Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
International Womens' Day

মেয়েদের কাজ পাওয়ার সুযোগ

ঢাকঢোল পিটিয়ে ৮ মার্চ পালন করার সময় ভেবে দেখা দরকার যে, কোন কোন সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে মেয়েরা উৎপাদনের কাজ থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছেন।

দোলন গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২১ ০৫:৫৪
Share: Save:

আজ শ্রমজীবী নারীর অধিকার অর্জনের দিন। দুঃখের কথা হল, আজকের ভারতে কর্মী নারীর অধিকার ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে, দেশের কর্মী-বাহিনীতে মেয়েদের অংশগ্রহণও দিন-দিন কমছে। ২০২০-র ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, মেয়েদের কর্মী-বাহিনীতে অংশগ্রহণ মাত্র ২০.৩%, তুলনায় পুরুষের অংশগ্রহণ ৭৬%। লক্ষণীয়, ২০১১-১২’তে আইএলও-র প্রতিবেদন অনুযায়ী পরিসংখ্যান ছিল ২৭.২%। এই ক্রমহ্রাসমান সংখ্যা এ দেশে মেয়েদের অবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছু বলে। বিশেষত দেশের জিডিপি যখন ঊর্ধ্বগামী, তখন কর্মী-নারীর সংখ্যায় নিম্নগতি প্রমাণ করে এ দেশে নারীর প্রতি বৈষম্য কত গভীর!

ঢাকঢোল পিটিয়ে ৮ মার্চ পালন করার সময় ভেবে দেখা দরকার যে, কোন কোন সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে মেয়েরা উৎপাদনের কাজ থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছেন। শুরুতেই ঘরের দিকে তাকানো প্রয়োজন। সম্প্রতি প্রকাশিত অক্সফ্যামের ‘অন উইমেন’স ব্যাক, ইন্ডিয়া ইনইকুয়ালিটি রিপোর্ট, ২০২০’-র শুরুর লাইনটিই বলে, ‘‘দ্য হোম ইজ় ওয়ান অব দ্য মোস্ট কনটেস্টেড স্পেসেস হোয়েন ইট কামস টু জেন্ডার রিলেশনস।... ইট ইজ় দ্য ব্রিডিং গ্রাউন্ড ফর জেন্ডার ইনইকুয়ালিটি।’’ ঘরের কাজের অপরিসীম বোঝা মেয়েদের টাকা রোজগারের কাজে প্রধান অন্তরায়। আইএলও-র ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতবর্ষে শহরে ও গ্রামে মেয়েরা প্রতি দিন যথাক্রমে ৩১২ এবং ২৯১ মিনিট বিনা মাইনের গৃহস্থালির কাজে পরিশ্রম করেন। একই কাজে পুরুষ শহরে ২৯ মিনিট এবং গ্রামে ৩২ মিনিট মাত্র সময় ব্যয় করেন। শুধু তা-ই নয়, মেয়েদের এই সেবার কাজের কোনও স্বীকৃতিও আমাদের রাষ্ট্র অথবা সমাজ দেয় না। অথচ মেয়েদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই দেশের উৎপাদনের চাকা নিয়মে চলে। কাকভোর থেকে রেঁধেবেড়ে মেয়েরা ঠিক সময়ে পুরুষের মুখের কাছে ভাতের থালা ধরেন বলেই বাড়ির রোজগেরে ছেলেটি খেয়েদেয়ে, কাচা পোশাক পরে যথাসময়ে কাজে পৌঁছাতে পারে।

