Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Video Games

পরিপার্শ্ব নিয়ে উদাসীন প্রজন্ম

বিশেষত এই অতিমারির সময়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

সূর্যশেখর দাস
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৫৬
Share: Save:

ইদানীং অনেকে ভিডিয়ো গেমের ইতিবাচক দিকগুলোর কথা বলছেন। ভাবনাটা মন্দ নয়। ভিডিয়ো গেম স্কুলপড়ুয়াদের বোধশক্তি এবং কল্পনাশক্তিকে পরিপুষ্ট করে। তাই ছাত্রছাত্রীরা এই গেম খেললে খারাপটা কী?

তবু ভিডি‌য়ো গেম-সংক্রান্ত বাস্তবতাটা এক বার তলিয়ে দেখলে বোধ হয় ভালই হবে। ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই ক্রীড়া সত্যিই খুব আকর্ষক। এবং এখানেই সমস্যার সূত্রপাত। কিছু ছাত্রছাত্রী ভিডিয়ো গেম খেলতে খেলতে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে, তারা তাদের পড়াশোনাকে অবহেলা করে। এখন কেউ যদি ভাবেন যে, এই খেলার খপ্পরে পড়ে শুধুমাত্র লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে, তা হলে তিনি ভুল ভাবছেন। এই গেমের দৌলতে অনেক ছাত্রছাত্রী তাদের পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে তীব্র উদাসীন হয়ে উঠছে। ডিজিটাল খেলা খেলতে ব্যস্ত অনেক পড়ুয়ার এখন বন্ধু/ আত্মীয়-স্বজনের তেমন কোনও প্রয়োজন নেই! এমনকি তারা নিজেদের পরিবারের অন্য সদস্যদের কথাও সে ভাবে ভাবছে না! আসলে যন্ত্রের মধ্যেই যদি সব কিছুকে ‘খুঁজে’ পাওয়া যায়, তা হলে আর রক্তমাংসের লোকজনদের কী দরকার!

এমনিতেই আজকাল লেখাপড়ার প্রচণ্ড চাপ। বিশেষত ইংরেজি মাধ্যমের পড়ুয়ারা যখন স্কুলে যায়, ব্যাগের ভারে তাদের শিরদাঁড়া অনেক সময়েই প্রায় ঝুঁকে যায়। স্কুলের পড়া সামলাতে গিয়ে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এর পর রয়েছে গৃহশিক্ষক কিংবা টিউটোরিয়াল হোমের প্রবল উপস্থিতি। এই পরিস্থিতিতে ছেলেমেয়েরা যদি বিকেলে কিংবা ছুটির দিনগুলোতে মাঠে গিয়ে খেলে, তা হলে তারা তাদের হারিয়ে যাওয়া প্রাণশক্তি আবার ফিরে পাবে। মাঠে গিয়ে দৌড়ঝাঁপ করলে মন-মেজাজ যেমন ভাল থাকে, তেমনই শরীরটাও সুস্থ থাকে। আজকাল তো অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়েও স্থূলত্বে ভোগে। কেউ কেউ আবার ডায়াবিটিসে আক্রান্ত! এটা তো ঠিক যে, শরীরের সঙ্গে মনের গভীর যোগসূত্র রয়েছে। সোজা কথা হল, খেলার মাঠের সঙ্গে যোগসূত্রটা কিছুতেই ঘুচিয়ে ফেলা চলবে না।

ছাত্রছাত্রীদের কেউ কেউ আবার মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে ‘সোশ্যাল ক্যাসিনো গেম’-এর মতো খেলা খেলছে। এই ধরনের গেম খেলতে গিয়ে অনেকের মধ্যে জুয়াড়ির মানসিকতা ইতিমধ্যেই ডালপালা মেলেছে, যা আদৌ কাম্য নয়। আবার ভিডিয়ো গেম খেলতে গিয়ে কেউ টাকা ধার করছে, কেউ চুরি পর্যন্ত করছে! চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলে সেই পড়ুয়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রচণ্ড অশান্তি করছে। কেউ কেউ আত্মহত্যা করতেও পিছপা হচ্ছে না! এই বিষয়ে বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্সেস (নিমহ্যান্স) উদ্বেগও প্রকাশ করেছে। বিশেষত এই অতিমারির সময়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। কারণ, কিছু ছেলেমেয়ে অনলাইন লেখাপড়ার জন্য হাতে মোবাইল ফোন/ ট্যাব পেয়েছে। আবার কেউ কম্পিউটারও ব্যবহার করছে। এবং এই সুযোগে তারা ডিজিটাল মাধ্যমে যথেচ্ছ গেম খেলছে। পড়াশোনা করার বদলে তারা হয়ে উঠছে বদমেজাজি। পান থেকে চুন খসলেই, এমনকি বিনা কারণে অন্যের গায়ে হাত পর্যন্ত তুলছে। রেগে গেলে জিনিসপত্র, মোবাইল ভাঙচুর করছে।

তা হলে উপায়টা কী? যে হেতু ভিডিয়ো গেমের কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে, তাই পড়ুয়াদের জগৎ থেকে ডিজিটাল মাধ্যমের এই খেলা ব্রাত্য করে দেওয়া উচিত হবে না। তবে গেম খেলা এবং পড়াশোনার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতেই হবে। ছেলেমেয়েরা ভিডিয়ো গেম খেলুক, কিন্তু এ ক্ষেত্রে মা-বাবা/ পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রয়োজনীয় নজর দিতে হবে। অর্থাৎ, নজরদারি করাটা জরুরি। তাঁরা নিশ্চয়ই চাইবেন না যে, তাঁদের ছেলেমেয়েরা ‘ব্লু হোয়েল’-এর মতো গেম খেলে মৃত্যুর গহ্বরে ঝাঁপ দিক! আবার, হিংস্র এবং বিদ্বেষপূর্ণ গেম খেলে সন্ত্রাসবাদী, দাঙ্গাবাজ এবং বিষাক্ত চিন্তাভাবনা লালন-পালনকারী অমানুষ হওয়ার মধ্যেও কোনও কৃতিত্ব নেই। পড়ুয়ারা বরং এমন অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিংবা কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে, যেগুলোতে প্রয়োজন বুঝে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া যায়।
এ ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক গ্যাজেটগুলোতে আগে থেকেই উপযুক্ত ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে গেম ডাউনলোড করা থাকবে। তা হলে ছেলেমেয়েরা ক্ষতিকারক গেমগুলো খেলতে পারবে না। আবার শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ভিডিয়ো গেমের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলোর উপরে ক্লাস নিতে পারেন।

এ ছাড়া দৈনিক ‘ডিজিটাল ফাস্টিং’ অনুশীলন করাটা খুব জরুরি। অর্থাৎ, পড়ুয়ারা রোজ কয়েক ঘণ্টা করে মোবাইল ফোন কিংবা কম্পিউটার থেকে দূরে থাকবে। সেই সময় তারা লেখাপড়া করতে পারে, শরীরচর্চা করতে পারে বা খেলতে পারে, আবার নিজেদের এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্পর্কে ভাবতে পারে। এবং অবশ্যই বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে কিছু কাজ করতে পারে। ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের (এ ক্ষেত্রে ফোন বা কম্পিউটার) দাস হয়ে বেঁচে থাকাটা কি কোনও কাজের কথা?

অন্য বিষয়গুলি:

Video Games Addiction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy