Advertisement
E-Paper

আর্থিক দুনিয়ার সাক্ষর নাগরিক

ইউপিআই-নির্ভর লেনদেন ক্রমে অতি জনপ্রিয় হয়েছে। বহু মানুষ নিছক সঞ্চয়ের বদলে সক্রিয় বিনিয়োগের পথে হেঁটেছেন। কিন্তু, যাঁরা এই বাজারের বাইরে থেকে গিয়েছেন, তাঁদের খবর কী?

নীলাঞ্জন দে

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:১৯
Share
Save

ভারতে আর্থিক ক্ষেত্রে বিবিধ সংস্কার যেমন হচ্ছে, তেমনই আরও বেশি মানুষকে সেই ক্ষেত্রের অন্তর্গত করার কাজটাও চলছে। গত দেড় দশকে বহু পরিবর্তনের সাক্ষী আমরা। কোর ব্যাঙ্কিং-এর আওতায় আনা গেছে অনেককে। ইউপিআই-নির্ভর লেনদেন ক্রমে অতি জনপ্রিয় হয়েছে। বহু মানুষ নিছক সঞ্চয়ের বদলে সক্রিয় বিনিয়োগের পথে হেঁটেছেন। কিন্তু, যাঁরা এই বাজারের বাইরে থেকে গিয়েছেন, তাঁদের খবর কী?

দশ-পনেরো বছর আগে চিটফান্ডের বাজার যখন চড়া ছিল, নানা শ্রেণির মানুষ চড়া সুদের আশায় অনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে প্রচুর লগ্নি করেছেন। স্বল্প সঞ্চয়ী প্রান্তিকরা টাকা হারিয়েছেন। সেই বিপদের মূলে ছিল আর্থিক বাজার সম্বন্ধে ধারণার অভাব। সে ঘাটতি কি মিটেছে? বিবাহিতা কন্যা যে মা-বাবার সঞ্চয়ের নমিনি হতে পারেন, সে কথা এখনও জানেন না অনেকেই। বিমার কিস্তির টাকা এজেন্টের হাতে নগদে না দিয়ে চেক দেওয়া ভাল বা ব্যাঙ্ক থেকে ইসিএস করা, এ কথাও জানা নেই অনেকেরই। শুধু ‘পিছিয়ে থাকা’ জনগোষ্ঠীই নয়, শেয়ার বাজারে লগ্নি করে লাভ করতে চান, এমন মানুষও না-জানার অন্ধকারে থাকেন। মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা লগ্নি করেছেন, এমন অনেকে জানেন না যে, ফান্ড ম্যানেজার তাঁর টাকা কোথায় বিনিয়োগ করছেন, তা জানাও অতি সহজ। ব্যাঙ্কের সেলস-এ কাজ করা যে ছেলেটি নিজের টার্গেট পূরণের জন্য ‘খুব ভাল একটা ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান এসেছে স্যর’ বলে অহেতুক বিমার পলিসি গছিয়ে দেয় বয়স্ক নাগরিককে, সেই মিথ্যাচারে শিকার হন অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষও।

কিছু দিন আগে এমন এক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল, যাঁরা আর্থিক দুনিয়ার সঙ্গে তেমন ভাবে পরিচিত নন। অবসর জীবনের জন্য টাকা জমানোর কথা শুনে তাঁরা নিজেদের মধ্যে মুখ-চাওয়াচাওয়ি করেন— বোঝা যায়, এই নিয়ে বিশেষ চিন্তাভাবনা করেন না। এ দিকে অবসরের কিছু কাল পরে সঞ্চয় ফুরিয়ে গিয়ে অন্যের উপরে আর্থিক ভাবে নির্ভরশীল হতে বাধ্য হওয়া আমাদের দেশে খুব সাধারণ ব্যাপার। জমানোর মতো ‘উদ্বৃত্ত’ টাকা বেশির ভাগ মানুষের হাতেই থাকে না, এ কথা যেমন সত্য— তেমনই, কত টাকা জমাতে হবে, কী ভাবে জমাতে হবে, নিজের রোজগারের থেকেই সেই সঞ্চয়ের টাকাটুকু বার করতে হবে কী করে, এই কথাগুলোও তাঁদের জানানোর মতো কেউ নেই।

স্থায়ী চাকরির উপরে নির্ভরশীল মধ্যবিত্তের জন্য যে ভাষায়, যে ভঙ্গিতে আর্থিক পরিকল্পনার কথা বলা যায়, গিগ অর্থনীতির অস্থায়ী কর্মীর কাছে তা অর্থহীন। সেখানে দরকার বস্তুনিষ্ঠ শিক্ষা এবং হাতে-গরম মডেল। তবে সেই শিক্ষা-মডেল সংক্রান্ত প্রচেষ্টার মূলে যেন দায়িত্ববান কেউ থাকেন, না হলে আগের মতো অনিয়ন্ত্রিত ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় চলে যেতে পারে।

আর্থিক ক্ষেত্রের সম্প্রসারণের রথের চাকা কিন্তু থেমে নেই। শুধু জনধন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৫৩ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। গ্রাহকদের প্রায় ৫৫% মহিলা; আনুমানিক ৭০% গ্রাহক গ্রামীণ বা আধা-শহুরে। ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার যা তৈরি হচ্ছে, তাতে আগামী দিনে এর গতি বাড়বে। অদূর ভবিষ্যতে ১০০% প্রাপ্তবয়স্ক এর আওতায় আসবেন, এমন আশা করা যায়। তাঁদের মধ্যে আর্থিক সচেতনতা তৈরি না হলে এক অবিশ্বাস্য বিপদের সামনে দাঁড়াবে ভারত, যার লক্ষণ প্রতি দিন দেখা যাচ্ছে। প্রথম কথা, মানুষকে প্রশ্ন করতে শিখতে হবে। কেউ বছরে ২০% সুদের গ্যারান্টি দিলে জানতে চাইতে হবে যে, কোথা থেকে আর কী ভাবে আসবে এই চড়া রিটার্ন? এই প্রশ্ন না করে আগে অনেকেই ঠকেছেন— এবং, তাঁরা বিশ্বাস হারিয়েছেন গোটা আর্থিক ব্যবস্থার প্রতি। সর্বজনীন আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য সেই বিশ্বাসও ফিরিয়ে আনতে হবে। তবে, বিশ্বাস হতে হবে তথ্যভিত্তিক, আবেগজনিত নয়। অর্থাৎ, ব্যাঙ্কের ম্যানেজার যতই মিষ্টি করে বোঝান যে, কোনও একটি বিশেষ বিমা প্রকল্পে টাকা রাখলে আপনার লাভ— যত ক্ষণ না নিজে বিচার করে বুঝতে পারেন যে, সেই ম্যানেজার সত্যি বলছেন না মিথ্যা, তত ক্ষণ অবধি টাকা ঢালা চলবে না।

আর্থিক বাজারের নিয়মকানুন এখন আগের তুলনায় অনেক সরল; সরকারি নীতিও ইতিবাচক। এই আবহে নিজের আর্থিক পরিকল্পনা অনুযায়ী যথাযথ প্রকল্প বেছে নিয়ে বিনিয়োগ করা সম্ভব। মনে রাখা ভাল যে, স্বাস্থ্যবিমা করিয়ে রাখা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই প্রয়োজন অবসরজীবনের আর্থিক প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে হিসাব অনুযায়ী লগ্নি করা। বৃদ্ধ বয়সে সামাজিক সুরক্ষা নাও থাকতে পারে, তাই যখন সাধ্য থাকে, তখন থেকেই সে বয়সের কথা ভাবতে শুরু করা বিধেয়। টাকা জমানোর সাধ্য সবার সমান নয়। কিন্তু, আর্থিক সাক্ষরতার প্রসার ঘটলে সাধ্য-নির্বিশেষে প্রত্যেকেরই লাভ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Core Banking Core Banking System Online Payment Online Transaction Tips Savings Tips Investment Tips

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}