মেয়েদের অর্থকরী কাজে অংশগ্রহণের নিম্নগতির আর একটি কারণ, মেয়েদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ এবং ঘরে-বাইরে নির্যাতন। বাড়ির বাইরে পা রাখতে গেলে, কোন সময় থেকে কোন সময় বাড়ির বাইরে কাজ করা যাবে, কত দূরে কাজে যাওয়া যাবে, এ সব বিষয়ে এখনও বেশির ভাগ মহিলার পরিবারের অনুমতির প্রয়োজন হয়। অক্সফ্যাম-এর ২০১৯-এর একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, পরিবারের অনুমতি ব্যতিরেকে বাড়ির বাইরে পা রাখলে ভারতবর্ষে ৫৪.৪% মহিলার কপালে মার জোটে এবং ৮৬.৪% মহিলা কড়া সমালোচনার শিকার হন। গতিবিধির স্বাধীনতার অভাবে অনেক মেয়েই বাড়ির থেকে দূরের কাজে যোগ দিতে পারেন না। এ ছাড়াও আছে কাজের জায়গায় যৌন হেনস্থা। কাজের জায়গায় যৌন অত্যাচারের ফলে বহু মেয়ে কাজ ছাড়তে বাধ্য হন। ঘরের কাজের চাপ, গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ এবং পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্রে নির্যাতন মেয়েদের রোজগারের সুযোগ খর্ব করে।

কারিগরি প্রশিক্ষণের অভাবও মেয়েদের রোজগারের সুযোগকে সঙ্কুচিত করে। মেয়েদের অর্থকরী কাজের প্রশিক্ষণ মানেই আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্র বোঝে সেলাই, বড়ি, পাঁপড়, বিউটিশিয়ানের কাজ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চোখের মণি ন্যাশনাল স্কিল ডেভলপমেন্ট মিশন-এও মেয়েদের দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রগুলি প্রথাগত দক্ষতার মধ্যেই সীমিত। প্রথাগত দক্ষতার বাইরে গিয়েও যে মেয়েদের ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, গাড়ির অথবা বাসের ড্রাইভার ইত্যাদির কারিগরি প্রশিক্ষণে যুক্ত করা যায়, এবং তার ফলে মেয়েদের কাজের সুযোগ প্রসারিত হয়, সে চিন্তা আমাদের রাষ্ট্র করে না।

কোভিড ১৯-এর ফলে মেয়েদের কাজের অবস্থা আরও সঙ্গিন হয়েছে। কাজ হারাচ্ছেন অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা এবং দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মীদের মধ্যে ৯৩% নারী। এক দিকে মেয়েরা কাজ হারিয়ে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, অন্য দিকে পরিসংখ্যান বলছে, অতিমারির পর মেয়েদের উপর গার্হস্থ হিংসা আগের তুলনায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়িতে বসে থাকার ফলে মেয়েদের উপর ঘরের কাজের হুকুমও বেড়েছে। বিশেষত পুরুষরাও অনেকে কাজ হারিয়ে বাড়িতে থাকার ফলে, বাচ্চাদের স্কুল বন্ধের ফলে সংসারের কাজ বহুল পরিমাণে বেড়েছে, কিন্তু সেই কাজে সাধারণত পরিবারের পুরুষদের অংশগ্রহণ দেখা যায় না।

অতিমারির আগে অথবা পরে আমাদের সরকার মেয়েদের কর্মী-বাহিনীতে অংশগ্রহণ বাড়ানোর তেমন কোনও উদ্যোগ করেনি। সরকারের উচিত অসংগঠিত ক্ষেত্রের মেয়েদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য প্রথাবহির্ভূত কাজের প্রশিক্ষণ চালু করা দরকার। নারী-নির্যাতন প্রতিরোধে ব্যবস্থা দরকার। মেয়েদের উপর ঘরের কাজের দায় কমানোর জন্য পাড়ায় পাড়ায় বাচ্চা রাখার ক্রেশ নির্মাণ, মেয়েদের জন্য পথেঘাটে পরিচ্ছন্ন টয়লেট ইত্যাদি পরিকাঠামোও জরুরি। সরকার ছাড়া এ কাজে এগিয়ে আসবে কে!

অন্য বিষয়গুলি:

International Womens' Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy