Advertisement
E-Paper

আবার বছর পঁচিশ পরে

সরকার কি এই বার্তাই দিতে চাইছে যে, দেশের আসন্ন শ্রমশক্তিকে দক্ষ করে গড়ে তোলার প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে!

জয়দীপ বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:০৪
Share
Save

সমস্যার আশু সমাধান চাই, না দীর্ঘমেয়াদি নিরাময়ই আসল, তা নিয়ে অর্থশাস্ত্রের দুনিয়ায় এক সময় বিস্তর তাত্ত্বিক তর্ক হয়েছে। শেষ অবধি একটা সমাধান সূত্রে পৌঁছনো গেছে যে, রোগের চরিত্র বুঝে কোথাও স্বল্প, কোথাও মধ্য, কোথাও বা দীর্ঘমেয়াদি নিদানের ব্যবস্থা করা হবে। যেমন, ভারতের অর্থব্যবস্থাকে এই মুহূর্তে এমন এক সমস্যা তাড়া করছে, যার থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে চটজলদি দাওয়াই দরকার। সেই সমস্যার নাম বেকারত্ব।

এই মুহূর্তে দেশে বেকারত্বের হার আট শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। সংখ্যার বিচারে পাঁচ কোটি ত্রিশ লক্ষ লোক কর্মহীন। তাঁদের এক কোটি সত্তর লক্ষ জন অবশ্য এখনও কাজের খোঁজে বাজারে আসেননি। তাঁরা নাহয় স্বেচ্ছা-বেকার। তবে বাকি তিন কোটি ষাট লক্ষ দেশবাসী কিন্তু কাজ চেয়েও পাচ্ছেন না। অর্থশাস্ত্রের কেতাবি সংজ্ঞা মেনেই তাঁরা কর্মসংস্থানহীন, বেকার।

একশো দিনের কাজের চাহিদা দেখেও বোঝা যাচ্ছে যে, মানুষ যেমন তেমন একটা কাজ পেলেও বর্তে যাচ্ছেন। অতিমারির দাপটে তছনছ হয়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা। কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের পর প্রায় দেড় কোটি লোক নতুন করে একশো দিনের কাজের জন্য জব কার্ডের আবেদন করেছিলেন। দ্বিতীয় প্রবাহের পরও কিন্তু অবস্থার তেমন কোনও পরিবর্তন হয়নি। বরং অতি সম্প্রতি দেখা গিয়েছে, যে-সমস্ত রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকরা ভিড় জমান, সেই সব রাজ্যেও একশো দিনের কাজ প্রকল্পে জব কার্ডের চাহিদা বাড়ছে। সামগ্রিক ভাবে আয় বৃদ্ধির নিরিখে আমরা হয়তো প্রাক্‌-অতিমারির দিনগুলোতে ফেরত গিয়েছি। কিন্তু, অনতি-অতীত খুব বাজে ছিল বলেই অদূর ভবিষ্যৎ ঝলমলে দেখাচ্ছে, এই কথাটা এখন আর আলাদা করে না বলে দিলেও চলে। ভুললে চলবে না যে, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের সঙ্গে তুলনায় আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বেড়েছে মোটে ১.২৩%।

আসলে আমাদের ক্ষতি হয়েছে স্বাভাবিক হারে বাড়া জাতীয় আয়ের অন্তত ১২%। আড়ে বহরে সেই লোকসানের পরিমাণ সাড়ে পনেরো লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি। অতিমারির ঢেউয়ের পর ঢেউয়ে ভাসিয়ে নিয়েছে এতখানি সম্পদ, যা আমরা আর ফিরে পাব না। এমনিতেই আয় বাড়লেও এই পোড়া দেশে সব সময় কর্মসংস্থান বাড়ে না। আর এখন তো আয়ই বাড়ছে কায়ক্লেশে। গত বছরে অন্তত ৪৫ লক্ষ মানুষ নতুন করে দারিদ্রসীমার অতলে তলিয়েছেন।

এই প্রেক্ষাপটে আমরা নির্মলা সীতারামনের কাছে বাস্তববোধ আশা করেছিলাম। কাজের সুযোগ তৈরি করে, এবং তার মাধ্যমে গরিব মানুষের হাতে আয়ের সংস্থান করে দেওয়াই অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তিনি হাঁটলেন উল্টো রাস্তায়। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে গত বছরের বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৭২,০৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে বছরের শেষের দিকে ওই খাতে বরাদ্দের বহর আরও পঁচিশ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে একশো দিনের কাজের খাতায় ৯৭,০৩৪ কোটি টাকা ধার্য হয়। দারিদ্র, কর্মহীনতার কামড়ের সঙ্গে রয়েছে মূল্যস্ফীতির চড়া হারের চোখরাঙানি। এই অবস্থায় বাজেটে এই প্রকল্পে আরও একটু হাত খুলে অর্থ ঢালবেন তিনি, এমনটাই ভেবে রেখেছিলাম। কিন্তু এ যে কৃপণের বাম মুঠি! একশো দিনের কাজের প্রকল্পে ব্যয়বরাদ্দ কমিয়ে সেই গত বছরের বাজেট বরাদ্দে, অর্থাৎ ৭২,০৩৪ কোটিতে নিয়ে গেছেন।

শুধু তা-ই নয়। এমন দৃষ্টান্ত আরও রয়েছে নির্মলার চতুর্থ বাজেটে। ধরা যাক কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বিকাশ খাতে ব্যয়বরাদ্দের কথাই। গত বাজেটে এই খাতে ধরা হয়েছিল ৩৪৮২ কোটি টাকা। এ বাজেটে এই অঙ্কটি কমে দাঁড়িয়েছে ২৬৮৮ কোটি টাকায়। সরকার কি এই বার্তাই দিতে চাইছে যে, দেশের আসন্ন শ্রমশক্তিকে দক্ষ করে গড়ে তোলার প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে!

বেকাররা চাইছেন কালই কাজে লেগে পড়তে। অর্থমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী দেখতে পাচ্ছেন, স্বাধীনতার শতবর্ষে সোনার দেশের চেহারাটা কেমন হবে! তাই সাত ঘোড়ায় টানা গতিশক্তির রথের কষ্ট কল্পনা। তাই পাঁচ বছরে ষাট লক্ষ কর্মসংস্থানের ভাবনা। তাই পঁচিশ বছরের প্রতীক্ষা। কেন্‌স সাহেব বেঁচে থাকলে বলতেন, ‘ধুর, অত দিন বাঁচে কে!’

অর্থনীতি বিভাগ, কাছাড় কলেজ, শিলচর

Unemployment Nirmala Sitaraman Budget 2022

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}