোর মধ্যে থেকেই এই কাজ করে চলেছে। আবার, কেউ কেউ এর জন্য আলাদা করে যন্ত্র কিনেছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ মহকুমা শহর এবং রেল জংশন রানাঘাট। একাধিক বড় বড় বাজার রয়েছে এই শহরে। মহকুমা শাসকের দফতর থেকে শুরু করে নানা সরকারি দফতরের মহকুমা দফতর এখানেই। রানাঘাট পুরসভা সূত্রে জানা গেল, পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধের জন্য আগে থেকেই জীবাণুনাশক ছড়ানোর যন্ত্র তাদের ছিল। সেই যন্ত্রই এই পরিস্থিতিতে তারা ব্যবহার করছে। পাশাপাশি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরসভা সাহায্য নিচ্ছে দমকলেরও। সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড স্প্রে করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে শহরের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক চত্বর, বাজার এলাকায়।
লকডাউন শুরুর সময় থেকেই এই কাজটি নিয়মিত ভাবে করা চলছে। আবার, রানাঘাট মহকুমার আরেক পুরসভা বীরনগর স্যানিটাইজ়েশনের কাজের জন্য ব্যাটারিচালিত ৩৫টি যন্ত্র কিনেছে। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে রাসায়নিক স্প্রে করার পাশাপাশি যে সমস্ত এলাকায় মানুষের নিত্য যাতায়াত রয়েছে, যেমন— ব্যাঙ্ক, বাজার চত্বর, পুরভবনের মত এলাকাগুলি— সেখানে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড স্প্রে করে জীবাণুমুক্তিকরণের করা চলছে।
তবে এর মধ্যেই এই সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড অল্প পরিমাণে ব্যবহারের দাবি উঠেছে এবং তা যাতে মানুষের শরীরের সরাসরি সংস্পর্শে না আসে, তা নিশ্চিত করার দাবিও উঠছে। শান্তিপুরের বাসিন্দা পরিবেশকর্মী সুব্রত বিশ্বাস বলছেন, “এই সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড জীবাণুনাশক হিসাবে খুবই কার্যকর হবে। তবে দেখতে হবে, তা যেন নির্দিষ্ট পরিমাণে ব্যবহৃত হয় এবং মানুষের দেহের সরাসরি সংস্পর্শে না আসে। এই সাবধানতা মেনে চললেই ভাল।”
অন্য দিকে, চাকদহ বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সভাপতি বিবর্তন ভট্টাচার্য বলেন, “এই রাসায়নিকের পরিমিত ব্যবহারই কাম্য। তবে অনেক সময়ে এর ব্যবহারে মাটির উর্বরতা শক্তি এবং মাইক্রো লেভেলের ব্যাকটেরিয়ার মৃত্যু ঘটে। পরবর্তী কালে এগুলোর বেশি ব্যবহারে যেন জীবাণুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি না পায়, সেটাও মাথায় রাখতে হবে।”
পুরকর্তারা অবশ্য অভয় দিয়ে জানাচ্ছেন, অল্প পরিমাণেই সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইডের মিশ্রণ ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে নাগরিকের ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে। আর এটি মূলত রাস্তাঘাটে স্প্রে করা হচ্ছে। ফলে, তা মানুষের শরীরের সংস্পর্শে আসছে না। পাশাপাশি, এটি ভাল জীবাণুনাশক হিসাবেও কাজ করছে। এছাড়া, রাসায়নিক ছড়ানোর আগে পুরোপুরি সাবধানতা অবলম্বন করেই কাজ করা করা হচ্ছে পুরকর্মীদের তরফে।
রানাঘাট মহকুমারই আরেক শহর শান্তিপুর পুরসভায় অবশ্য সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড ব্যবহার করাই হচ্ছে না। সেখানে পুরকর্মীরা মূলত ফিনাইল, ব্লিচিং পাউডারের উপরেই ভরসা রাখছেন। শহরের বিভিন্ন ব্যস্ত বাজার এলাকা, ব্যাঙ্ক, ডাকঘরের মতো জায়গায় যেখানে মানুষের নিয়মিত ভিড় লেগে থাকে, সেখানে এবং বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় এই সব স্প্রে করা হচ্ছে। পুরসভার নিজস্ব স্প্রে করার যন্ত্রের পাশাপাশি রাস্তাঘাটে জীবাণুনাশক স্প্রে করার জন্য গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। সেই গাড়ি মারফত নিয়মিত রাস্তাঘাট পরিশোধনের কাজ চলছে।
পুরকর্তাদের কথায়, এই সময়ে জীবাণুনাশক দিয়ে এলাকা জীবাণুমুক্ত করার কাজ করতেই হত। সব রকমের বিধি মেনেই তা করা হচ্ছে। শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও এই ধরনের জীবাণুনাশক দিয়ে স্যানিটাইজ়েশনের কাজ চলছে। শান্তিপুর এবং রানাঘাট উত্তর পশ্চিম বিধানসভা এলাকায় স্থানীয় বিধায়কদের উদ্যোগে এই কাজ করা হয়েছে। সেখানে সাহায্য নেওয়া হয়েছে দমকলের। দমকলের গাড়ি নিয়ে পাইপ দিয়েই এই জীবাণুনাশক রাস্তাঘাটে এবং বাজার এলাকায় ছড়ানো হয়েছে। সেখানে জীবাণুনাশক হিসাবে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইডের পাশাপাশি ফিনাইলও ব্যবহার করা হয়েছে। এতে এলাকা করোনাভাইরাস থেকে জীবাণুমুক্ত করা যাবে বলে মনে করছেন সকলে।
এই সমস্ত এলাকা পরিশোধনের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যবধানে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিকেও জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলছে। সেখানেও অনেক ক্ষেত্রেই পরিমাণমতো জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক জায়গাতেই তৈরি হয়েছে কোয়রান্টিন সেন্টার, আইসোলেশন সেন্টার। সেখানে নিয়মিত জীবাণুনাশক ব্যবহার করা জরুরি, জানাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাই এই সব জায়গায় নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে।
এত কিছুর পরেও বাগে আনা যাচ্ছে না করোনাভাইরাসের বেড়ে চলা সংক্রমণকে। তাকে রুখতে গেলে মানুষের যথাসম্ভব ঘরে থাকাই একমাত্র উপায়। সঙ্গে রাস্তাঘাট, গাড়ি, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জীবাণুমুক্ত করার এক নিরন্তন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন পুরকর্মীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy