Advertisement
E-Paper

পরিণতি

সেই শক্তির বীজ রহিয়াছে সমাজের ভিতরে, নাগরিকদের একটি বড় অংশের মানসিকতায়।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:০৫
Share
Save

অনেক সামুদ্রিক ঝড় বিদায় লইবার সময় তাহার লেজের ঝাপটে ধ্বংসলীলার শেষ কিস্তি সম্পাদন করিয়া যায়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের লেজের দাপট আমেরিকার ইতিহাসে নূতন অধ্যায় সংযোজন করিল। কলঙ্কের অধ্যায়। যে রাষ্ট্র গোটা দুনিয়ায় গণতন্ত্র রফতানি করিতে সদাব্যস্ত, তাহার আইনসভার গর্ভগৃহে হানাদারদের এই বেপরোয়া আক্রমণে সমস্ত নিন্দা বা ব্যঙ্গকে তুচ্ছ করিয়া বিপুল আকারে উঠিয়া আসিয়াছে এক বিপুল উদ্বেগ। গণতন্ত্রের বিপদ কতটা ভয়ানক হইতে পারে, ৬ জানুয়ারি ২০২০ তাহার স্মারক হইয়া থাকিবে। ভয় ও উদ্বেগের বিশেষ কারণ ইহাই যে, এই আক্রমণ আকস্মিক ছিল না, বরং এক অর্থে তাহা ছিল দীর্ঘ প্রস্তুতির ‘স্বাভাবিক’ পরিণতি। সেই প্রস্তুতি হিংস্র বিদ্বেষের, কদর্য অসহিষ্ণুতার, সর্বগ্রাসী স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার। এই মানসিকতায় ইন্ধন দিয়া এবং তাহাকে কাজে লাগাইয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হইয়াছিলেন, তাহার পর চার বৎসর ধরিয়া বিভাজনী বিদ্বেষকে উত্তেজিত করিয়া গিয়াছেন। ভোটে হারিবার পরেও জনাদেশ অস্বীকার করিয়া প্রেসিডেন্ট থাকিয়া যাইবার জন্য উৎকট জবরদস্তি শেষ অবধি এক চরম মাত্রায় পৌঁছায়, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউস হইতে আপন ‘সমর্থক’ বাহিনীকে কার্যত ক্যাপিটল আক্রমণে প্ররোচিত করেন। বুধবারের দক্ষযজ্ঞ তাহার পরিণাম।

পরিসমাপ্তি নহে। যে বিষাক্ত বিদ্বেষের পিশাচনৃত্য দেখিয়া দুনিয়া স্তম্ভিত, জো বাইডেনের আনুষ্ঠানিক অভিষেকে এবং সেই অভিষেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘স্বীকৃতি’দানে তাহার সমাপ্তি ঘটিবার নহে, সামুদ্রিক ঝড় অপেক্ষা এই দানবের শক্তি অনেক বেশি। সেই শক্তির বীজ রহিয়াছে সমাজের ভিতরে, নাগরিকদের একটি বড় অংশের মানসিকতায়। গণতান্ত্রিক ঔষধের সাহায্যে এই গভীর ও জটিল ব্যাধিকে প্রশমিত করিবার দায়িত্ব বহন করিতে হইবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে, এবং কংগ্রেসের দুই সভায় চালকের আসনে অধিষ্ঠিত ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধিদের। কঠিন পরীক্ষা। কিন্তু এখন কঠিনতর পরীক্ষার সম্মুখীন রিপাবলিকান পার্টি। মিট রমনি হইতে এমনকি মিচ ম্যাকনেল অবধি দলের অনেক নেতা ট্রাম্প ও তাঁহার বাহিনীর আচরণের তীব্র প্রতিবাদে মুখর হইয়া গণতন্ত্রকে বাঁচাইবার ডাক দিয়াছেন। কিন্তু গণতন্ত্রের প্রতি দায়িত্ব সত্যই পালন করিতে চাহিলে কেবল বিষবৃক্ষের ফলটিকে প্রত্যাখ্যান করিলে চলিবে না, বৃক্ষটিকেই শিকড়-সুদ্ধ উপড়াইয়া ফেলিতে হইবে। ট্রাম্প ব্যক্তিমাত্র, ‘ট্রাম্পবাদ’কে উৎখাত না করিলে গণতান্ত্রিক আমেরিকার ভবিষ্যৎ সুস্থ হইতে পারিবে না।

কেবল আমেরিকায় নহে, সর্বত্র এই অসহিষ্ণু ও হিংস্র বিদ্বেষের দুনিয়াদারি কোভিড সঙ্কটকেও ছাপাইয়া যাইতেছে। এই অতিমারিতেও ভারতের অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। অসহিষ্ণুতা বা বিদ্বেষ নূতন নহে, কিন্তু গত কয়েক বছরে জনজীবনে যে ভাবে তাহার দাপট বাড়িয়াছে, তাহা অভূতপূর্ব। এই বিপদের উৎসে রহিয়াছে বিভাজনের বিষকে কঠোর ভাবে দমন করিবার পরিবর্তে তাহার কারবারিদের প্রশ্রয় এবং প্ররোচনা দিয়া সমাজ ও রাজনীতিকে উত্তরোত্তর বিষাক্ত করিয়া তুলিবার অনাচার। এক অর্থে ভারতের বিপদ আমেরিকা অপেক্ষা অনেক বেশি। ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁহার শিবিরের বিরুদ্ধে তাঁহার দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি ক্রমাগত লড়াই চালাইয়া গিয়াছে, তাহাদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ ক্রমশই জোরদার হইয়াছে, নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রচারেও গণতন্ত্রীদের সংগঠন ছিল দর্শনীয়। ভারতে এই গণতান্ত্রিক প্রতিস্পর্ধার শক্তি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। গণতন্ত্রের ধারক ও রক্ষক বিবিধ প্রতিষ্ঠান ক্রমশ দুর্বল। ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে। শাহিন বাগ হইতে সিংঘু সীমান্ত— আশার আলো জ্বলিতেছে। কিন্তু তাহাতে নিশ্চিন্ত বোধ করিবার উপায় নাই।

Donald Trump Joe Biden US President

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}