প্রতীকী ছবি।
এখানে হাতেগড়া রুটি, আলুর দম, পাঁঠার ছাঁটের তরকারি, বিড়ি, সিগারেট, পান, চা, বিস্কুট, চিপস পাওয়া যায়।”— মফস্সলে এ ধরনের দোকান বিরল নয়।
অধুনা রাজনীতিতেও নয়।
মিলন, বিরহ, করুণ, হাস্য, তাণ্ডব, চক্রান্ত, সহানুভূতি, ক্রন্দন, বিশ্বাসভঙ্গ— সব রস ও ভাবের ললিপপ, তরমুজ, কুমড়ো-সহ বিবিধ ফল ও আনাজ থরে থরে সাজানো। শুধু গুলিয়ে যাচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতা। তাঁদের রং দিন ও রাতের তাপমাত্রার মতোই ওঠানামা করছে। ‘ফুলের বনে যার পাশে যাই, তারেই লাগে ভালো’ বলে মন দিয়ে ফেলেছিলেন, এখন আপনার তিনি ফুল বদলে ফেলেছেন, ধরতেও পারেননি আগে। তবে রাজনীতিতে একটি ফুল অটুট ও অক্লান্ত। গুলমোহরের ফুল ঝরে যায় হিসেব বহির্ভূত ভাবেই। কে কোনটা কুড়িয়ে নেবেন, তা একান্তই তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। ভোটের পথে ট্র্যাফিক সিগন্যালে গানও অনর্গল— ‘আমার হৃদয়, তোমার আপন হাতের দোলে দোলাও, দোলাও দোলাও’।
নেতা বলছেন, শ্রোতা দুলছেন সম্মোহনে। পথ, গলিঘুঁজিতে ভোটপ্রার্থীদের মহাসঙ্কীর্তন, ভোটারের সঙ্গে মহামিলনের জন্য ছুটে আসছেন তাঁরা। ভোট-আলিঙ্গনের জন্য উদ্বাহু, প্রসারিত। চারি দিকে কথার সমুদ্র সফেন শুধু নেতানেত্রীর নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনর্গল তথ্যপ্রবাহে অবরুদ্ধ মন-মগজ— ‘ওরা কেবল কথার পাকে নিত্য আমায় বেঁধে রাখে, বাঁশির ডাকে সকল বাঁধন খোলাও।’ সে বাঁশি বাজাবেন কে? শ্যাম না কি হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালা? দুই-ই সমান। মরণ অনিবার্য।
বৈষ্ণব পদাবলিতে শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য, মধুর রসসাগর। কখনও দাস, কখনও সখা, ভগবান রূপ পরিত্যাগ করে ক্রমশ মানব রূপে ধরা দিতে থাকেন কৃষ্ণ। আবার এ ভারতে নেতা ক্রমশ দেবত্ব লাভ করেন। জনতা ক্রমশ বিশ্বাস করতে শুরু করে, অপশাসনের দায় অন্যদের, তিনি যুগপুরুষ এ সবের ঊর্ধ্বে। দেশে যে সমস্যাই থাকুক, তিনি উদ্ধার করবেন। সম্ভবামি যুগে যুগে। বহু বছর আগে, এক নবীন রাষ্ট্রপুরুষের মস্তকের ছবির সিরিজ় প্রকাশ করেছিল একটি পত্রিকা। তাতে দেখা গিয়েছিল, কী ভাবে সিংহাসনের চাপে তাঁর মস্তকে কেশরাশি ক্রমে ক্রমে বিলুপ্ত হয়েছে। এই ঘোর কলিকালে উল্টোটাই ঘটে। রাজপুরুষের শ্মশ্রু দীর্ঘ, ক্রমশ দীর্ঘ হয়ে মগজ আচ্ছন্ন করে। মস্তকের পিছনে অদৃশ্য জ্যোতির্বলয় দেখতে পেয়ে ‘নমন’ করেন ভক্তকুল। ‘কত না-দিন রাতি আমি ছিলেম তোমার খেলার সাথী’ গাইলে কি আর ফল হবে তখন? তত ক্ষণে তো রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি পাঁচ পয়সা।
নদীর ও-পারে আবার খেলার সাথিরা বিদায় নিচ্ছে দলে দলে। কারণ, আঙুর সব দেশে, সব কালেই এক এবং অদ্বিতীয়। কারণ, আঙুর ফল টক। তবে মানুষ ধূর্ত শেয়াল নয়, এক গাছে আঙুর না পেলে সে আর এক গাছ থেকে উৎকৃষ্টতর আঙুর বা আপেল খেতে যেতে পারে। সাপ তাকে আপেল খেতে প্ররোচিত করে। সে কারও সাজানো বাগান। আদি ধারণা অনুযায়ী, আপেল খেয়ে মানুষ পাপ বা আনন্দে লিপ্ত হয়। রাজনীতির সৃষ্টি এগোতে থাকে।
৩৪ বছরের বাম শাসনের পতনের পর তৎকালীন সিপিএম সদস্য রেজ্জাক মোল্লা পরাজিত শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের উদ্দেশে শ্লেষ ছুড়ে দিয়েছিলেন এই বলে যে, হেলে ধরতে পারে না, কেউটে ধরতে গেছে। কী অপরিসীম তাচ্ছিল্য। নির্বাচনে পরাজয়ের পিছনে সিঙ্গুর আন্দোলনের ভূমিকাই ছিল তার প্রেক্ষাপট।
বাংলার রাজনীতিতে অন্তত কিছু দিনের জন্য প্রবাদবাক্য হয়ে যাওয়া সেই রেজ্জাক বাণীর পর বঙ্গ-রাজনীতি সর্পনৃত্য তেমন দেখেনি। এ বার খোলস ছাড়া শুরু। রাজনীতির মঞ্চে পাগলু ডান্স, রাজনীতির মাঠে টুম্পা ডান্সের পর কোবরা ডান্স।
টেনিদা হাঁড়িভাঙার কী মওকা হারাইল, সে জানে না। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের চারমূর্তি উপন্যাসে ভণ্ড বাবাজি যখন তার শাগরেদের কাঁধে চেপে হাঁচোড়পাঁচোড় করে মুরি জংশনে নামল, ট্রেন প্রায় ছেড়ে দেয়। তাড়াহুড়োয় বাবাজির মনেই নেই, হাঁড়িটি রয়ে গিয়েছে কামরায়। কিন্তু ট্রেন হাতকয়েক এগোতেই বাবাজি হঠাৎ হাঁউমাউ করে চেঁচিয়ে উঠল, হাঁড়ি— আমার রসগোল্লার হাঁড়ি। সঙ্গে সঙ্গেই টেনিদা হাঁড়িটা তুলে ধরল, বললে, ভুল বলছেন প্রভু, রসগোল্লা নয়, যোগসৰ্প! এই নিন— বলেই হাঁড়িটা ছুড়ে দিল প্ল্যাটফর্মের উপর। হাঁড়ি চুরমার। ‘কিন্তু আধখানা রসগোল্লাও তাতে নেই— সিকিখানা লেডিকেনি পর্যন্ত না।’
প্যালারাম চিৎকার করে বললে, প্রভু, আপনার যোগসৰ্প সব পালিয়েছে!
কোথায় কার হোটেল ভাঙা হয়েছে, কোথায় কার পুত্রের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, আদার ব্যাপারীর সে খোঁজ রাখার দরকার নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy