Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
School service commission

স্বপ্নভঙ্গের পালা শেষ হোক

বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের প্রাক্কালে বলেছিলেন, তাঁর দল ক্ষমতায় এলে প্রতি বছর স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হবে।

জয়ন্ত কুমার দেবনাথ
শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২১ ০৮:৩৪
Share: Save:

আমাদের রাজ্যে অনেকগুলি শিক্ষক প্রশিক্ষণের বি এড ও বি পি এড কলেজ, সবই চলে এনসিইআরটি-র নিয়ম মেনে। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার জন্য স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর বি এড বা বি পি এড ডিগ্রি প্রয়োজন। বামফ্রন্ট সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশন চালু করে, পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা বিচার করে শিক্ষক নিয়োগ। এ জন্য রাজ্য সরকার ১৯৯৭-এর নভেম্বর মাসে স্কুল সার্ভিস কমিশন গঠন করে। এর আগে স্কুলগুলিতে ম্যানেজিং কমিটি এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ করতে পারত। কিন্তু ওই পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে উৎকোচের মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থীকে বাদ দিয়ে, কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের নিয়োগের ভূরি ভূরি অভিযোগ সরকারের কাছে জমা পড়তে থাকে। এই প্রেক্ষিতেই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত স্কুল সার্ভিস কমিশন গঠন। এই কমিশন প্রতি বছর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করত। রাজ্যের শিক্ষিত ছেলেমেয়ের কাছে স্কুলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কমিশন ভরসার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে তাদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি অনুরাগ বাড়ে। রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রেও একটা বিরাট পরিবর্তন আসে, বি এড-বি পি এড কলেজে ভর্তির ভিড় বাড়ে। বিভিন্ন জেলায় বেসরকারি বি এড ও বি পি এড কলেজ তৈরি হয়।

সেই সব দিন এখন ইতিহাস। গত প্রায় দশ বছর ধরে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা না হওয়ায় রাজ্যের বি এড ও বি পি এড ডিগ্রিধারী শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়েরা আজ হতাশার শিকার। অনেকেরই চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে, অনেকেই বয়সের শেষ পর্যায়ে। সাধারণ ছেলেমেয়েরা অতি কষ্টে টাকা জোগাড় করে, বি এড বা বি পি এড করে যদি চাকরির পরীক্ষায় বসার সুযোগই না পায়, এর থেকে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে! পরিণাম, হতাশা— যার বহিঃপ্রকাশ শিক্ষিত বেকার চাকরিপ্রার্থীদের অনশন, বিক্ষোভ, ধর্না ইত্যাদিতে। আর পরোক্ষ ফল, বি এড ও বি পি এড কলেজগুলিতে ছাত্রশূন্যতা। বেসরকারি কলেজগুলোর অবস্থা করুণ। সরকারি শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক‌রাও নিয়মিত বেতন পান, কিন্তু বেসরকারি কলেজগুলোয় ছাত্রছাত্রী ভর্তি না হলে শিক্ষক ছাঁটাই হয়। গত দশ বছরে স্কুলগুলি থেকে প্রচুর সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা অবসর নিয়েছেন, ওই সব শূন্য পদ পূরণের ক্ষেত্রে সরকারের অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন থাকার কথা নয়। কারণ যাঁরা অবসর নিয়েছেন, তাঁদের অবসরকালীন যে অর্থ দিতে হত, নতুন শিক্ষকদের তার অর্ধেক টাকাও রাজ্যকে খরচ করতে হবে না। তা হলে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রাখা হচ্ছে কেন?

বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের প্রাক্কালে বলেছিলেন, তাঁর দল ক্ষমতায় এলে প্রতি বছর স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হবে। তিনি তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছেন। সবাই তাঁর দিকে চেয়ে আছেন— শিক্ষিত, ডিগ্রিধারী, স্কুলশিক্ষকতায় আগ্রহী বেকার ছেলেমেয়েদের জন্য তিনি কী সিদ্ধান্ত নেন। স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে তিনি নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করলে এই ছেলেমেয়েরা নতুন দিশা দেখতে পাবে। আর তা না হলে বেসরকারি শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলির মতো সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিও রক্তশূন্যতায় ভুগবে। শিক্ষক নিয়োগই যদি না হয়, দু’বছর ধরে কষ্টের কড়ি খরচ করে তাঁরা সেখানে যাবেই বা কেন। ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার ছেলেমেয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরির জন্য অপেক্ষারত। স্কুলগুলি থেকে প্রতি বছর বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা অবসর নিলে শূন্য পদ পূর্ণ হচ্ছে না। স্কুলগুলি শিক্ষকশূন্যতায় ভুগছে, ছাত্রছাত্রীরাও প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমন চলতে থাকলে এক সময় সরকারি বি এড ও বি পি এড কলেজগুলিও বন্ধ হয়ে যাবে।

সুতরাং, শূন্য পদগুলি পূরণের জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা নিয়মিত হওয়া জরুরি। তখন পড়াশোনা করে নিজের রাজ্যেই চাকরি পাওয়া যাবে, পরিযায়ী শ্রমিকের কাজের জন্য অন্য রাজ্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। শিক্ষকতার চাকরির সঙ্গে যুক্ত থাকে বহু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যারা ছাত্রছাত্রীদের উপযুক্ত প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরি পেতে সাহায্য করে। এই সব প্রতিষ্ঠানেও বহু মানুষ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। নিয়মিত স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে, স্বচ্ছতার সঙ্গে সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা হলে রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষের কাছে আরও বেশি আস্থাভাজন হয়ে উঠবে না কি?

অন্য বিষয়গুলি:

School service commission CPIM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy