ফাইল চিত্র।
আলো ঝলমলে নজরুল মঞ্চে বেশ লাগছিল তাঁকে। পরনে বাসন্তী-রঙা ডিজাইনার কুর্তা আর সাদা চুড়িদার। একটু পরেই রাজ্য সরকারের ‘বঙ্গসম্মান’ পাবেন। যে সম্মান নেওয়ার ফাঁকে তিনি মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীকে বলবেন, সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে আবার বাংলার হয়ে খেলার জন্য ফিরে আসতে পারেন।
বয়স ৩৮ ছুঁই-ছুঁই। কিন্তু চেহারা এখনও ঈর্ষণীয় রকমের স্লিম। টেলিভিশনের বাইরে ঋদ্ধিমান সাহাকে সেদিনই প্রথম চর্মচক্ষে দেখলাম। দূর থেকে। ভেবেছিলাম, একবার গিয়ে কথা বলব। ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়া, সাংবাদিকের সঙ্গে ঠোক্কর, বাংলার এক ক্রিকেটকর্তার কথায় অসম্মানিত বোধ করে ধাত্রীগৃহ ছেড়ে ত্রিপুরার হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত— ঋদ্ধিমান অধুনা খবরে। কিন্তু ঔপচারিকতার শেষে তিনি তাঁর আটপৌরে উপস্থিতির মতোই ছিপছিপে এবং সরু হয়ে নীরবে চলে গিয়েছিলেন সম্ভবত। বিবিধ অভ্যাগতের ভিড়ে ঠোক্কর খেতে খেতে মঞ্চের কাছে পৌঁছে তাঁকে আর দেখতে পেলাম না।
মনে হচ্ছিল, এ-ও এক অদ্ভুত পরিহাসই যে, যাঁর নামের অর্থ ‘সৌভাগ্যশালী’, দুর্ভাগ্য তাঁকে কী ভাবে তাড়া করে বেড়াচ্ছে! বিশ্বাস বা অবিশ্বাস যার-যার নিজস্ব। কিন্তু কৌতূহলবশত ঘেঁটেঘুটে দেখলাম, চন্দ্রভিত্তিক বৈদিক জ্যোতিষবিদ্যা অনুযায়ী ‘ঋদ্ধিমান’ নামের অধিকারীদের মধ্যে সাধারণত সব কিছু খুব সহজে পেয়ে যাওয়ার সহজাত ক্ষমতা থাকে। এই মানুষেরা সাধারণত সকলের স্নেহের পাত্র হন এবং অন্য সকলে এঁদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন। বলে কী!
এমনিতে মুখচোরা, প্রায় নীরব এবং ছায়ার মতো বহমান অথচ সেকেন্ড স্লিপের কাছাকাছি ক্যাচ উঠলে পাখির মতো উড্ডীয়মান ঋদ্ধিমানের প্রতি স্নেহ কারও কম ছিল না (বিরাট কোহলী সুদ্ধ)। কিন্তু পক্ষপাতিত্ব? হাঃ! বলে কী!
বলতে কি, একটু রাগই হয়েছিল। একটা প্রাদেশিক রাগ! স্রেফ তারুণ্য এবং ভবিষ্যতের রোডম্যাপের দোহাই পেড়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উইকেটকিপারের বদলে কোথাকার এক ছোকরাকে ভারতীয় দলে নিয়ে নেওয়া হল!
এমনিতেই ছেলেটাকে বরাবরের পুচ্ছপাকা মনে হয়। ফ্যাশনেব্ল দাড়ি আছে। কিন্তু কোথাও একটা সেই ছমছমে ভাবটা নেই। গ্ল্যাক্সো বেবি মার্কা চেহারা। একেবারেই এ কালের ক্রিকেটারদের মতো নয়। ক্ষিপ্রতা তো নেই-ই। বরং চলাফেরায় একটা ন্যাদসমার্কা শ্লথতা আছে। বেবি পান্ডার মতো।
কিন্তু আবার টিপিক্যাল দিল্লির ছেলেদের মতো লুল্লু-ভুল্লু আছে। ডানহাতের কব্জিতে সলমন খান মার্কা ঢলঢলে রুপোর ব্রেসলেট আছে। চোখে বাহারি ওকলে রোদচশমা আছে। পরনে ঝিনচ্যাক এবং খুনখারাবি রঙের পোশাক আছে। বাহুলগ্না সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড আছে। তাঁকে নিয়ে ইনস্টাগ্রামে আদিগন্ত বরফাবৃত পাহাড়ে ছুটি কাটানোর ছবি আছে। সঙ্গে মনোহারী ক্যাপশন আছে— ‘আই লাইক মি বেটার হোয়েন আয়্যাম উইথ ইউ’।
এই ছেলে শোল্ডার ড্যাশে ‘সুপারম্যান’-কে ছিটকে দিয়ে টিম ইন্ডিয়ায় ঢুকে পড়ল! বাঙালি বলেই এই বঞ্চনা। অতএব প্রতিবাদ। প্রতিরোধ ইত্যাদি, ইত্যাদি এবং ইত্যাদি।
তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১১৩ বলে ১২৫ রানের মারহাব্বা ইনিংসটা দেখে মনে হল, একটু ঘেঁটে দেখা যাক ২৪ বছরের লুল্লু-ভুল্লুর জীবনকাহিনি।
দেখলাম।
রাত আড়াইটের অন্ধকারে ১২ বছরের এক কিশোর উত্তরাখণ্ডের রুরকি থেকে ক্রিকেট শেখার জন্য প্রতি সপ্তাহের শেষে ছ’ঘণ্টার বাস ঠেঙিয়ে চলেছে দিল্লি। সঙ্গে মা। মায়ের সঙ্গে ফ্লাস্কে কফি আর একটা টিফিন কৌটোয় পনির পরোটা। সেই পরোটায় একটু বেশি পনির। একটু বেশি মশলা। আর তার সঙ্গে মাখানো অনেকখানি জেদ। একরোখা জেদ।
ইদানীং ঋষভ পন্থকে টেলিভিশনের একটা বিজ্ঞাপনে দেখি। ক্লান্ত, অবসন্ন শরীরে কোনও এক গুরুদ্বারের বারান্দায় রাতের বিছানা পেতে শুয়ে পড়ছেন। আর তাঁর গায়ে রজাই জড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছেন এক সহৃদয় পান্থ। প্রথমে ভেবেছিলাম, গুল। এসব ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ গালগল্প সাধারণত স্বপ্ন তাড়া করার বিজ্ঞাপনের দাবি অনুযায়ী করা হয়ে থাকে। এ-ও তেমনই। কে আর খতিয়ে দেখতে যাচ্ছে! কিন্তু অনুসন্ধিৎসু এবং ছিদ্রান্বেষী আমি দেখল, ঘটনাটা ঠিক। ভোররাতে দিল্লিতে বাস থেকে নেমে সকাল থেকে সনেট ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে প্র্যাকটিস করত সেই কিশোর। কোচ ছিলেন তারক সিংহ। যাঁর কাছে ক্রিকেটের সঙ্গে জীবনেরও পাঠ নিত সে। রাত্রিযাপন করত মোতিবাগের গুরুদ্বারে। যে গুরুদ্বারে তার শিক্ষয়িত্রী মা দিনভর সেবাদানের কাজ করতেন। ঝাড়পোঁছ করতেন। ক্ষুধার্তদের খাবার পরিবেশন করতেন। আর অপেক্ষা করতেন কিশোর পুত্রের দু’দিনের প্র্যাকটিসের পর আবার ফিরতি পথে ছ’ঘণ্টার বাসযাত্রার।
লজঝড়ে বাসে চেপে সেই সপ্তাহান্তিক সফরের কথা এখনও মনে রেখেছেন ঋষভ। তাঁর বয়স এখন তখনকার ঠিক দ্বিগুণ— ২৪ বছর।
অতীত না-ভোলা ২৪ বছুরে বলেন, ‘‘খুব কষ্টে কেটেছে সেই দিনগুলো। মা তো বাসে ঘুমাতও না। যাতে আমি খানিকটা ঘুমিয়ে নিতে পারি। আমাদের দেশে রাতবিরেতে মহিলাদের বাসজার্নি করা নিরাপদ নয়। কিন্তু মা তা-ও করত।’’ দিল্লিতে চেনা-পরিচিত লোকজন যে একেবারে ছিলেন না, তা নয়। কিন্তু পন্থ পরিবার কারও দাক্ষিণ্য চায়নি। বছরতিনেক আগে এক ইংরেজি দৈনিকে সাক্ষাৎকারে ঋষভ বলেছিলেন, ‘‘মুঝে কিসি কা অ্যাহসান নহি লেনা থা। আমি চাইনি, পরে কেউ বলুক যে, সে আমার জন্য হ্যানো করেছে, ত্যানো করেছে। মা চেনা-পরিচিতদের সঙ্গে দেখা করত মাঝেমধ্যে গিয়ে ঠিকই। কিন্তু সারাদিনটা গুরুদ্বারে কাজ করত। তাতে তো পুণ্যও হয়। লোকের আশীর্বাদ পাওয়া যায়।’’
সিনেমার মতো লাগছে? না কি টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের মতো?
বাবা ছিলেন মোটর সাইকেল নির্মাতা সংস্থায় ম্যানেজার। সেটা ছেড়ে ঝুঁকি নিয়ে নিজের ব্যবসা শুরু করেন। টানাটানির সেই দিনে একটাই মাত্র ঘরে বাবা-মা আর বোন সাক্ষীর সঙ্গে থাকতেন ঋষভ। রাজিন্দর পন্থ বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত ক্রিকেট খেলেছিলেন। পরিবার পাশে না থাকায় তার বেশি এগোতে পারেননি। আশ্চর্য নয় যে, তাঁর স্বপ্ন ছিল, ছেলে ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলবে। পাঁচ বছর বয়সেই ঋষভের ক্রিকেটশিক্ষা শুরু। আট বছর বয়সে বাবা এনে দিয়েছিলেন ১৪,০০০ টাকার ব্যাট। অভাবের সংসারে আপাত-অনর্থক বড়লোকি দেখে মা ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু ছেলে মহাখুশি।
এখন তিনি অজস্র ব্যাটের মালিক। কিন্তু সেই ব্যাটটা এখনও যত্ন করে রেখে দিয়েছেন। স্টিকার উঠে গিয়েছে। কিন্তু বাবার দেওয়া ‘বিশেষ উপহার’ রয়ে গিয়েছে ছেলের কাছে। যে বাবা তাঁর ক্রিকেটস্বপ্ন পূরণের জন্য একদা তাঁর পরিবারের সাহায্য পাননি। কিন্তু পুত্রের পিঠ চাপড়ে ক্রিকেট মাঠে ঢুকিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘যাও! হ্যাভ ফান। আমি আছি।’’
ক্রিকেটের অবসরে পিতা-পুত্র বসে কৌশল ঠিক করেছেন। ছোট ছোট টুর্নামেন্টের জন্য ছোট ছোট লক্ষ্য। তার পর সেই সাফল্যের ভিত্তিতে অনূর্ধ্ব-১৯ সার্কিটে ঢোকার নকশা তৈরি করেছেন। পড়তে পড়তে যোগরাজ সিংহ-যুবরাজ সিংহের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। পরবর্তীকালের অন্যতম ফ্ল্যামবয়েন্ট ক্রিকেটার তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ক্লান্ত হয়ে গাড়ির পিছনের সিটে ঘুমিয়ে পড়েছে কিশোর পুত্র। আর পরদিন কনকনে শীতের ভোরে গাড়ির ভিতরে বালতি বালতি জল ছুড়ে অনিচ্ছুক ছেলেকে ঘুম থেকে জাগিয়ে নড়া ধরে প্র্যাকটিসে নিয়ে গিয়েছেন যোগরাজ। ক্যাচ প্র্যাকটিস করতে গিয়ে বলের সেলাই লেগে ফড়াৎ করে হাতের তালু ফেটে গিয়েছে। রেহাই মেলেনি। রঞ্জি ট্রফিতে রেকর্ড রান করেও ডাবল সেঞ্চুরি মাঠে ফেলে আসায় পুত্রের মুখের উপর ফোন কেটে দিয়েছেন ক্রুদ্ধ পিতা!
ঋষভ সে তুলনায় ভাগ্যবানই বলতে হবে যে, তাঁর বাবা অতটা নৃশংস ছিলেন না। তাঁর কোচও নয়। তবে সেই কোচ ঋষভের জীবনে আসবেন আরও পরে। ঋষভ যাঁকে ‘উস্তাদজি’ বলে ডাকবেন।
কিন্তু পরিষ্কার হিট এবং দুর্দান্ত হ্যান্ড-আই কো-অর্ডিনেশনের সঙ্গেই যে অনাবিল আত্মবিশ্বাস, আগ্রাসন এবং মারকাটারি স্ট্রোকের ফুলঝুরি এখন ঋষভের ব্যাটিংয়ে দেখা যায়, তার বীজ বোনা হয়ে গিয়েছিল সেই ছোটবেলাতেই। ক্লাস থ্রি-ফোরে পড়ার সময় থেকে ম্যাটের উইকেটে টিন এজারদের সঙ্গে খেলেছেন ঋষভ। রুরকির মতো জায়গায় ক্রিকেটের পরিকাঠামো খুব জোরালো ছিল না। কিছু ‘ওপেন স্কুল টুর্নামেন্ট’ হত। কিন্তু সেখানে খেলতে গেলে তো আবার দাদাদের সঙ্গেই খেলতে হবে। তা-ই সই। ১০টার মধ্যে আটটাতেই ‘ম্যান অব দ্য সিরিজ’-এর প্রাইজ নিয়ে বাড়ি ফিরত শিশু ঋষভ।
দিল্লি ক্যাপিট্যাল্স বা ভারতের হয়ে যে সব অরণ্যদেবোচিত ইনিংস তিনি এখন খেলেন, তা-ও সম্ভবত সেসব টুর্নামেন্টের ফসল। ১০ বা ১২ ওভারের ছোট ছোট ম্যাচ। বড়জোর ১৫ ওভারের। ওপেন করে দ্রুত রান তুলতে হত ঋষভকে। বাচ্চা ঋষভ টার্গেট ঠিক করে নামত— ৫০ রান করলে রান আর বলের মধ্যে ২০-র ব্যবধান থাকতে হবে। মানে ৫০ রান করলে ৩০ বলের বেশি নেওয়া যাবে না।
সিনেমার মতো জীবন? নাকি টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের মতো? কে জানে!
যে জীবনে ‘গুরু’ হয়ে এলেন তারক সিংহ। যিনি তাঁর শিষ্যের মারকুটে সত্তাকে কাটছাঁট করার চেষ্টা করবেন না। কিন্তু ক্রিকেটদর্শনের মোড়টা ঘুরিয়ে দেবেন। ‘স্যর’ তাঁর জীবন বদলে দিয়েছেন। স্বীকার করেন ঋষভ। স্বীকার করেন, ‘উস্তাদজি’ যা বলেছেন, তিনি সেটাই অন্ধের মতো অনুসরণ করেছেন। সে ব্যাটিং টেকনিকই হোক বা কোথায় তাঁর খেলা উচিত।
তারক সিংহই ছাত্র ঋষভকে বলেছিলেন, রাজস্থানের অনূর্ধ্ব-১৩ এবং অনূর্ধ্ব-১৯ দলে গিয়ে খেলতে। ভেবেছিলেন, কোনও গডফাদার ছাড়া দিল্লির নির্মম ক্রিকেটদুনিয়ায় এই বাচ্চা যতটা দৌড়বে, দিল্লির বাইরের কোনও রাজ্যে তার চেয়ে খানিক লম্বা হবে তার দৌড়।
হল না। রাজস্থান টিমে জায়গা পাকা হতে না-হতেই নিয়ম হয়ে গেল, কোনও ‘বহিরাগত’-কে রাজ্যদলের হয়ে খেলতে দেওয়া যাবে না। সাক্ষাৎকারে দার্শনিক শুনিয়েছিল ঋষভকে, ‘‘ওরা বলল, এটাই নিয়ম। আমি যদিও তখনই রাজ্যদলের হয়ে এজ গ্রুপ টুর্নামেন্টে খেলে ফেলেছি। কিন্তু ওরা বলল, নিয়ম! কী আর করব। ঝোলা লেকে নিকাল পড়া। আবার দিল্লি।’’
কিন্তু তখনও তারক সিংহের ঝুলিতে ক্রিকেটশিক্ষার কিছু বাকি ছিল। ‘উস্তাদজি’ তাঁর ছাত্রকে বললেন, এটাই সময়। টেকনিকে আমূল বদল আনতে হবে। ব্যাট স্টান্স, ব্যাট সুইং, গ্রিপ— সমস্ত! যদি নতুন টেকনিককে মাস্ল মেমরি করে নেওয়া যায়, রান থামবে না। কিন্তু প্রচুর খাটুনি। তীক্ষ্মধী শিক্ষক জানতেন, যদি নতুন কিছুর সঙ্গে অভ্যস্ত হতে হয়, এই কাঁচা বয়সই তার সময়।
আবার রাত দুটোয় ওঠা শুরু হল বালকের। নতুন স্টান্স থেকে নতুন গ্রিপ— সবকিছুর শ্যাডো প্র্যাকটিস। কখনও কখনও ভোরের দিকে একটু ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়া। বেশিরভাগ দিন তা-ও নয়। কিছু রান আসছিল বটে। কিন্তু ধারাবাহিকতাটা আসছিল না। ঋষভের মাঝেমধ্যে মনে হত, ধুস! হবে না। তার চেয়ে ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়া ভাল!
কিন্তু ভবিষ্যতের চ্যাম্পিয়নদের ভিতর থেকে সম্ভবত এই সব সময়ে একটা গভীর আহ্বান আসে। অন্তরাত্মার আহ্বান— কিছু একটা করতে হবে। করতেই হবে!
করলেন ঋষভ। কিন্তু মাঝখানে কেটে গেল প্রায় দুটো বছর! ধীরে ধীরে বালক-পেশির স্মৃতির সরণিতে ঢুকে পড়ল নতুন ব্যাকরণ। আচমকা একটা দিন মনে হল, এটাই তো ঠিক! এই তো দিব্যি চলছে ব্যাট! দিল্লি-অসম অনূর্ধ্ব-১৯ ম্যাচ। ঘাসের পিচ বানিয়েছিল দিল্লি। এই ভেবে যে, অসমকে গ্রিন টপে মুড়িয়ে দেওয়া যাবে। উল্টে অসম করল ২৯০। দিল্লি বান্ডিল ১০০ রানে! সেই ১০০-র মধ্যে ৩৫ রানই করেছিলেন ঋষভ। কিন্তু উইকেটটা ছুড়ে দিয়ে এসেছিলেন। বেজায় গালিও খেয়েছিলেন। অসম ফলো অন করিয়েছিল দিল্লিকে। দ্বিতীয় ইনিংসে ঋষভ একাই করলেন দেড়শো। যে ইনিংস নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘ওই দিনটার পর আর পিছন ফিরে তাকাইনি।’’
তাকাননি কি?
বিলক্ষণ তাকিয়েছেন। নইলে গাড়ি কিনতে গিয়ে ছোটবেলার স্মৃতিতে থেকে-যাওয়া সাধারণ ‘আই-২০’ হ্যাচব্যাক কেনেন? অথবা ২০১৭ সালের এক ভোরে বাবার বহ্নিমান চিতার সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘আমি আজকের আইপিএল ম্যাচটা খেলতে যাব। বাবা চেয়েছিলেন, আমি আইপিএল খেলব। আমায় যেতে হবে।’’ নদীতে বাবার চিতাভস্ম বিসর্জন দিয়ে বেঙ্গালুরুর উড়ান ধরেন এবং নেমে পড়েন কোহলীর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে।
সিনেমার মতো লাগছে? না কি টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের মতো?
নাহ্, সিনেমাও নয়। টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনও নয়। জীবনের মতো। ডানহাতের কব্জিতে সলমন খান সদৃশ ঢলঢলে রুপোর ব্রেসলেট আছে। চোখে বাহারি ওকলে রোদচশমা আছে। পরনে ঝিনচ্যাক এবং খুনখারাবি রঙের পোশাক আছে। বাহুলগ্না সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড আছে। কিন্তু সেগুলো সেই বালকবয়সে ফেলে আসা পনির পরোটার মতো। যার সঙ্গে মাখানো ছিল অনেকখানি জেদ।
মারকাটারি পেশাদার ক্রিকেটারের জীবন থেকে পনির পরোটা বিদায় নিয়েছে। কিন্তু জেদটা রয়ে গিয়েছে। যে জেদ সেই কষ্টের দিনগুলোতেও কারও দয়া চায়নি। দাক্ষিণ্য চায়নি। যে জেদে মাখামাখি হয়ে আছে কঠোর সংকল্প, কঠোরতর অধ্যবসায় এবং কঠোরতম পরিশ্রমের জীবন।
ঋদ্ধিমান সাহার নীরব পরিশ্রম, নীরবতর অথচ প্রয়োজনীয় উপস্থিতি এবং নীরবতম প্রতিবাদকে বিন্দুমাত্র খাটো না করেই বলছি— মাফ করবেন ঋষভ পন্থ। লেখাটা লিখতে একটু দেরিই হয়ে গেল। কুর্নিশ জানবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy