Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Relationship

কাউকে মনে রাখা মানেই তাকে প্রতি পদক্ষেপে মনে করা নয়

বিগত প্রেমটির তীব্রতা কেমন ছিল, কী পরিস্থিতিতে বিদায় নিল, নেওয়ার পর কতটা আঘাত এল— এগুলো রিবাউন্ডের নির্ধারক।

প্রতীকী ছবি।

অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়
অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২১ ১৫:৫৭
Share: Save:

ঠিকানাটা বুদ্ধজেঠু জোগাড় করে দিয়েছিল। বাড়িতে কোনও সিনেমার পত্রিকা ঢুকত না। আমির খানকে চিঠি লিখতে চাই— এই মনোবাসনাটি মায়ের কান বাঁচিয়ে বুদ্ধজেঠুকেই বলেছিলাম। স্কুলের বন্ধুরা তখন আমির-সলমনে বিভক্ত। যারা সলমন খানের প্রতি নিবেদিত, তাদের কিছু বাড়তি রোয়াব ছিল। সলমন খানকে চিঠি লিখলেই নাকি পটাপট উত্তর আসে। তিনি কাউকে ফেরান না। উল্টোদিকে আমির খানের ঠিকানা পাওয়াই দুষ্কর। বুদ্ধজেঠু সেই অসাধ্যসাধনটি করেছিলেন।

চিঠিতে কী লিখেছিলাম তা অবান্তর। উত্তর আসেনিটা অবধারিত। তবে বেজায় হৃদয়ভঙ্গ হয়েছিল। পাতি কথায়, আঁতে লেগেছিল। মাস খানেকের মধ্যে বন্ধুদের জানালাম আমি আর আমির খানকে নিয়ে আগ্রহী নই। আজ থেকে আমি অতুল অগ্নিহোত্রীর ফ্যান হলাম। তাদের অনেকেরই বিস্ফারিত প্রশ্ন ছিল, সেটা আবার কে? কেউ কেউ ততদিনে ‘স্যর’ ছবিটির গান চিত্রহারে দেখেছে। কিন্তু হিরোর নাম জানার দরকার মনে করেনি। আমি তাদের অতি উদ্যোগী হয়ে অতুলকে চেনাতে লাগলাম। বাগবাজার বাটা থেকে ফড়িয়াপুকুরের দিকে যেতে কোথায় কোন পোস্টারে তাকে দেখা যাবে, আমি উপযাচক হয়ে বলে দিতাম। এমন আনকোরা কাউকে নির্বাচন না করে সলমন শিবিরে যাইনি কেন? সম্ভবত এমন কাউকে মগজে স্থান দিতে চাইছিলাম যার আশপাশে অত ভিড় নেই। হয়ত অনুত্তমা হয়ে অন্যতমা হতে চাইনি। কিন্তু কয়েকমাসের মধ্যেই টের পাচ্ছিলাম, যাকে নিয়ে বাকি কারও মাথাব্যথা নেই তাকে নিয়ে আমারও আর মাথা ঘামাতে ইচ্ছে করছে না। আসলে অতুলকে আলাদা করে দারুণ ভাল কখনওই লাগেনি। আমির খানের বিপরীতে জোর করে রাখছিলাম। ঘটনাটা থেকে দুটো মোক্ষম উপলব্ধি হয়েছিল।

এক, নিজের চিঠি নিজ দায়িত্বে পাঠানো উচিত (ওই চিঠি বুদ্ধজেঠুর পাঞ্জাবির পকেট থেকে সোজা ধোপার বাড়ি গিয়েছিল)।

দুই, অতুল আমার প্রথম ‘রিবাউন্ড’ প্রেম। অর্থাৎ যে প্রেম নিজের দমে আসে না। অন্যের প্রতিপক্ষ হয়ে আসে।

রিবাউন্ড প্রেমের কোনও জুতসই বাংলা খুঁজে পেলাম না। গুগ্‌ল যে সব কঠিন কঠিন আক্ষরিক অনুবাদ করছিল, তার চেয়ে রিবাউন্ড প্রেম সহজবোধ্য মনে হল। রিবাউন্ড বিষয়টা খুব সহজ না হলেও আমাদের অনেকেরই পরিচিত। প্রাক্তন প্রেমের ধকল পুরোপরি কাটিয়ে ওঠার আগেই নতুন একটি প্রেমে প্রবেশ করলে রিবাউন্ডের সম্ভাবনা থাকে। যে সম্পর্ক চুকে গিয়েছে বলে নিজেকে বোঝাচ্ছিলাম, সে হয়ত তখনও সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো ঘাপটি মেরে আছে। জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে তার তুলনামূলক প্রভাব নতুন সম্পর্কটির ওপর পড়তে পারে। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই প্রভাব সুবিধেজনক হয় না।

আচ্ছা, রিবাউন্ডের বাংলা ‘তুলনা বশবর্তী প্রেম’ হতে পারে কি ?

বিগত প্রেমটির তীব্রতা কেমন ছিল, কী পরিস্থিতিতে বিদায় নিল, নেওয়ার পর কতটা আঘাত এল— এগুলো রিবাউন্ডের নির্ধারক।

ধরা যাক, ভালবাসার মানুষটি পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন। অথবা যাকে পেতে চেয়েছিলাম তিনি অধরাই থেকে গিয়েছেন। সেক্ষেত্রে পরবর্তী কারও সঙ্গে তার সামান্য মিলও আমাদের চিত্তচাঞ্চল্য ঘটাতে পারে। অল্প সাদৃশ্যের মলাটকে আমরাই অতিরঞ্জিত করতে থাকি। ওই তো কেমন হাসলে থুতনিতে টোল পড়ছে। কথার খেই হারালে এ-ও অবিকল চুল হাতড়ায়। ব্যাস! আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করি ‘এ-ও ঠিক ওর মতো’। এক্ষেত্রে রিবাউন্ডের চলন সোজাসাপ্টা। যারা আগের জনের সঙ্গে পরবর্তীর তুলনা টানছেন, তাঁরা নিজেরাও জানেন কার মধ্যে কী খুঁজছি। কাকে আদতে মাথায় আজও বহন করছি। সেই না পাওয়া মানুষটির ‘মতো’ বলেই নতুনজনকে স্থান দিচ্ছি। কৃতিত্ব ওই মিলটুকুরই। প্রেমও ওই মিলটুকুর প্রতি।

কিন্তু তার বাকি দিকগুলো ?

আচ্ছা, রিবাউন্ডের বাংলা ‘তুলনা বশবর্তী প্রেম’ হতে পারে কি ?

আচ্ছা, রিবাউন্ডের বাংলা ‘তুলনা বশবর্তী প্রেম’ হতে পারে কি ? প্রতীকী ছবি।

প্রাক্তনের সঙ্গে ওই বাহ্যিক সাদৃশ্যের ছটায় আমরা নতুন মানুষটির নিজস্ব আলো-অন্ধকার প্রথমদিকে টেরই পাই না। কেউ তো সত্যি কারও হুবহু অনুকরণ বা প্রতিফলন হয় না। হওয়া সম্ভব নয়। গোড়ার দিকে মিলসর্বস্ব আকর্ষণ থাকলেও পরে নতুন করে তাকে আবিষ্কারের আনন্দ আসতে পারে। যাকে পাইনি তাকে মানসিক ভাবে অতিক্রম করতে করতে একদিন মনে হতেই পারে যাকে পেয়েছি সে তার নিজের মতো বলেই ভালবাসি। মনে হতেই পারে। আবার না-ও পারে। যদি বিদায় নেওয়া মানুষটির উদ্দেশ্যে মন একনিষ্ঠভাবে আজও নিবদ্ধ থাকে তা হলে চাপ আছে। যা কিছু তার সাথে মিলছে না, তা নিয়ে মেজাজ বিগড়োতে পারে। যত সময় এগোয় তত হতাশা বাড়ে। তত মোহভঙ্গের সম্ভাবনা তৈরি হতে থাকে ।

তুলনার বশবর্তী হয়ে যখন কাউকে বেছে নিই, তখন অনেকটাই অদেখা না-বোঝা থেকে যায়। যে দুটো দিক আগের সঙ্গীর মধ্যে অসহ্য লাগত এর হয়ত সেই দুটি বৈশিষ্ট্য নেই। কিন্তু বাকি আটখানা দিক নিয়ে অষ্টপ্রহর থাকতে পারব কি না, তা আমরা খেয়াল করি না। অনেকসময় একজন থেকে অন্যজনের কাছে যাওয়ার রাস্তায় ভয়ানক তাড়াহুড়ো করে ফেলি। এক বা একাধিক সম্পর্ক না টিকলে মরিয়া হয়ে উঠি। আমরা ধরে নিই, সম্পর্ক রয়ে যাওয়া মানে সাফল্য আর তা ভেঙে যাওয়া মানে ব্যর্থতা। গলদ এখানেই । আমরা সব কিছু সাফল্য আর ব্যর্থতার মাপকাঠিতে ফেলে মাপতে যাই। প্রেম তো নেট পরীক্ষা নয় যে, বছরে দু’বার করে দিতেই হবে। পাশ করে দেখাতেই হবে। প্রেম একটা অবস্থান। নম্বরের তালিকায় প্রাপ্ত স্থান নয়। প্রেমে বা সম্পর্কে কেউ সফল বা বিফল হয় না। যুক্ত আর বিযুক্ত হয়।

কিছু রিবাউন্ড আবার সরলরেখায় আসে না। সে ঘুরপথে জটিল রাস্তায় এসে আমাদের পরবর্তী সম্পর্কে ছাপ ফেলতে পারে। প্রাক্তনের প্রতি অদম্য রাগ এবং ক্ষোভ থাকলে আমরা এমন কাউকে খুঁজতে থাকি যে একদম বিপরীত। আগেরজনের সঙ্গে বিন্দুমাত্র মিল আছে মনে হলেও আমাদের পুরনো ক্ষতে টান পড়ে।

‘অমুকের মতো যেন হয়’ থেকে শুরু করে ‘অমুকের মতো যেন না হয়’— দুটোই কিন্তু রিবাউন্ড। এবং দুটোই গোলমাল বাধাতে ওস্তাদ।

প্রাক্তনের প্রতি অদম্য রাগ এবং ক্ষোভ থাকলে আমরা এমন কাউকে খুঁজতে থাকি যে একদম বিপরীত।

প্রাক্তনের প্রতি অদম্য রাগ এবং ক্ষোভ থাকলে আমরা এমন কাউকে খুঁজতে থাকি যে একদম বিপরীত। প্রতীকী ছবি।

লিটল ম্যাগাজিনের টেবিলে প্রেমের শুরু। প্রতি হোয়াটস্যাপে নতুন কবিতার জন্ম। অজয়ের জল ছুঁয়ে একসঙ্গে থাকার শপথ। এমন রূপকথার বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর ছেলেটি কবিতার খাতা লফ্‌টে তুলে দিয়েছিল। বন্ধুমহলে বলেছিল এসব ‘কবি-টবি’ আঁতলামির প্রেম অনেক দেখলাম। যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে। এবার ঘোর বাস্তববাদী কাউকে বিয়ে করে চুটিয়ে সংসার করব। ওকে দেখিয়ে দেব আমিও ভাল আছি। যাকে দেখাতে চাইছিল সে অবশ্য দেখবে বলে থেমে ছিল না। কিন্তু ছেলেটি তখন ডেসপারেট। বিচ্ছেদের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সে পুনর্বিবাহ করল। নববধূ ঝকঝকে, তীক্ষ্ণ। পেশায় ব্যাঙ্কের রিলেশনশিপ ম্যানেজার। শুরু হল কড়ায়-গণ্ডায় সংসার। কাঁটায় কাঁটায় আদর। গোটা জীবন টানটান। কোথাও কোনও ভাঁজ নেই। ছেলেটি স্থিরতার স্বাদ পাচ্ছিল। পুরনো কষ্ট ভুলছিল। মাঝেসাঝে দু’এক লাইন কবিতা মাথার মধ্যে আসছিল, আবার। পাহাড়ি কটেজে ছুটি কাটাতে গিয়ে সে আবেগতাড়িত হল। বৌকে ঘন গলায় বলল, ‘‘তোমারও তো শ্রান্ত হলো মুঠি / অন্যায় হবে না – নাও ছুটি / বিদেশেই চলো / যে কথা বলোনি আগে, এ-বছর সেই কথা বলো।’’

মেয়েটি উত্তরে বলল, ‘‘চিল ম্যান! আমি বাইরে যাওয়ার অফার নিয়ে এখনই ভাবছি না।’’ সপাটে ধাক্কা। সেই দিনের পর থেকে দু’জনের মধ্যে একটা নিশ্ছিদ্র কুয়াশা ঢুকতে শুরু করল। ছেলেটি সেশনে বারবার জানতে চাইছিল, এত কষ্ট পাচ্ছি কেন। ওর তো শক্তি চট্টোপাধ্যায় জানার কথা নয়। সেই কারণেই তো ওকে বেছেছিলাম। তা হলে আজ কেন সব অর্থহীন লাগছে। লাগছে, কারণ পুরনো প্রেমকে ভুলতে গিয়ে সে তার পুরনো ‘আমি’টাকেও এতদিন অস্বীকার করছিল। সেই ‘আমি’ বিচ্ছেদের অভিঘাত কাটিয়ে আজ ফিরতে চাইছে। কিন্তু নতুন সঙ্গীর সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারছে না।

একজন কবির সঙ্গে প্রেম ভাঙলে কবিতা দায়ী হয় না। কবিরা দায়ী হন না। কারও সঙ্গে বনিবনা হল না। কুৎসিত ঝগড়া হল। ফলে ধরেই নিই, তার সঙ্গে জড়িত সব খারাপ। সে যে গান ভালবাসত তা খারাপ। যে পেশায় ছিল তা খারাপ। যে রাজনীতির রঙে বিশ্বাসী তা খারাপ। জেনারেলাইজ করতে থাকি। যেমন ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে কম্পন কেবল উৎসমুখেই সীমাবদ্ধ থাকে না, অনেক অনেক দূর অবধি ফাটল আনতে পারে। তেমনি তীব্র ঘৃণাও একটি নির্দিষ্ট ব্যাক্তি পেরিয়ে তার সঙ্গে জড়িত সবকিছুকে বিষাক্ত করে তুলতে পারে।

অমুকের চিহ্ন মুছতে গিয়ে আমরা নিজেদের পছন্দের নানা আঙ্গিক বাতিল করতে থাকি। জোর করে এমন একটা সত্তা বানাতে চেষ্টা করি, যার মধ্যে কোথাও ‘সে’ নেই। কিন্তু তার ফলে নিজেকেই যে হারাচ্ছি সেটা আর ভেবে দেখি না। প্রেম ভাঙার ক্ষত নিরাময় হলে পুরনো ‘আমি’ জেগে উঠতে থাকে। কিন্তু অনেকসময় জোর করে বানানো জীবন, জেদ করে বেছে নেওয়া সঙ্গীর সঙ্গে সে আর খাপ খাওয়াতে পারে না। যার সঙ্গে নতুন অধ্যায় শুরু করছি, তার পক্ষেও সারাক্ষণ তুলনার চাপ নেওয়া কষ্টকর হতে পারে। অন্য কারও ফেলে যাওয়া জামায় সে-ই বা আঁটতে চাইবে কেন? তারও মনের মধ্যে নিজের অবস্থান নিয়ে সংশয় জন্মাতে পারে। আমাকেই ভালবেসে আমার কাছে এসছে নাকি অন্যকে মন থেকে সরানোর জন্য আমায় দরকার এই নিয়ে দ্বন্দ্ব চলতে থাকে।

একজন কবির সঙ্গে প্রেম ভাঙলে কবিতা দায়ী হয় না। কবিরা দায়ী হন না।

একজন কবির সঙ্গে প্রেম ভাঙলে কবিতা দায়ী হয় না। কবিরা দায়ী হন না। প্রতীকী ছবি।

যেহেতু উঠতে-বসতে আগের সম্পর্কের ট্রমার ফিরিস্তি শুনছে, সেহেতু সে-ও সারাক্ষণ সতর্ক থাকে। সহজ হতে পারে না। শাশুড়ি মা প্রশংসার ছলে বলতে থাকেন, আগের বৌমা কী ভীষণ মুখরা ছিল। ভাগ্যিস তুমি অমন নও। নব বৌমারও নতুন বাড়ির অনেক রীতি জঘন্য লাগে। কিন্তু সে মুখ খুলতে ভয় পায়। ভাবে আমিও কি আগের বৌমার মতো হয়ে যাচ্ছি? হয়ত দুজনেই পিতৃতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে নিজের অধিকারের কথা বলতে চেয়েছিল। যে পেরেছিল সে ভিলেন হয়ে বিদায় নিয়েছে। যে আজও পারছে না, সে হয়ত ভিলেন হওয়ার ভয়ে চুপ থাকে। অন্যের মন জোগানোর ঠেলায় তার দম বন্ধ হয়ে আসে। কাল যদি সে-ও নিজের সম্মানরক্ষার্থে প্রতিবাদ করে, তাতে সে বরের প্রাক্তন স্ত্রী-র মতো হয়ে যায় না।

প্রাক্তন ‘বিখ্যাত’, ‘সফল’ ইত্যাদি হলে আবার আরেক হ্যাপা। তুলনার জেরে নতুন মানুষটি প্রায় ছায়াযুদ্ধে নেমে যেতে পারেন। নিজেকে সারাক্ষণ অমুকের তুলনায় ছোট লাগতে পারে। এতদিন যা কিছু পেরেছি সব তুচ্ছ ঠেকতে পারে। যার সঙ্গে প্রতিযোগিতা, যার সঙ্গে এত তুলনা, যার এত সমালোচনা— সে হয়ত নিজের তালে আছে। কিন্তু তার ফেলে আসা ডেরায় আজও তার কৃতকর্মের আখ্যান পাঠ করা হয়।

পুরনো সম্পর্ক ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সেটা আমার আগামী সম্পর্কের নির্বাচন এবং যাপনকে প্রভাবিত করছে কি না ভাবা দরকার। যদি তেমন হচ্ছে বুঝি, তা হলে আরও একটু সময় নেওয়া বাঞ্ছনীয়। একটি প্রেমের অব্যবহিত পরে আরেকটা প্রেম মানেই রিবাউন্ড নয়। এমন হতেই পারে আগের মানুষটির সঙ্গে নেহাত খাতায়কলমে একসঙ্গে ছিলাম। প্রেম অনেকদিন বেপাত্তা। সেখানে অন্য কারও আগমন মানেই তুলনা-বশবর্তী প্রেম নয়। যে সম্পর্কটি ফেলে আসছি, সেটা থেকে মনে-প্রাণে মুক্ত হতে পেরেছি কি না সেটা বিবেচ্য। সম্পর্কের চুক্তি থেকে মুক্তি অন্যের উপস্থিতিতে সহজ হতে পারে। কিন্তু নিজের মধ্যে এখনও সেই সম্পর্কের কাঠামো বয়ে বেড়াচ্ছি কি না ভাবা দরকার। কাউকে মনে রাখা মানে কিন্তু প্রতি পদক্ষেপে তাকে মনে করা নয়। তার নিরিখেই নতুন প্রেমকে মাপছি মানে ‘রিবাউন্ড’ বিদ্যমান।

‘অমুকের তুলনায় ভাল’ বা ‘অমুকের তুলনায় খারাপ’ বলার মধ্যে আসলে সেই বিদায়ী ‘অমুকটিরই’ প্রাধান্য থেকে যায়। তা-ই যদি থাকে, তবে কি আমি আগামীর জন্য সত্যি প্রস্তুত? রিবাউন্ডের হাত ধরে পুরনো উন্ডের সাময়িক মেরামত হতে পারে। কিন্তু তুলনার দাপট না কমলে নতুন সম্পর্কটির ভিত মজবুত হয় না।

(লেখক পেশায় মনোবিদ। মতামত একান্ত ব্যক্তিগত)

অন্য বিষয়গুলি:

Relationship Mental Health digital essay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy